শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

রিজার্ভ চুরির টাকা উদ্ধারে ফিলিপাইনকে নিয়ে সন্দেহ

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো নিয়ে আমরা ক্লান্ত -অর্থ প্রতিমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ২৫ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া অর্থ ফিলিপাইন থেকে ফিরিয়ে আনতে সময় লাগতে পারে। ফিলিপাইন একবার বলে টাকা কালকেই দিয়ে দেবে, আবার বলে সময় লাগবে Ñ এটা নিয়ে প্রথম থেকেই আমার মনে একটা সন্দেহ ছিল। একই সঙ্গে সরকারি ব্যাংক সংস্কারে সরকার উদ্যোগ নিচ্ছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে নিয়ে আমরা ক্লান্ত।
সরকারের ভিশন রয়েছে সরকারি ব্যাংকগুলোর সংস্কারের। আগামীতে ব্যাংকগুলোকে সংস্কারের আওতায় আনা হবে। এছাড়া আসন্ন বাজেট সম্পর্কে তিনি বলেন, ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার বাজেট কোনোভাবেই উচ্চাভিলাষী নয়। এটি বাস্তবায়নযোগ্য। এর আগেও আমরা বড় বাজেট বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছি। বাজেট বাস্তবায়নে গ্যাপ আছে, তবে বাস্তবায়নের হার আগের তুলনায় বেড়েছে। গতকাল রোববার সচিবালয়ে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে এক প্রাক-বাজেট মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় অসুস্থতার কারণে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত যোগদান করতে পারেননি বলে জানা গেছে। আলোচনায় অংশ নেয়া সম্পাদক, প্রকাশক ও প্রধান নির্বাহীরা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেই ব্যাংক খাত সংস্কারের কাজ শুরু করার পরামর্শ দেন। তারা আগামী বাজেটে গণমাধ্যমকে উৎসাহ দিতে এআইপি ও ভ্যাট কমানোরও আহ্বান জানান।
সভায় উপস্থিত গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ফিলিপাইনসহ অন্যান্য দেশের কর্মকা-ের পাশাপাশি এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করেন এবং একইসঙ্গে সরকারের উদ্যোগে বাংলাদেশ ব্যাংক অডিট করারও প্রস্তাব করেন কেউ কেউ। এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের দুর্নীতির কারণ হিসেবে রাজনৈতিক বিবেচনায় পরিচালনা পরিষদ নিয়োগ, ঋণ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি না হওয়াকে দায়ী করে জনগণের করের অর্থে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে পুনঃঅর্থায়ন করারও বিরোধিতা করেন তারা।
গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের এ ধরনের সমালোচনার জবাবে অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরির বিষয়টি সরকার খতিয়ে দেখছে, তবে সেটা ফিলিপাইনের মতো হয়তো নয়। আমরা আমাদের মতো করে ফলোআপ করছি। আমার ধারণা, বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তা টাকা উদ্ধারে নিউইয়র্ক ও কলম্বোতে ঘোরাঘুরি করছেন।
তিনি বলেন, ফিলিপাইন একবার বলে টাকা কালকেই দিয়ে দেবে, আবার বলে সময় লাগবে, এটা নিয়ে প্রথম থেকেই আমার মনে একটা সন্দেহ ছিল। এর হয়তো ব্যাখ্যা আছে, এটা হয়তো ইচ্ছাকৃত নয়, তাদের সিস্টেমটাই হয়তো এ রকম। তিনি বলেন, গণতন্ত্র ও অর্থনীতির শৃঙ্খলার প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ধরনের স্বাতন্ত্র্যবোধ থাকা উচিত। অন্যান্য দেশেও তাই হয়। এ জন্যই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করা থেকে সরকার নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে।
তবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো সংস্কারের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
‘রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্রমাগত লোকসান অর্থনীতিতে ভয়ঙ্কর রক্তক্ষরণ ঘটাচ্ছে’ বক্তাদের এ ধরনের মন্তব্যের সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে লাখ লাখ লোক কাজ করছে, এটা এক ধরনের ঐতিহ্যও বলা যায়। এখান থেকে সরকার হঠাৎ করে বেরিয়ে আসতে পারে না। বাজেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বাজেট অভিলাষী হলেও এটা অন্যায় বাজেট নয়। বাজেট বাস্তবায়নে গ্যাপ আছে, তবে বাস্তবায়নের হার আগের তুলনায় বেড়েছে। বাজেট বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণ হিসেবে আমাদের জাতিগত বৈশিষ্ট্য ও দীর্ঘদিনের জট পাকানো সরকারি বিধি-বিধানকে দায়ী করেন তিনি।
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেছেন, সেরা করদাতা হিসেবে এবার ৩০৩ জনকে সন্মাননা দেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। চলতি মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১৪-১৫ করবর্ষে সেরা ৩০৩ করদাতার হাতে সম্মাননার ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হবে। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এত দিন ১০১ জন সেরা করদাতাকে পুরস্কৃত করা হতো। কর প্রদানে ব্যক্তি করদাতাদের উদ্বুদ্ধ করতে এবার ৩০৩ জনকে পুরস্কৃত করা হবে। এর মধ্যে সারাদেশ থেকে ১০১ জন, নারী উদ্যোক্তাদের মধ্য থেকে ১০১ জন এবং তরুণ উদ্যোক্তাদের মধ্য থেকে ১০১ জনকে সেরা করদাতার পুরস্কার দেওয়া হবে। কর প্রদানে উৎসাহী করতে আগামীতে প্রতিটি পেশা থেকেই সেরা করদাতা নির্বাচন করা হবে বলেও জানান তিনি। সরকারি বিজ্ঞাপনের বিষয়ে নজিবুর রহমান বলেন, আগামীতে সরকারি বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে কোনো মধ্যস্থতাকারী রাখা হবে না। অর্থাৎ কোনো এজেন্ট ছাড়াই সরাসরি পত্রিকা বা মিডিয়াতে বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে।
প্রাক-বাজেট আলোচনায় ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন, প্রথম আলোর ডেপুটি এডিটর এম এ কাইয়ূম, সাংবাদিক নাঈমূল ইসলাম খান, সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, সাংবাদিক নঈম নিজাম, সমকালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে আজাদ, আমাদের সময় সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বিএসএস) আশিক চৌধুরী, এটিএন বাংলার মীর মোতাহার আহসান প্রমুখ। অর্থ প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় অর্থ সচিব মাহাবুব আহমেদসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রাক-বাজেট আলোচনায় গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা সাংবাদিকদের জন্য সরকারের সহায়তায় প্রভিডেন্ট ফান্ড চালু, সাংবাদিকদের জন্য নতুন ওয়েজবোর্ড ঘোষণা, সরকারি বিজ্ঞাপনে সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়ন, বিজ্ঞাপন বিল প্রদানে বিশৃঙ্খলা দূর করা, বিদেশি টিভি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রদানে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন