শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

দেশীয় সম্পদভিত্তিক উন্নতি আবশ্যক

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

মহান স্বাধীনতার স্বপ্নগুলোর অন্যতম অর্থনৈতিক মুক্তি, যা এখনও হয়নি। দেশের অনেক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু তা হয়েছে মুষ্টিমেয় কিছুমানুষের। সেটাও অবৈধভাবে! আর বেশিরভাগ মানুষের কাক্সিক্ষত উন্নতি হয়নি। তাই দেশে আয় বৈষম্য ব্যাপক! যা দূর করা আবশ্যক, সে জন্য প্রয়োজন অবৈধ উপার্জন বন্ধ করা। এছাড়া প্রয়োজন দেশীয় সম্পদভিত্তিক উন্নতি। আমাদের অর্থনীতি মূলত কৃষি, গার্মেন্ট ও প্রবাসী আয় নির্ভর। গার্মেন্ট ও প্রবাসী আয় স্থিতিশীল নয়। বিদেশে শ্রমিক প্রেরণ হ্রাস পাওয়া শুরু হয়েছে। চলতি বছরে ১২ লাখ লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ৮ মাসে প্রেরণ করা হয়েছে মাত্র ৬ লাখের মতো। উপরন্তু যারা বিদেশে আছে, তাদেরও বিরাট অংশের ফেরত আসা শুরু হয়েছে। তাই আগামীতে রেমিটেন্স হ্রাস পাবে। অন্যদিকে, গার্মেন্ট এখনই প্রচণ্ড প্রতিযোগিতায় পড়ে রফতানিতে দুই নম্বর থেকে তিন নম্বরে এসেছে। এই পজিশনও দখল করার চেষ্টা করছে ভারত। এই অবস্থায় বাণিজ্য-যুদ্ধ শুরু হয়েছে। উপরন্তু, ২০২৪ সালে দেশ উন্নয়নশীলভুক্ত হলে গার্মেন্ট ও ওষুধসহ সব রফতানি পণ্যের বিশেষ সুবিধা বাতিল হয়ে যাবে। সেই সাথে বিশেষ সুবিধায় বিভিন্ন সংস্থার ঋণ প্রাপ্তিও বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে উন্নতির ঊর্ধ্বগতি বড় ধরনের ধাক্কা খেতে পারে। এই পরিস্থিতিতে দেশীয় সম্পদ ও অভ্যন্তরীণ বাজারভিত্তিক আর্থিক উন্নতির দিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া দরকার। অন্যতম হচ্ছে: কৃষিভিত্তিক শিল্প, সমুদ্র ও পর্যটন। এসব দেশীয় সম্পদের তার আভ্যন্তরীণ বাজার রয়েছে ব্যাপক। রফতানির সম্ভাবনাও অনেক।
কৃষি নিয়ে এ পর্যন্ত বহু লেখা, আলোচনা, বক্তৃতা-বিবৃতি হয়েছে। সর্বত্রই বলা হয়েছে, সরকারিভাবে বিশেষ ব্যবস্থায় কৃষিকে সম্পূর্ণরূপে আধুনিক করতে হবে এবং সুষম খাদ্যের সব কিছুরই উৎপাদনে স্বয়ংসম্পন্নতা অর্জনে সমান গুরুত্ব দিতে হবে। কিন্তু তা হয়নি। কৃষক স্বীয় চেষ্টায় যেটুকু পারছে, সেটুকুই উন্নতি করছে। তাতে যা হচ্ছে, তারই সুফল ব্যাপক। যেমন: ধান-চাল, মাছ-মাংস, সব্জি, ফলমূল ইত্যাদি উৎপাদনে দেশ প্রায় স্বয়ংভর হয়েছে। কিন্তু এসবের উন্নতি টেকসই নয়। প্রকৃতি ফেভার করলে উৎপাদন ভালো হয়। আর ডিসফেভার করলে ভয়াবহ দুর্যোগ সৃষ্টি হয়ে উৎপাদন ব্যাপক হ্রাস পায়। যেমন, ২০১৭ সালে হাওর ও উত্তরাঞ্চলের ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপক ফসল-হানি হওয়ায় এক কোটি টন চাল আমদানি করতে হয়েছে। অপরদিকে, প্রকৃতি ফেভার করলে বাম্পার ফলন হয়। কিন্তু তাতেও কৃষকের তেমন লাভ হয় না। কারণ, তারা ফসলের ন্যায্যমূল্য পায় না। ফলে তাদের আর্থিক উন্নতি হচ্ছে না। যেমন, চলতি বছরে আম চাষিরা ব্যাপক লোকসান দিয়েছে। এরূপ ঘটে প্রায় সব ফসলের ক্ষেত্রেই। দেশে প্রয়োজনীয় কৃষিভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠা করা হলে কৃষকের এই দুর্গতি হতো না। ফসল উঠার সাথে সাথে ব্যবসায়ীরা তা ক্রয় করে সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ করতো। এতে কৃষক ও ভোক্তা লাভবান হতো। ব্যাপক প্রান্তিক মানুষের কর্মসংস্থান হয়ে তাদের উন্নতি হতো। সর্বোপরি কৃষিপণ্য নষ্ট হতো না। জানা মতে, প্রতি বছর ১৫-২০% কৃষিপণ্য নষ্ট হয় বিভিন্নভাবে। কৃষির উন্নতি হলে আঞ্চলিক বৈষম্যও হ্রাস পেত। স্থানীয় পর্যায়ে সারা বছরের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলে দরিদ্র অঞ্চলের কৃষকদের অন্য অঞ্চলে যেতে হতো না কাজের জন্য। এমতাবস্থায় দ্রæত দেশে প্রয়োজনীয় কৃষিভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠার দিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক। বিশ্বব্যাপী হালাল পণ্যের বিশাল বাজার রয়েছে এবং তা ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাপী এর বাজারমূল্য ছিল প্রায় ২.৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর ২০২৪ সাল নাগাদ এটি প্রায় সাড়ে ১০ ট্রিলিয়নে উন্নীত হবে। বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান হওয়ায় এটা কাজে লাগানোর সুযোগ রয়েছে। তবে এ জন্য সরকারের নীতি সহায়তা, পণ্যের সনদ প্রদানের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও প্রক্রিয়া সহজীকরণ, প্রশিক্ষিত পরিদর্শক নিয়োগ, দক্ষ জনবল তৈরি ও প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা উন্নয়ন, অবকাঠামো উন্নয়নে স্বল্পসুদে অর্থায়ন ও গ্লোবাল সাপ্লাই চেইনে হালাল পণ্যের অর্ন্তভুক্তিকরণ ইত্যাদিতে গুরুত্ব দিতে হবে। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আমাদের রফতানির বিস্তৃতি ঘটানো দরকার। যেটা হতে পারে হালাল পণ্য। স্মরণীয় যে, দেশে এখন গবাদি পশু উৎপাদন চাহিদার বেশি হয়েছে। যার প্রমাণ এবারের কুরবানির ঈদ। এই ঈদের শেষের দিকে পশু পানির দামে বিক্রি হয়েছে সরবরাহ অতিরিক্ত হওয়ায়। এই অবস্থা চলতে থাকলে পশু পালনকারীরা নিরুৎসাহী হয়ে উঠবে। তাই অতি দ্রুত মাংস রপ্তানির ব্যবস্থা করা আবশ্যক। হালাল মাংসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে মুসলিম দেশগুলোতে।
বাংলাদেশে রয়েছে বিশাল সমুদ্র এলাকা, যাতে অফুরন্ত সম্পদ রয়েছে, এসব সম্পদ আহরণ করতে পারলে দেশের অর্থনীতির চেহারা পাল্টে যাবে। তা সত্তে¡ও সমুদ্র সম্পদের সদ্ব্যবহার হচ্ছে না। বিভিন্ন সূত্রে প্রকাশ, অর্জিত পানিসীমায় সমুদ্র-সম্পদ আহরণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে ২০১৪ সালে, যার দু-একটি ছাড়া কোনটাই বাস্তবায়ন হয়নি। কারণ, এর সাথে সংশ্লিষ্ট আছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। তাই অবস্থা দাঁড়িয়েছে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মতো। মানুষ সংকট নিরসন চায় মেয়রের কাছে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তার কোন কর্তৃত্ব নেই। কর্তৃত্ব বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের। যেখানে মেয়র সাহেবের কোন কর্তৃত্ব নেই। তাই রাজধানীর সব কাজেই কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘নগর সরকার’ এর বিধান করার জন্য দাবি জানিয়েছিলেন বিগত মেয়রগণ। কিন্তু সরকার কর্তৃত্ব হারানোর ভয়ে তা করেননি। ফলে ঢাকা সিটির সংকট দূর হচ্ছে না। বরং বেড়েই চলেছে ! তদ্রুপ অবস্থা হয়েছে সমুদ্রের ক্ষেত্রে। দেশের স্বার্থে এর অবসান হওয়া দরকার। তাই সমুদ্র সম্পদের সদ্ব্যবহারের জন্য আইনগত স্বাধীন কর্তৃপক্ষ গঠন করা আবশ্যক অবিলম্বে, যাতেসংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান তার আওতাধীন থাকে। উপরন্তু উক্ত কর্তৃপক্ষকে পূর্ণ আর্থিক স্বয়ংভরতা প্রদান করা দরকার। নতুবা সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে। স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে না দেশের অন্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো। উক্ত কর্তৃপক্ষের সকলকে কঠোর জবাবদিহিতার মধ্যে থাকার ব্যবস্থা করা দরকার। নতুবা বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির মতো সব গিলে ফেলবে খাদকরা। স্মরণীয় যে, বিশ্বের বহু দেশের অর্থনীতি সমুদ্রভিত্তিক। এক দৈনিকে প্রকাশ, বিশ্ব অর্থনীতিতে ৩-৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের কর্মকাণ্ড হচ্ছে সমুদ্র ঘিরে। বিশ্বের ৪৩০ কোটি মানুষের ১৫% প্রোটিনের জোগান দিচ্ছে সামুদ্রিক মাছ ও উদ্ভিদ। ৩০% গ্যাস ও জ্বালানি তেল আসছে সাগর থেকে। ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় অর্থনীতির সিংহভাগই সমুদ্র নির্ভর। সম্প্রতি দেশটি সুনীল অর্থনীতিকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যেগুলো বাস্তবায়িত হলে সমুদ্র থেকে আহরিত সম্পদের মূল্যমান হবে দেশটির বর্তমান জাতীয় বাজেটের ১০ গুণ। অস্ট্রেলিয়া সমুদ্র সম্পদ থেকে বর্তমানে প্রায় ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করছে। ২০২৫ সাল নাগাদ এ আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০০ বিলিয়ন ডলার। মিয়ানমার ও ভারত তাদের সমুদ্র থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেল অনুসন্ধান ওউত্তোলনের কাজ শুরু করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ এখনও উল্লেখযোগ্য কিছুই করতে পারেনি। অথচ সুনীল অর্থনীতি দেশের অর্থনীতিকে স্ফীত করার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। আর এই সম্পদ সম্পূর্ণ নিজস্ব, কারও উপর নির্ভরশীল নয়। কর্মসংস্থানও হবে লাখ লাখ মানুষের। উপরন্তু এসব উন্নতি টেকসই ও পরিবেশ বান্ধব। তাই এ দিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। স্মরণীয় যে, সমুদ্রের সদ্ব্যবহার না হওয়ার কারণে আমাদের সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ আশানুরূপ নয়, বিশ্বে ২৫তম। অথচ উন্মুক্ত জলাশয়ে তৃতীয় ও চাষের ক্ষেত্রে চতুর্থ অবস্থান বলে ফাও’র অভিমত। অপরদিকে, সুযোগ থাকা সত্তে¡ও আমরা গভীর সমুদ্র বন্দরও নির্মাণ করতে পারিনি। সোনাদিয়া আর পায়রার মধ্যে লেফট-রাইট করছি। সে অবস্থায় ভাসমান পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রশ্নই আসে না। অথচ চীনসহ কয়েকটি দেশ সমুদ্রে ভাসমান পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে। এছাড়া, সমুদ্রে ভাসমান ডেইরী ফার্ম করেছে নেদারল্যান্ড। এসব করার সুযোগ আমাদেরও আছে। উপকূলে উপশহর, ভাসমান কৃষি কাজ করা সম্ভব। কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। কারণ, আমরা নিজেরাও করতে পারি না, আবার অন্যকেও করতে দেই না। একই অবস্থা হয়েছে কয়লার ক্ষেত্রে। যা’হোক, আশার আলো হচ্ছে সম্প্রতি মৎস্যমন্ত্রী বলেছেন, প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও সক্ষমতার অভাবে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ সম্ভব হচ্ছে না। একই কারণে লোনাপানি অঞ্চলের মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধিতেও একই সমস্যা হচ্ছে। স¤প্রতি এফএও-এর সহযোগিতায় অত্যাধুনিক জাহাজ দিয়ে সমুদ্রে জরিপ কাজ চালানো হয়েছে। জরিপের তথ্য পাওয়ার পর সমুদ্রে ব্যবস্থাপনা কৌশল উদ্ভাবন করা সম্ভব হবে। যাবাস্তবায়নের মাধ্যমে সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ উন্নয়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
স্বীয় সম্পদ দিয়ে উন্নতির আর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে পর্যটন। পর্যটন খাতের আয় দিয়ে বিভিন্ন দেশ ব্যাপক উন্নতি করেছে ও করছে। এমনকি অনেক দেশের অর্থনীতি শুধুমাত্র পর্যটন ভিত্তিক। যেমন, নেপালের ৬২% ও মালদ্বীপের সিংহভাগ । এই খাতে ব্যাপক সম্ভাবনা থাকা সত্তে¡ও বাংলাদেশের অবস্থা নাজুক। পর্যটন খাতের অবদান আমাদের জিডিপি’র মাত্র ২.৫ শতাংশের বেশি নয়। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘ভ্রমণ ও পর্যটন প্রতিযোগিতা প্রতিবেদন-২০১৭’ মতে, বিশ্বের ১৩৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৫তম। দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচটি দেশের মধ্যেবাংলাদেশ সর্বনিম্নে। পর্যটক আকর্ষণে একটি দেশ কতটা নিরাপদ, অবকাঠামো সুবিধা কেমন, বিমানবন্দর কতটা উন্নত, আবাসন ব্যবস্থার মান কেমন, এমন ১৪টি সূচকের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন প্রণীত। প্রতিটি সূচকে সর্বোচ্চ নম্বর ৭, আর সর্বনিম্ন নম্বর ১। বাংলাদেশের পয়েন্ট ২.৯। ডবিøউটিও’র অন্য এক প্রতিবেদন মতে, বিশ্বজুড়েই পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ছে। ২০১৬ সালে বিশ্বব্যাপী ভ্রমণকারীর সংখ্যা ছিল ১২০ কোটি , যা ২০৩০ সাল নাগাদ ১৮০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে বিমান চলাচল, ভ্রমণ ও পর্যটনশিল্পের আকার বিশ্ব জিডিপির প্রায় ১০% ও মোট কর্মসংস্থানের ১০%। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে ভারতে বছরে ২০ বিলিয়ন ডলার আয় করা সম্ভব। অপরদিকে, তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ২০২৩ সালের মধ্যে তুরস্কে বছরে ৫ কোটি পর্যটক আসবে। ফলে বছরে ৫ হাজার কোটি ডলার আয় হবে। গত নভেম্বর প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিল’র প্রতিবেদন মতে, পর্যটন গন্তব্য হিসেবে দ্রুত প্রবৃদ্ধিশীল বিশ্বের শীর্ষ ১০ শহরই এশিয়ার। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চিত্র ভিন্ন। দেশীয় পর্যটক কিছু বাড়লেও বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা কমছে। অথচ দেশে পর্যটন নীতিমালা, ২০১০ আছে। উপরন্তু দেশের পর্যটন খাতকে থ্রাস্ট সেক্টর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তবুও এই খাতের উন্নতি হচ্ছে না। এমনকি পর্যটন খাতের উন্নতির জন্য মাষ্টারপ্ল্যানও নেই। সবেমাত্র করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়া, দেশের পর্যটন খাতের উন্নতির জন্য যে ধরনের মেধা, দক্ষতা ও অর্থ দরকার, তা সরকারের নেই বলে অনেকের অভিমত। এই অবস্থায় দেশের পর্যটন খাতের কাক্সিক্ষত উন্নতির জন্য অবিলম্বে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করে তা পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করা আবশ্যক এখন বিশ্বজুড়ে ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে ‘হালাল ট্যুরিজম’। থমসন রয়টার্সের প্রতিবেদন মতে, ২০১৬ সালে মুসলিমরা ভ্রমণে ব্যয় করেছে ১৬৯ বিলিয়ন ডলার। যা ২০২১ সাল নাগাদ দাঁড়াবে ২৪৩ বিলিয়ন ডলার, আর ২০২২ সাল নাগাদ হবে ২৮৩ বিলিয়ন ডলার। এয়ার বিএনবির মতো অনেক মুসলিম প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে গড়ে উঠেছে হালাল পর্যটন সুবিধা দিতে। উপসাগরীয় দেশগুলোতে পারিবারিক পরিবেশে পর্যটনেরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পর্যটকদের কাক্সিক্ষত স্থান ও হালাল খাদ্য কোথায় পাওয়া যাবে এ সংক্রান্ত তথ্য দেওয়া হচ্ছে ওয়েবসাইট। উল্লেখ্য যে, প্রতি একজন পর্যটকের কারণে এগারো জনের কর্মসংস্থান হয়। তাই স্বল্প ব্যয়েই ব্যাপক কর্মসংস্থান ও অনেক আর্থিক উন্নতি ঘটানোর জন্য পর্যটনের মতো আর কোন খাত নেই। দ্বিতীয়ত এই খাতের উন্নতি টেকসই ও পরিবেশ বান্ধব। সর্বোপরি বিদেশি পর্যটকের কারণে বহিঃবিশ্বে দেশের ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল হয়। বিনিয়োগও বৃদ্ধি পায়। তাই পর্যটন খাতের উন্নতির জন্য সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া অপরিহার্য।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন