মোবাইল ফোনের অফ নেট, অন নেট প্রথা বাতিল করে, সরাসরি একক কল লাইন চালু করার দাবি জানিয়েছে মুঠোফোন গ্রাহক এসেসিয়েশন। একইসাথে কলরেট পূর্বের ২৫ পয়সা বা তারও কম করা যায় কিনা তার জন্য গণশুনানী ও নতুন করে কস্ট মডেলিংয়েরও দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। গতকাল (বুধবার) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মুক্ত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতারা এসব দাবি জানান।
লিখিত বক্তব্যে সংগঠনটির সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইইটিইউ) সহায়তায় বিটিআরসি ভয়েস কলের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন রেট বেঁধে দেয়। কিন্তু গত ১৪ আগস্ট হঠাৎ করে বিটিআরসি প্রজ্ঞাপন জারী করে গ্রাহকদের ম্যাসেজের মাধ্যমে জানানো হলো এখন থেকে ভয়েস কলরেটে অন নেট অফ নেট থাকছে না। রেট হবে পূর্বের ফ্লোর রেট ২৫ পয়সার স্থলে ৪৫ পয়সা আর সর্বোচ্চ সিলিং রেট ২ টাকা থাকবে। এর মধ্যে অপারেটরা যার যার সুবিধা দিতে পারবে। কারণ একটি অপারেটর এর ৯০ শতাংশ কল হচ্ছে অন নেটে। অন্য অপারেটরদের ৭০ শতাংশ। আর রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টেলিটকের ১০ শতাংশ। যুক্তি হিসাবে বলা হলো- অন নেট, অফ নেট এক হওয়াতে মনোপলি ভাঙ্গা যাবে।
তিনি বলেন, এই যুুক্তি অত্যন্ত হাস্যকর। কারণ প্রথমত মনোপলি ভাঙ্গার কাজ এই নিয়ন্ত্রক সংস্থার নয়, এজন্য প্রতিযোগিতা কমিশন রয়েছে, আছে আইনও। দ্বিতীয়ত গ্রাহকদের পকেট থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে দিচ্ছেন কাকে? ঐ অপারেটর বা অন্য কোন অপারেটরকে। এই ক্ষেত্রে গ্রাহকদের লাভ কোথায়? তৃতীয়ত, প্রজ্ঞাপনের ফাঁক ফোকর থাকায় গ্রাহকরা চরমভাবে অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়ল। কারণ ২৫ পয়সার জায়গায় ৪৫ পয়সা করা হয়েছে আর সর্বোচ্চ ২ টাকা নিতে বলেছেন। তাহলে কেউ যদি ১.৮০ পয়সা বা সর্বোচ্চ ২ টাকায় নেয় তার জন্য তাকে কি দায়ী করা যায়?
মহিউদ্দীন বলেন, নিয়ন্ত্রণ সংস্থার হিসাবেও বর্তমান রেটে অতিরিক্ত বিল আদায় করা হচ্ছে ৫০ শতাংশ। যার প্রমাণ রবির বর্তমান কলরেটের বিজ্ঞাপন। অন্যদিকে গ্রামীণফোন প্রতি মিনিট নিচ্ছে ২ টাকা। গ্রামীণফোনের অতিরিক্ত আদায়ের হার ৭৫ শতাংশ। অফনেট বন্ধের কারণ গ্রাহকদের সুবিধা যতটা না দেয়া তার চেয়ে ছোট ও মাঝারি অপারেটরদের দেওয়া। অফনেটের কলের জন্য যে অপারেটরের নিকট কল যাবে তাকে প্রতি মিনিটের জন্য ১৮ পয়সা। আর আইসিএক্স (ইন্টার কানেকশন এক্সচেঞ্জ) তাকে দিতে হবে ৪ পয়সা। মোট ২২ পয়সা। ৬০ পয়সা থেকে ২২ পয়সা বাদ দিলেও পূর্বে অপারেটররা পেত ৩৮ পয়সা। কমমূল্যে যদি ভালো সেবা দেবার কথা নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বলতো তাহলে পূর্বের হিসেবেও দিতে পারতো। তিনি দ্রুত কলরেট বৃদ্ধি সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার এবং এর পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা জনসম্মুখে প্রকাশের দাবি জানান।
এছাড়া গ্রাহক সুরক্ষার জন্য আলাদা আইন ও কমিশন তৈরি, কলরেটের ক্ষতিপূরণ, ১ মাসের মধ্যে নেটওয়ার্ক ঠিক করা, ফোরজিতে ইন্টারনেটের গতি ২০ এমবিপিএস করার দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সাবেক এমপি অধ্যাপক হুমায়ুন কবির, বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা রাজেকুজ্জামান রতন, দুর্নীতি প্রতিরোধ আন্দোলনের আহ্বায়ক হারুন অর রশিদ খান, বাংলাদেশ মোবাইল ফোন রিচার্জ ব্যবসায়ী এসোসিয়েশনের সভাপতি মোঃ আমিনুল ইসলাম বুলু, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরামের সভাপতি কবির চৌধুরী তন্ময় প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন