শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

নিজের নির্মিত জাহান্নামে ভ্রান্ত খোদা মোকান্না

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৮:০০ এএম | আপডেট : ৯:২৯ পিএম, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

আব্বাসীয় তৃতীয় খলিফা ছিলেন মাহদী ইবনে মনসুর। (১৫৮ হি.-১৬৯ হি.)। তার পিতা মনসুরের আমলেই আব্দুল্লাহ মোকান্না নামক এক ব্যক্তি খোদায়ী দাবি করে বসে। সে খোরাসানের আধিবাসী ছিল। তার এ জীবন সম্পর্কে ঐতিহাসিকগণের বর্ণনা হতে জানা যায় যে, তার নাম আব্দুল্লাহ হলেও তার পিতা তার নাম দিয়েছিল মোকান্না। কেননা সে ভাণ্ডার হতে মালামাল চুরি, ছিনতাই করে পালিয়ে যেত। এ অভিযোগের জন্য তার পিতা তাকে পেটায়। এতে আব্দুল্লাহর হাত ভেঙে যায় বা অবশ হয়ে যায়।
ইবনে মোকান্না নামে খ্যাত এ লোকটি ছিল পারস্য বংশোদ্ভ‚ত, সে আরবি লেখক ছিল। পারস্য ভাষায় বিভিন্ন লেখকের বিখ্যাত রচনা ‘কালিলাও দেম’ নামে আরবিতে ভাষান্তরিত করে। আদবে কবির ও আদবে সগীর নামে তার আরও দু’টি রচনার কথা জানা যায়। ইতিহাস গ্রন্থলোতে মোকান্নার যে বিবরণ পাওয়া যায় তা বিস্ময়কর। কেউ বলেন তাকে খোরাসানের এক কুৎসিত লোক, কেউ বলেন মার্ভের লোক, এক নাস্তিক হাকিম প্রতারক ও রাসায়নিক। তার বিশ্রী চেহারাকে ঢেকে রাখার জন্য সে সর্বদা নেকাব পরিহিত অবস্থায় থাকত। সে ভ্রান্ত মতবাদের অনুসারী ছিল। সে বলত, খোদা বিভিন্ন মানবদেহে প্রবিষ্ট হয়ে এখন তার মধ্যে আত্মপ্রকাশ করেছে। সে তার প্রতারণা ও ধোঁকাবাজিকে নিজের খোদায়ী কারিশমা বলে দাবি করত। কিছু লোক তার প্রতারণায় বিভ্রান্ত হয়ে তার অনুসারী হয়ে যায়।
মোকান্না সরলমনা লোকদের তার প্রতি আকৃষ্ট ও তার অনুসারী করার জন্য জাদু ও তেলেসমাতি কাণ্ড হিসেবে এক কৃত্রিম চাঁদ নির্মাণ করে। একটি কূপ হতে এটি উদিত হয়ে দুইমাস পর্যন্ত আলোকিত থাকত। বহু অজ্ঞ-মূর্খ তার এ ধোঁকাবাজির শিকার হয় এবং তার বাসগৃহের দিকে সেজদা আরম্ভ করে। মোকান্না অল্পদিনের মধ্যেই তার অনুসারীদের এক বিরাট দল তৈরি করে ফেলে এবং তার পুরোনো শত্রু ও তার সাগরেদরাও তার সাথে মিলিত হয় এবং তারা ইসলামি এলাকাগুলোতে হানা দিয়ে লুটতরাজ আরম্ভ করে।
খলিফা মনসুর মোকান্নাকে দমন করার জন্য বিভিন্ন দফায় সৈন্য প্রেরণ করেন। কিন্তু উল্লেখযোগ্য কোনো সাফল্য হয়নি। হিজরি ১৬১ সালে খলিফা মাহদী তার দমনে একটি শক্তিশালী বাহিনী প্রেরণ করেন। মোকান্না খবর পেয়ে তার সঙ্গীসমেত তাকনারি নামক দুর্গে আত্মগোপন করে। মোকান্না ও তার দলকে অবরোধ করা হয় এবং তাদেরকে পরাজিত করা হয়। মোকান্না যখন তার নিশ্চিত মৃত্যুকে তার সামনে দেখে এবং বাঁচার কোনো উপায় নেই বুঝতে পারে, তখন তার নির্মিত অগ্নিকুণ্ডে নিজেকে নিক্ষেপ করে জাহান্নামে প্রবেশ করে। মুসলমানগণ দুর্গে প্রবেশ করে তার দগ্ধ লাশ উদ্ধার করেন এবং তার মস্তক দ্বিখণ্ডিত করে করে খলিফা মাহদীর দরবারে পাঠিয়ে দেন। এভাবে ধ্বংস হয় ভণ্ড খোদা মোকান্না ও তার তেলেসমাতি রাজত্ব। ধ্বংস করা হয় তার চাঁদের সিংহাসন, যা দেখে মোকান্নার বিভ্রান্ত অনুসারীরা তাকে খোদা বানিয়েছিল।
নমরুদ-ফেরাউন হতে আরম্ভ করে যুগে যুগে ভণ্ড খোদাদের তৎপরতা চলে আসছে এবং প্রত্যেক ভণ্ড খোদার করুণ পরিণতি হতে শিক্ষা গ্রহণ না করার ফলে মাঝে মাঝে কোথাও না কোথাও এহেন উৎপাত লক্ষ করা যায়। ম্যাজিক, কারিশমা তথা প্রতারণার মাধ্যমে সরলপ্রাণ লোকদের বিভ্রান্ত করায় ভ্রান্ত খোদা, মিথ্যা নবী এবং মনগড়া মাহদীর দাবিদারদের করুণ পরিণতি তাদেরই ভোগ করতে হয়। ইতিহাসই তার সাক্ষী।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
ওবাইদুল ইসলাম ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৩:০২ এএম says : 0
সকল অন্যায়ের শাস্তি তাকে পেতেই হবে।
Total Reply(0)
এনায়েতুর রহমান ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৩:০৩ এএম says : 1
আল্লাহ, আমাদেরকে সঠিক পথে চলার তৌফিক দান করুন।
Total Reply(0)
Fazlul Huq ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৬:৫৪ এএম says : 1
Very good practical learning lesson. But it is full of spelling errors,somebody should check it before publish.
Total Reply(0)
Md salim Hossen ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৭:৫০ এএম says : 0
Did you checked what you write ? This is right spelling or wrong spelling?
Total Reply(0)
Diluwar hossain ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৬:৪৩ পিএম says : 0
ভ্রান্তরা সকল যোগেই ভ্রান্ত প্রমাণীত হয়ে ধ্বংস হয়েছেে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন