শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জ্বালানি তেলের দাম কমেছে

প্রকাশের সময় : ২৫ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : অবশেষে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়েছে। লিটার প্রতি পেট্রোল ও অকটেনে ১০ টাকা এবং ডিজেল ও কেরোসিনে ৩ টাকা করে কমিয়েছে সরকার। সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমানো সংক্রান্ত এক পরিপত্রে জানানো হয়েছে গতকাল রোববার রাত ১২টার পর থেকেই নতুন এই মূল্য কার্যকর হবে।
বর্তমানে লিটার প্রতি ডিজেল ও কেরোসিন ৬৮ টাকা, পেট্রোল ৯৬ টাকা, অকটেন ৯৯ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সোমবার থেকে যথাক্রমে ডিজেল ও কেরোসিন ৬৫ টাকা এবং পেট্রোল, অকটেন যথাক্রমে ৮৬ ও ৮৯ টাকায় পাওয়া যাবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে। এজন্য আমরাও দেশীয় বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করলাম। তিনি বলেন, ইতোপূর্বে সরকার ফার্নেস তেলের দামও কমিয়েছে। লিটার প্রতি ১৮ টাকা কমানোর ফলে বর্তমানে প্রতিলিটার ফার্নেস তেল বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকা।
উল্লেখ্য, গত ৪ এপ্রিল জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ আগামী ১০ দিনের মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম কমতে পারে এমন ঘোষণা দেন। এর পরই বিপিসির তেল বিক্রিতে ভাটা পড়ে। দেশজুড়ে সৃষ্টি হয় জ্বালানি তেলের কৃত্রিম সঙ্কট। এরপর গত ১৩ এপ্রিল জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, অকটেন ও পেট্রোল প্রতি লিটারে ১০ থেকে ১৫ টাকা এবং কেরোসিন ও ডিজেল লিটার প্রতি ৫ থেকে ৬ টাকা কমতে পারে। তিনি জানান, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির সময় অকটেন ও পেট্রোলের দাম তুলনামূলক বেশি বাড়ানো হয়েছিল। সে হিসাবে লিটার প্রতি অকটেন ও পেট্রোলে কমবে ১০ থেকে ১৫ টাকা। আর ডিজেল ও কেরোসিনের দাম তুলনামূলক কম বাড়ানো হয়েছিল। এজন্য কেরোসিন ও ডিজেলে লিটার প্রতি ৫ থেকে ৬ টাকা কমানো হবে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম দফায় দফায় কমলেও দেশীয় বাজারে এই মূল্যের সমন্বয় হচ্ছিল না। অথচ জ্বালানি তেলের দাম কমানোর জন্য বিভিন্ন মহল থেকে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানানো হচ্ছিল। জানা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারের বর্তমান দাম (অপরিশোধিত প্রতি ব্যারেল বা ১৫৯ লিটার) অনুযায়ী প্রতিলিটার ফার্নেস অয়েল বিপিসি কিনছে ৩০ টাকায়, অকটেন ৫৫ টাকায় ও পেট্রোল ৫০ টাকায়। ডিজেল আর কেরোসিন কিনছে ৩৮ টাকায়।
কম দামে কিনে দেশে বেশি দামে বিক্রি করায় গত অর্থবছরে (২০১৪-১৫) বিপিসি ৫ হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে। আর চলতি অর্থবছরে (২০১৫-১৬) ৭ হাজার কোটি টাকা লাভের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যেই অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে মুনাফা হয়েছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল (ক্রড অয়েল) প্রতি ব্যারেলের দাম উঠেছিল ১২২ ডলার। বর্তমানে ক্রুড অয়েলের দাম কমতে কমতে ৪০ ডলারে নেমে এসেছে। বিপিসি’র তথ্যানুযায়ী, দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রায় ৫৫ লাখ মেট্রিক টন। যার প্রায় পুরোটাই আমদানি করা হয়।
জ্বালানি তেল সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় পরিবহন খাতে- ৪৫ শতাংশ। এছাড়া বিদ্যুৎ খাতে ২৫ শতাংশ, কৃষি খাতে ১৯ শতাংশ, শিল্প খাতে ৪ শতাংশ এবং গৃহস্থালি ও অন্যান্য খাতে ৭ শতাংশ।
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে সর্বশেষ ২০১৩ সালের ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়। তখন পেট্রোল-অকটেন লিটার প্রতি ৫ টাকা এবং ডিজেল কেরোসিনের দাম ৭ টাকা করে বাড়ানো হয়েছিল।
তেলের দাম কমানোর প্রজ্ঞাপন জারির খবর পেয়ে পেট্রোল পাম্পগুলোতে তেল নেওয়ার জন্য গাড়ির ভির দেখা যাচ্ছে না। নতুন মূল্য কার্যকর হওয়া পর্যন্ত যেটুকু তেল না নিলেই নয়; কেবলমাত্র ওই পরিমাণ তেলই নিচ্ছে পরিবহনগুলো।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পেট্রোল পাম্প মালিক বলেন, দাম কমার প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ায় তাকে লোকসান গুণতে হবে। তার অনেক তেল অবিক্রিত রয়েছে। তিনি বলেন, এরপরও আমরা খুশি। কারণ, কবে তেলের দাম কমছে-এ নিয়ে একটা টেনশন কাজ করেছে। এখন আর সেই যাতনা থাকবে না।
এদিকে, জ্বালানি তেলের দাম কমলেও গণপরিবহনের ভাড়া কমবে কি না-তা নিয়ে প্রশাœ উঠেছে। সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা করছে, সরকার যেহেতু জ্বালানি তেলের দাম কমিয়েছে; কাজেই পরিবহন ভাড়া কমানোর ব্যাপারেও উদ্যোগ নেবে।
পেট্রোল পাম্প মালিক সমিতির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সারা দেশে ৫ হাজার পেট্রোল পাম্প রয়েছে। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গে সবচেয়ে বেশি পেট্রোল পাম্প। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে রয়েছে ১২শ’ এবং ঢাকা শহরে রয়েছে ১৫০টি পেট্রোল পাম্প।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন