শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

স্মরণকালের সর্বোচ্চ তাপদাহে বিপর্যস্ত দক্ষিণাঞ্চল

প্রকাশের সময় : ২৫ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : স্মরণকালের সর্বোচ্চ তাপ প্রবাহে বিপর্যস্ত দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলায় চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ বিদ্যুৎ ঘাটতিতে সাড়ে ৩ কোটি মানুষের জীবন প্রায় ওষ্ঠাগত। গতকাল বরিশালে স্মরণকালের সব রেকর্ড ছাপিয়ে তাপমাত্রার পারদ ৩৭.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসে উঠে যায়। যা ছিল মাত্র ২৪ ঘন্টা আগের তুলনায় ২.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেশী এবং এসময়ের স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে ৪.১ ডিগ্রী সেলসিয়াস ওপরে। আর এরই সমান্তরালে চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ বিদ্যুৎ ঘাটতিতে জনজীবনে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে। শিল্প ও বাণিজ্যের দুর্গতিও ব্যাপক। সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে পর্যন্ত জরুরী অস্ত্রোপচারসহ নির্বিঘœ চিকিৎসা সেবা মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম। লাগাতার বৃষ্টিবিহীন উষ্ণতায় পানির স্তর ক্রমশ নিচে নেমে যাবার সাথে বিদ্যুৎ সংকটে বরিশাল মহানগরীসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমের নগর-মহানগরগুলোতে জরুরী পানি সরবরাহ ব্যবস্থাও চরম বিপর্যয়ের কবলে। শহরের চেয়ে পল্লী বিদ্যুতায়নের এলাকাগুলোতে বিদ্যুৎ ঘাটতি আরো প্রকট। সব মিলিয়ে নজিরবিহীন তাপ প্রবাহের সাথে লাগাতার বিদ্যুৎ সংকট পরিস্থিতিকে যথেষ্ট নাজুক করে তুলছে। আবহাওয়া বিভাগের সর্বশেষ বুলেটিনে আগামী ৪৮ ঘন্টাতেও বরিশাল ও খুলনা বিভাগসহ ফরিদপুর অঞ্চলের ২১টি জেলায় চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকার দুঃসংবাদই দেয়া হয়েছে।
বরিশাল ও খুলনা বিভাগসহ ফরিদপুর অঞ্চল মিলিয়ে পিডিবি’র পশ্চিম জোনের ২১টি জেলায় এসময় সান্ধ্য পীক আওয়ারে বিদ্যুৎ চাহিদা প্রায় ১২শ’ মেগাওয়াট। কিন্তু গতকাল সরবরাহ ছিল সাড়ে ৮শ’ মেগাওয়াটেরও কম। ডে-পীক আওয়ারে চাহিদা ১ হাজার মেগাওয়াটের ওপরে হলেও সরবরাহ ছিল ৭শ’ মেগাওয়াটেরও নিচে। বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে গতকাল ডে-পীক আওয়ারে ১৩৫ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ ছিল ৮০ মেগাওয়াটের মত। সান্ধ্য পীক আওয়ারে দক্ষিণাঞ্চলের ছয় জেলায় প্রায় দেড়শ’ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ ছিল ১শ’ মেগাওয়াটের কিছু বেশী।
ফলে দিন ও রাতে দফায় দফায় লোডশেডিং শিশু ও বৃদ্ধসহ সাধারণ মানুষের জীবনকে অনেকটাই দুর্বিষহ করে তুলেছে। এর সাথে পশ্চিম জোনের বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানী-ওজোপাডিকো’র কথিত মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে বিভিন্ন ফিডারে ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবারহ বন্ধ রাখায় সংকট আরো বাড়ছে। পাশাপাশি পিজিসিবি’র কেন্দ্রীয় লোড ডেসপাস সেন্টার থেকে ‘উৎপাদন ও সঞ্চালন সিস্টেম রক্ষা’র নামে দূর নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায় বিভিন্ন ৩৩ কেভী লাইন ও সাব-স্টেশনগুলো বন্ধ করে দেয়ার ঘটনায় চরম বিপর্যয় নেমে আসছে জনজীবনে।
গতকালও পিজিসিবি তার ‘স্কাটারড ব্যবস্থায়’ কেন্দ্রীয় লোড ডেসপাস সেন্টার থেকে বরিশাল মহানগরীর কাশীপুর ৩৩ কেভি সঞ্চালন লাইনটি বন্ধ করে দেয়ায় নগরীর প্রায় ৩৫ ভাগ এলাকা বিদ্যুৎ বিহীন হয়ে পড়ে। একই সাথে ঝালকাঠী জেলার বিদ্যুৎ সরবরাহও বন্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু আধ ঘন্টার মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও কাশীপুর সাব-স্টেশন থেকে হাতেম আলী কলেজ ফিডারটি বন্ধ করে দেয়া হয় রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য। ফলে হাতেম আলী কলেজ ফিডারটি একটানা প্রায় দু’ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। তবে ঐ ফিডারের বেশ কিছু এলাকাতেই গতকাল সকাল থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ ছিলনা বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
জাতীয় গ্রীড থেকে ন্যায্য হিস্যা মাফিক সরবরাহ না দেয়ার কারণেই পশ্চিম জোনে বর্তমান বিদ্যুৎ ঘাটতির মূল কারণ বলে জানা গেছে। পশ্চিম জোনে সরকারীÑবেসরকারী উৎপাদন ইউনিটগুলোর বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে নিয়ে যাবার কারণে এ অঞ্চলে সরবরাহে ঘাটতি বাড়ছে বলেও জানা গেছে। এর সাথে স্থানীয়ভাবে পিডিবি’র বেশ কয়েকটি ইউনিটের উৎপাদন ঘাটতিও পরিস্থিতি অবনতির অন্যতম কারণ। মাত্র সাড়ে ৫ মাস আগে ভোলায় চালু হওয়া ২২৫ মেগাওয়াটের গ্যাস টার্বাইন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ৩টি ইউনিটের দুটিই বন্ধ গ্যাসের অভাবে। ফলে সেখানে উৎপাদন মাত্র ৬৫ মেগাওয়াটে নেমে এসেছে। বরিশালে ২০ মেগাওয়াটের ২টি গ্যাস টার্বাইন ইউনিটের ১টি প্রায়ই বন্ধ থাকছে। আয়ুষ্কাল হারানো এ দু’টি ইউনিট চালু থাকলেও উৎপাদন ৪০ মেগাওয়াটের স্থলে ২৫ মেগাওয়াটেরও কম। গোপালগঞ্জে ৪০ মেগাওয়াটের ৩টি পিকিং প্লান্টও প্রায়ই বন্ধ থাকছে। পাশাপাশি ভেড়ামাড়ায় ২০ মেগাওয়াটের ৩টি গ্যাস টার্বাইনের অবস্থাও ভাল নয়। দীর্ঘদিনের পুরনো এসব উৎপাদন ইউনিট ক্ষমতার ৫০-৫৫ ভাগের বেশী বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে না।
তবে সারা দেশের উৎপাদিত বিদ্যুৎই জাতীয় গ্রীডে সংযুক্ত করে চাহিদা অনুযায়ী, হিস্যা ভাগ করে সরবরাহ করার কথা। কিন্তু জাতীয় গ্রীড থেকে হিস্যা মাফিক সরবারহ না থাকায় পশ্চিম জোনে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি চরম নাজুক পর্যায়ে। নজিরবিহীন দাবদাহের সাথে ভয়াবহ বিদ্যুৎ ঘাটতি দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সাড়ে ৩ কোটি মানুষের সুস্থ জীবন ব্যবস্থাকে চরম সংকটে ফেলছে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন