ফুলগাজী পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া এই ৩ উপজেলা নিয়ে ফেনী-১ আসন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা জেগে ওঠেছে। বিভিন্ন কর্মতৎপরতার মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। ২ পৌরসভাসহ এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৪ হাজার ৭ শত ৩৫ জন। আ.লীগ, বিএনপি, জাসদ, জাপার আগ্রহী প্রার্থীরা তৃণমূলের সমর্থন আদায়ে নিয়মিত এলাকায় হাজির হচ্ছেন।
ফেনী-১ আসন খালেদা জিয়ার ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। ১৯৯০ থেকে টানা ২৪ বছর এমপি থাকায় এ আসনে বিএনপির একক আধিপত্য ছিল। খালেদা জিয়া প্রার্থী হবার কারণে এ অঞ্চলের ভোটাররা ধানের শীষের বিকল্প চিন্তা করেননি।
২০০৮ সালে দেশে আ.লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও এ আসনে খালেদা জিয়া বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। কিন্তু ওই নির্বাচনে বিএনপির পরাজয়ের পর খালেদা জিয়া এলাকায় আসা বন্ধ করে দেন। ফলে নেতাকর্মীরা অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জড়িয়ে পড়ায় তার জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। নির্বাচনী এলাকায় দলের কোন প্রভাবশালী নেতা না থাকায় বিএনপি রাজনীতিতে মুখ থুবড়ে পড়ে। তিন উপজেলার নেতারা তিনভাগে বিভক্ত হয়ে জড়িয়ে পড়ে কোন্দলের রাজনীতিতে। ফুলগাজীতে বিএনপির নেতৃত্বে কারা রয়েছে তা দলের অনেক নেতাকর্মীরাও জানে না। এ উপজেলায় তৃণমূল নেতাকর্মীরা মামলা হামলায় জর্জরিত। নেতৃত্ব শূন্যতাই এর মূল কারণ বলে জানা গেছে। খালেদা জিয়ার প্রার্থীতার বিষয়ে ফুলগাজী বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. নুরনবী ইনকিলাবকে জানান, এ আসনে নেত্রী ছাড়া অন্য কোন প্রার্থীর কথা কখনো বিএনপি ভাবতে পারে না। তবে তৃণমূল পর্যায়ে কোন্দল, দীর্ঘদিন ধরে কাউন্সিল না থাকায় নেতৃত্ব শূন্যতায় এ আসন বিএনপির জন্য অগ্নিপরীক্ষা বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা। এ আসনে প্রতিবারের ন্যায় এবারও খালেদা জিয়াই প্রার্থী হবেন বলে শোনা যাচ্ছে।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করায় মহাজোটের ভাগাভাগিতে এ আসনে এমপি পদে মনোনয়ন পায় জাসদ (ইনু) সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার। এ নির্বাচনে ফেনী-১ আসনে বিকল্প প্রার্থী না থাকায় বিনা প্রতিদন্ধীতায় বিজয় হন জাসদ নেত্রী। নির্বাচিত হবার পর এলাকায় সরব হন তিনি। বর্তমানে বিভিন্ন উৎসব আয়োজন কিংবা দলীয় কর্মকান্ডে তার উপস্থিতি রয়েছে। উন্নয়নের মধ্যে নির্বাচনী এলাকায় কয়েকটি সৌরবিদ্যুতের লাইট ছাড়া তিনি কিছুই দিতে পারেননি।
৩ উপজেলার চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় আ.লীগের নেতাকর্মীদের বিরোধিতার মুখে নেতা-কর্মীহীন জাসদ নেত্রী এলাকায় কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। গত বছর বিভিন্ন কর্মসূচি এবং প্রকল্পে জাসদ এমপির সমন্বয়হীনতার কথা তুলে ধরে এক সমাবেশে ছাগলনাইয়ায় এমপি শিরিন আখতারকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও আ.লীগ সাধারণ সম্পাদক মেজবাউল হায়দার সোহেল চৌধুরী। ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল আলীম ও জেলা আ.লীগের সদস্য এবং ফেনী-১ আসনে আ.লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী শেখ আবদুল্লাহ শিরিন আখতারের তুমুল বিরোধিতা করে নির্বাচনী এলাকায় তাকে পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ করেন। তিন উপজেলার আ.লীগ নেতাকর্মীরাও চলতি বছর কালবৈশাখী ও মৌসুমী ঝড়ে বন্যায় শিরিন আক্তারের নির্বাচনী এলাকা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হলেও তিনি এলাকায় না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
মোদ্দা কথা, আ.লীগের দাবি আসনটিতে দলীয় প্রার্থীকে দেয়া হোক। তবে জাসদ নেত্রীই এ আসনে প্রার্থী হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে এ আসনে মনোনয়ন পেতে আ.লীগের কয়েকজন প্রার্থী মাঠে সরব রয়েছেন। স্থানীয় রাজনীতির অন্তরালের কারিগর হিসেবে পরিচিত প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দীন আহাম্মেদ চৌধুরী নাসিম এ আসনে আ.লীগ থেকে মনোনয়ন চাইলে অন্য কেউ প্রার্থী হবেন না বলেও জানা গেছে। হাবের সাবেক মহাসচিব, ফেনী সমিতি ঢাকার সভাপতি ও ফেনী জেলা আ.লীগের সদস্য আলহাজ্ব শেখ আবদুল্লাহ ইনকিলাবকে জানান, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন আহাম্মেদ চৌধুরী নাসিম ও ফেনী জেলা আ.লীগের সাধারন সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপির নেতৃত্বে আমরা আজ সু-সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-১ থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইবো। তবে আলাউদ্দিন নাছিম প্রার্থী হলে তিনি তার পক্ষে কাজ করবেন। এ আসনের আওয়ামী নেতা-কর্মীরা মনে করেন, জাতীয় ও তৃণমূল পর্যায়ে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো যোগ্যতা সম্পূর্ণ নেতা হিসেবে শেখ আবদুল্লার বিকল্প এ আসনে কেউ নেই।
ছাগলনাইয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আ.লীগ সাধারন সম্পাদক মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল ইনকিলাবকে বলেন, নৌকা মার্কার বিজয়ে ফেনীর অভিভাবক আলাউদ্দীন আহমেদ চৌধুরী নাসিম ও সদর আসনের এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারীর নের্তৃত্বে আমরা আজ ঐক্যবদ্ধ। আমরা দলীয় প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করবো।
এ ছাড়াও জেলা আ.লীগের সহ-সভাপতি খায়রুল বাশার তপন ফেনী-১ আসন থেকে আ.লীগের মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।
অপরদিকে জাপার চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা নাজমা আক্তারকে এ আসনে একক প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। গণদলের চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী এ আসনে নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়াও আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-১ আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মাওলানা কাজী মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়াকে তার দল এককভাবে মনোনিত করেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন