রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

সম্পত্তি মেয়েরা অর্ধেক পায় কেন

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

যে মহিলা তার ভাইসহ তাদের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে এসেছিলেন তারা নিজেরাই তখন বুঝেছিলেন যে, সবকিছুর মালিক আল্লাহ। আর মানুষের ভাগ্যও তিনিই রচনা করেন। পৈতৃক সম্পত্তি বণ্টনের যে বিধান তিনি দিয়েছেন, তা আল্লাহর প্রজ্ঞা ও কৌশলের বিধান। যার ফলাফল সুষম ও সুমিষ্ট। যারা তা মানে না তারাই বিপদগ্রস্ত হয়।
আগত মহিলার গল্পটি দেখুন, তিনি বিয়ের আগেই বাবার সম্পদ সাশ্রয় করতেন। বিয়ের পর নিজে বাবার সম্পদ ও ব্যবসা দেখাশোনা করেছেন। অনেক আর্থিক সাহায্যও করেছেন। আর ভাইটি সারাজীবনই সম্পদ নষ্ট করেছে। বাবার মৃত্যুর পর সম্পদ তিন ভাগ হলো, একভাগ এই সুকন্যা পেলেন, দুই ভাগ পেলেন বলতে গেলে এই কুপুত্র। আমি যখন মহিলার প্রশ্নের জবাবে বললাম, দ্বীনি শিক্ষার অভাবেই আপনারা এমন ঠকেছেন। কারণ, শরীয়ত বলেছে, পরে কোনো অশান্তির সম্ভাবনা থাকলে এমন ব্যবস্থা নেয়া যায় যে, যখন কোনো সন্তান পিতার ব্যবসায় সময় দেয়, আয় উন্নতি করে, তখন তাদের উচিত এর কোনো বিনিময় নির্ধারিত করে নেয়া।
এই মহিলা যদি পিতার ব্যবসায় পার্টনার, পরিচালক বা বেতনভুক্ত ব্যবস্থাপক হয়ে সময়টুকু দিতেন তাহলে নিজের আর্থিক অংশ লাভসহ তুলে নিতে পারতেন। বেতন হিসাবে ভালো অংক নিতে পারতেন। এরপর বাবার মৃত্যুর পর যা থাকতো তা শরিয়ত মতো আবার পেতেন। এরপরও ভাগ্য দেখুন। আপনার এখনো অনেক টাকা। নিজের টাকা, স্বামীর টাকা, বাবার কাছ থেকে পাওয়া টাকা। আর আপনার দ্বিগুণ সম্পত্তি পাওয়া ভাইটি যাকে আপনি সাথে করে আমার সাক্ষাতে এসেছেন তিনি নিজেই কেমন সুন্দর হাসি দিয়ে স্বীকার করলেন, আগেও আমি টাকা নষ্ট করেছি।
এখনো টাকা পয়সা শেষ করে বোনের সাহায্যেই চলছি। বোন আমার প্রতি রাগ করে না, কারণ আমি ছাড়া তার আর বংশের কোনো আত্মীয় নেই। সে উত্তরাধিকার অংশ অর্ধেক পেলেও আল্লাহ তাকে চারদিক থেকে বরকত দিয়েছেন। আমি দ্বিগুণ টাকা পয়সা পেয়েও দুর্বলই রয়ে গেছি। বোনের সাহায্যেই চলছি। এটিই ভাগ্য। আল্লাহর দেয়া বিধান ঠিকই আছে। মানুষ তা সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিলে ঠকে না।
আল্লাহ যাকে রিযিক দেন, সে তা খেয়ে, সঞ্চয় করে, দান করেও শেষ করতে পারে না। যার বরকত হয় না, তাকে বাবা-মা অনেক দিলেও তার হয় না। এরপর আমি বললাম, আপনারা নিজেরাই দ্বীনের আলোকে বিষয়টি অনুধাবন করেছেন। তবে উত্তরাধিকার বণ্টনে ইসলামের বিধান শুধু খোদায়ী রহমত বরকত নির্ভর নয়। এতে যুক্তি বিজ্ঞান ও অঙ্কও রয়েছে। শরিয়ত প্রতিটি মুসলিম পুরুষকে কমপক্ষে পাঁচটি দায়িত্ব দিয়েছে। ০১. বিবাহ করে পৈতৃক সংস্কৃতির উপযোগী একটি পরিবার গঠন; ০২. স্ত্রী, পুত্র-কন্যাদের যাবতীয় ব্যয় বহন, ০৩. পিতার সময়ের আত্মীয়তা ও সামাজিকতা ধরে রাখা, ০৪. বোন-ভাগ্নিসহ সব রক্ত সম্পর্কিত আত্মীয়দের হক আদায় করা এবং ০৫. দাদী, ফুফু, বোন, ভাগ্নি, বিধবা, অসহায় বা নিরাশ্রয় হলে তাদের সযত্মে রক্ষণাবেক্ষণ করা। এসব চিন্তায় তাকে দেয়া হয়েছে দুইভাগ। বোনকে এ ধরনের কোনো দায়বদ্ধতাই শরিয়ত দেয়নি। তাকে দিয়েছে একভাগ। এতে সে নিজে চলতে পারবে। পাশাপাশি স্বাভাবিক নিয়মে তার জীবনের সমুদয় ব্যয় স্বামীর ওপর, পুত্রের ওপর।
এখানেও মহিলা নানাভাবে নির্দিষ্ট সম্পত্তির হকদার। তার হজ, জাকাত ফরজ হওয়ার আগে বাধ্যতামূলক কোনো ব্যয় নেই। নিজের সঞ্চয় অক্ষত রেখেই মহিলা জীবন কাটাতে পারে। ঐচ্ছিক দান খয়রাত ও সৌজন্যমূলক ব্যয় ভিন্ন কথা। তারা আমার দেয়া সময়ের চেয়ে বেশি সময় নিয়েছেন বলে দুঃখ প্রকাশ আর জিজ্ঞাসার জবাব পাওয়ার জন্য আনন্দ প্রকাশ দু’টোই করলেন। তারা চলে যাওয়ার পর আমার ভাবনা থেকে নারীদের উত্তরাধিকার সম্পত্তি আমাদের দেশে কোরআন মোতাবেক না দিয়ে তাদের বঞ্চিত করার হাজারও গল্প দূর হতে বেশ সময় লাগল।
এ দেশে মহিলাদের ঠকানো যেন অন্য আত্মীয়দের মজ্জাগত অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কোরআন-সুন্নাহর ভিত্তিতে এর বিরুদ্ধে সংস্কারমূলক বহু প্রচারণা খুব দরকার। আলেম, ইমাম, খতিব, মুফতি, মোফাসসির, পীর-মাশায়েখ, মুরব্বি ও ওয়ায়েজদের সমাজের এ বদঅভ্যাসটি পরিবর্তন করে নারীদের খোদাপ্রদত্ত অধিকার আদায়ে মানুষকে সচেতন করার বিকল্প নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
সফিক আহমেদ ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৩:০৫ এএম says : 1
এই বিষয়টি নিয়ে লেখার জন্য হুজুরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি
Total Reply(0)
Mohammed Kowaj Ali khan ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৫:২১ এএম says : 1
আলহামদুলিল্লাহ্‌। আমাকে অর্থাৎ আমাদেরকে,।মেইনলি আমার কস্টের ফসল। লন্ডনে স্বর্ণর দুকান আল্লাহ তা'আলা দান করেছেন। আমাদের প্রতিস্টানে আমাদের মেয়েরা একঘন্টা কাজ করিলে ও আমরা কড়ায় ঘন্ডায় হিসাব করিয়া বেতনটুকু দিয়া দেই। ইনশাআল্লাহ। ************ হকনস্টকারী কেহই সফল হইবে না। সময় থাকিতে যাহার যে পাওনা মিটিয়ে দিন। আমাদের সিলেট অঞ্চলে মেয়ের অংশকে বলা হয় পরাইজ আর এই পরাইজ মেয়েরা নিলে ক্ষতিগ্রস্থ হইবে,এই কথা বলে মেয়েদেরকে অংশ দেওয়া হয় না। Astagfirulla.
Total Reply(0)
Tipu ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৮:৩০ এএম says : 1
Assalamualikum sheikh, I love your writing. Every day I gather knowledge From your writing because I Didn't islamic education. May Allah give you long life. Thanks
Total Reply(0)
আমির হোসেন ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ২:০৯ পিএম says : 1
ইসলামের প্রতিটি বিধানই মানব জাতির জন্য কল্যাণকর
Total Reply(0)
পাবেল ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ২:১০ পিএম says : 1
ইসলামে নারীদেরকে তাদের সঠিক এবং প্রাপ্য মর্যাদা দিয়েছে
Total Reply(0)
কাওসার আহমেদ ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ২:১১ পিএম says : 1
আল্লাহ আমাদেরকে ইসলামের প্রতিটি বিধান সঠিকভাবে মানার তৌফিক দান করুক
Total Reply(0)
মোঃ জাহাঙ্গীর আলম ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৩:৪৫ পিএম says : 1
আল্লাহ আমাদেরকে ইসলামের প্রতিটি বিধি বিধানে কোরআন ও হাদিস অনুযায়ী সঠিকভাবে মানার তৌফিক দান করুক। আমিন।
Total Reply(0)
ওবাইদুল ইসলাম ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৫:২৬ পিএম says : 1
লেখাটা অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে । মহিলার সম্পদ সম্পূর্ণ ভাবে তার নিজের এবং হালাল ভাবে খরচ করার অধিকার তারই, অন্য কেউ তার অনিচ্ছায় সেই সম্পদ দাবী করতে পারে না। কিন্তু পুরুষের সম্পত্তির সবটুকু তার নয়, ইচ্ছেমত খরচ করার অধিকাত্র পর্যন্ত নেই । যার যা অধিকার তার উপর ব্যায় করতে বাধ্য।
Total Reply(0)
Md.Yousuf ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ২:৩০ পিএম says : 1
এই বিষয়টি নিয়ে লেখার জন্য হুজুরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। লেখাটির জন্য আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন