বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চুলার পর এবার গাড়িও বন্ধ হওয়ার পথে

প্রকাশের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নূরুল ইসলাম : রাজধানীর সিএনজি স্টেশনগুলোতে গ্যাস নেই। গ্যাসের অপেক্ষায় সারি সারি গাড়ি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা। সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। বিকল্প হিসেবে অনেকে বেছে নিয়েছেন মধ্যরাতকে। তাতেও মিলছে না স্বস্তি। দীর্ঘ অপেক্ষায় রাতও শেষ হয়ে যাচ্ছে। গ্যাস সংকটে চুলার পর এবার গাড়িও বন্ধ হওয়ার উপক্রম। গতকাল সোমবার এ কারণে বহু গাড়ি রাস্তায় নামতে পারেনি। সিএনজি অটোরিকশা চলেছে ৩/৪ ঘণ্টা বিরতি দিয়ে। এতে নগরবাসীর দৈনন্দিন দুর্ভোগের সাথে যোগ হয়েছে পরিবহন যান সংকট। রাজধানীর বেশ কয়েকটি সিএনজি স্টেশন সরেজমিনে ঘুরে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
নিয়ম অনুযায়ী বিকাল ৫টার পর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সিএনজি স্টেশনগুলো বন্ধ থাকে। এজন্য সন্ধ্যার পর থেকেই গ্যাসের জন্য সিরিয়াল দিতে হয়। কিন্তু এখন গ্যাস সরবরাহ না থাকায় ভোর থেকে লাইন দিয়েও গাড়িগুলোতে পর্যাপ্ত গ্যাস মিলছে না। সকালের গাড়িগুলো আবার ফিরে আসলে রাতের পালায়। অধিকাংশ সিএনজি স্টেশন ছাপিয়ে গাড়ির দীর্ঘ সারি চলে আসছে মূল সড়কে। সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। কয়েকজন সিএনজি অটোরিকশা চালকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গ্যাসের চাপ কম থাকায় ৬০ টাকার বেশি গ্যাস ঢুকছে না। এতে করে ২ ঘন্টা চালানোর পর আবার গ্যাস ফুরিয়ে যাচ্ছে। আবার লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে তাদের। এভাবে একই গাড়ি দিনের মধ্যে ২/৩বার গ্যাস নিতে গিয়ে সিএনচিজ স্টেশনে সিরিয়ালের সারি দীর্ঘ হচ্ছে।
রাজধানীর জুরাইনের এক সিএনজি স্টেশনের ম্যানেজার বলেন, আমাদের মিটারে আগে চাপ থাকত ৩০ থেকে ৩৫। এখন চাপ পাওয়া যাচ্ছে ১৫ থেকে ২০। শীতের দিনে এই রকম সমস্যা হয়ে থাকে। তবে এবারের সমস্যা বেশি। এই চাপ দিয়ে পরিপূর্ণভাবে গ্যাস ভরা সম্ভব নয়। বেলা ৩টার দিকে পল্টনের এক সিএনজি স্টেশনে অপেক্ষমান সিএনজি অটোরিকশা চালক আবদুর রশিদের সাথে কথা হলো। তিনি জানান, সকালে দেড় ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে মাত্র ৬০ টাকার গ্যাস ভরতে পেরেছেন। সেই গ্যাসে দুটি ট্রিপ মেরে আবার গ্যাসের জন্য লাইনে আছেন। দুই ট্রিপে মাত্র ৫শ’ টাকা ভাড়া পেয়েছেন জানিয়ে ওই চালক বলেন, লাইনের যা অবস্থা তাতে আমি সিরিয়াল পাওয়ার আগেই ৫টা বেজে যাবে। আবার রাত ৯টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আজ মালিকের জমার টাকাই উঠবে না। নিজে কি খাবে, পরিবারের জন্য কি কিনবো জানি না। পল্টন ওই সিএনজি স্টেশনের ম্যানেজার জানান, চাপ না থাকায় গ্যাস যেমন ঢুকছে না, আবার সময়ও বেশি লাগছে। আবার যে গাড়ি দিনে একবার গ্যাস নিলেই চলতো, সেই গাড়িতে ২/৩বার করে গ্যাস নিতে হচ্ছে। এতে করে ঝামেলা বাড়ছেই।
কাকরাইল এলাকায় এক পিকআপচালক জানালেন, দিনে গ্যাস নিতে না পেরে তিনি গতরাতে গ্যাসের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু লাইন এতো দীর্ঘ ছিল যে গ্যাস ভরতে ভরতে ভোর হয়ে গেছে। মগবাজারের যমুনা ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার জানান, ইদানিং সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত গ্যাসের চাপ কম থাকে। বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত পাম্প বন্ধ রাখতে হয়। এ কারণে রাত ২-৩টা পর্যন্ত গাড়ির চাপ থাকে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল সোমবার টঙ্গী ডাইভারশন রোডের প্রায় সবগুলো সিএনজি পাম্পকে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির কারণে রাস্তায় অতিরিক্ত যানজটের সৃষ্টি হয়। মগবাজার মোড়ের আনুদ্বীপ সিএনজি পাম্পে আসা গাড়ির লাইন ছাড়িয়ে যায় হলি ফ্যামেলি হাসপাতাল। ফ্লাইওভারের কাজ চলায় রাস্তার অর্ধেক ছিল বন্ধ। আর বাকি অর্ধেক বন্ধ করেছিল সিএনজি নিতে আসা গাড়িগুলো। এ বিষয়ে জ্যামে আটকে থাকা এক যাত্রী বলেন, এমনিতেই রাস্তা বন্ধ ফ্লাইওভারের কাজের কারণে তার ওপর আবার রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে সিএনজি জন্য দাঁড়ানো গাড়িগুলো। শুধু সিএনজি অটোরিকশা নয়, প্রাইভেট কার, জীপ, মাইক্রোবাস, মিনিবাস, এ্যাম্বুলেন্সসহ সব ধরণের যানবাহনই দেখা গেছে স্টেশনগুলোতে।
এদিকে, গ্যাস না পাওয়ায় বহু পরিবহন যান গতকাল রাস্তায় নামতে পারেনি। পরিবহন মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীতে চলাচলরত অধিকাংশ সিটি সার্ভিসই সিএনজিচালিত। গ্যাস সংকটে সেগুলো রাস্তায় নামানো যায় নি। তেলে চালাতে গেলে পোষাবে না জানিয়ে পরিবহন কোম্পানীর এক পরিচালক বলেন, লোকসানের চেয়ে গাড়ি বসিয়ে রাখাই ভালো। এ কারনে পরিবহন যান সংকটে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে যাত্রীদের। মিরপুর শেওড়াপাড়ার এক যাত্রী বলেন, প্রতিদিন আমি মতিঝিলের অফিসে যাই। বাসের জন্য প্রায় আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। আজ এক ঘন্টা অপেক্ষা করেও কোনো বাসে উঠতে পারিনি। বাধ্য হয়ে রিকশায় রওনা করেছি। তিনি বলেন, আমার মতো অসংখ্য যাত্রী পরিবহন যান সংকটে সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হয়েছে।
বাংলাদেশ সিএনজি স্টেশন ওনার্স এ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মাসুদ খান বলেন, শীতকালে গ্যাসের চাহিদা বেশি থাকে ও পরিবেশের কারণে ফিডে গ্যাসের চাপ কম থাকে। এটা নিয়ে আমরা সরকারের সঙ্গে অনেক কথা বলেছি। সরকার কর্ণপাত করছে না। এই খাতের বিষয়ে সরকার অনাগ্রহী। আমরা যদি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন না করতাম তাহলে কত টাকার তেল বিদেশ থেকে কিনে আনতে হতো সেটা কেউ বলে না।
ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ খোকন বলেন, পাইপ লাইনে গ্যাস না থাকায় এবং গ্যাসের চাপ না থাকায় সিএনজি অটোরিকশার চালকদেরকে দিনের অধিকাংশ সময় পাম্পে বসে থাকতে হচ্ছে। আগে যেখানে অটোরিকশার সিলিন্ডারে আড়াইশ টাকার গ্যাস ঢুকতো এখন সেখানে ৬০ টাকার গ্যাস ঢুকছে। এতে করে চালকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তারা নিজের খাওয়ার টাকাই জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে। মালিকের জমা দিবে কিভাবে? এদিকে, ঢাকায় বাসা বাড়িসহ সিএনজি স্টেশনগুলোতে গ্যাস সংকট চরম আকার ধারণ করার জন্য গ্যাসের অবৈধ গ্যাস লাইনকে দায়ী বলে মনে করছেন অনেকেই। তাদের মতে, নারায়ণগঞ্জের অর্ধ লক্ষাধিক অবৈধ গ্যাস সংযোগ বন্ধ করলে এই অবস্থা হতো না। এজন্য যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তিতাস গ্যাস এমপ্লয়ীজ ইউনিয়নের এক নেতা বলেন, আমরা এসব অবৈধ সংযোগের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। গ্যাস নিয়ে বিগত দুই আড়াই বছর ধরে যেভাবে দুর্নীতি হয়েছে তাতে এর চেয়ে চরম দুর্ভোগ আমাদের সামনে অপেক্ষা করছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন