শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ সফর চট্টগ্রামে

৩০ জানুয়ারি উদ্বোধন বিশ্ব বাণিজ্যকেন্দ্র, চেম্বারের শতবর্ষ পূর্তি, আউটার রিং-রোড, বঙ্গবন্ধুর সর্বোচ্চ ম্যুরাল ও এভিনিউ

প্রকাশের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শফিউল আলম : বন্দরনগরী তথা দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার মূলত ‘অর্থনৈতিক গুরুত্ববহ’ এক সফরে আসছেন আগামী ৩০ জানুয়ারি (শনিবার)। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন চট্টগ্রাম নগরীতে নবনির্মিত দেশের প্রথম বিশ্ব বাণিজ্যকেন্দ্র (ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার-ডব্লিউটিসি), চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির শতবর্ষ পূর্তির অনুষ্ঠানমালা, সাগর-উপকূল আর নগরীকে ঘিরে চলমান আউটার রিং-রোড প্রকল্প, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এ যাবত দেশের সর্বোচ্চ ম্যুরাল ও বঙ্গবন্ধু এভিনিউ সড়ক এবং কদমতলী ফ্লাইওভার। তিনি নগরীর লালখানবাজার থেকে পতেঙ্গা শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত সুদীর্ঘ ফ্লাইওভারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং পতেঙ্গা-ফৌজদারহাট লিংক রোড ও ফৌজদারহাট-বায়েজিদ বাইপাস রোডের নির্মাণ কাজেরও উদ্বোধন করবেন। সদ্যনির্মিত প্রকল্প উদ্বোধন, নতুন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও নির্মাণ কাজ উদ্বোধনÑ এই তিনটি প্রক্রিয়ায় এবার চট্টগ্রামে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পবহর সূচনা করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ব্যস্ত- ছকের এই সফরসূচিকে ঘিরে চট্টগ্রাম নগরীজুড়ে সাজ সাজ রব পড়ে গেছে। নগরীকে পরিচ্ছন্ন ও ছিমছাম দৃষ্টিনন্দন করতে ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ক্রাশ প্রোগ্রাম প্রায় শেষ হয়েছে। নগরীর প্রধান বিষফোঁড়া বিলবোর্ড উচ্ছেদ করা হয়েছে। এখন নগরের পাহাড়-টিলা, গাছপালা আর আকাশ চোখে পড়ছে। দৈত্যাকার বিলবোর্ডের কারণে দিনের বেলায়ও সেই ঘুটঘুটে আঁধার নেই। বর্তমানে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি আর ধোঁয়া-মোছার কাজ চলছে।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৩০ জানুয়ারি শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) কয়েকটি ইতোমধ্যে সম্পন্ন প্রকল্প, চলমান প্রকল্প ও নির্মাণ কাজ উদ্বোধন এবং ভিত্তিস্থাপন করবেন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ও নগর উপকণ্ঠে কুয়াইশ এলাকায় নির্মিত বঙ্গবন্ধুর ৪৭ ফুট উঁচু ম্যুরাল। এটি দেশে বঙ্গবন্ধুর এ যাবত সর্বোচ্চ ম্যুরাল বা প্রতিকৃতি। নগরীর অক্সিজেন থেকে কুয়াইশ পর্যন্ত অনন্যা আবাসিক এলাকার মধ্য দিয়ে প্রায় ৬০ কোটি টাকায় ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ৬০ ফুট চওড়া ‘বঙ্গবন্ধু এভিনিউ সড়ক’ নির্মাণ করা হয়েছে। এ সড়ক যেখানে শেষ হয়েছে সেই ব্যস্ত অংশ কুয়াইশ ও কাপ্তাই সড়কের কাছে নির্মিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল। প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে স্তম্ভের তিনদিকে মুখ করে বঙ্গবন্ধুর ৪৭ ফুট উঁচু তিনটি ম্যুরাল স্থাপন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর সর্বোচ্চ ম্যুরালটি এবং একই সাথে নবনির্মিত বঙ্গবন্ধু এভিনিউ সড়ক উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে তিনি ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সিডিএ’র ২শ’ কোটি টাকার প্রকল্প পতেঙ্গা-ফৌজদারহাট লিংক রোড ও ফৌজদারহাট-বায়েজিদ বাইপাস রোড নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করবেন। প্রায় ৬০ কোটি টাকায় নির্মিত ১ দশমিক ১০ কিলোমিটার কদমতলী ফ্লাইওভারও তিনি উদ্বোধন করবেন এবং এটি যান চলাচলের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে মুরাদপুর-লালখানবাজার ফ্লাইওভারের নির্মাণাধীন সম্প্রসারিত অংশ লালখানবাজার থেকে পতেঙ্গা শাহআমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই ফ্লাইওভার নির্মাণে ব্যয় হবে ৩ হাজার কোটি টাকা।
এদিকে ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের তালিকায় শহর রক্ষা, শিল্পায়ন, আবাসন ও পর্যটনের প্রেক্ষাপাটে গুরুত্বপূর্ণ ও সবচেয়ে বড় প্রকল্পটি হচ্ছে আউটার রিং-রোড। ১৭শ’ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ মেগা প্রকল্পটিতে জাপানের সহায়তা সংস্থা জাইকা ৭শ’ ৫২ কোটি টাকা, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ৮২ কোটি টাকা এবং সরকারের তরফ থেকে ৮শ’ ৬৬ কোটি টাকা অর্থায়ন করা হচ্ছে। পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত রিং রোডটি শহর রক্ষা বাঁধের কাজও করবে। দেশীয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিঃ (এসইএল) ও ভারতীয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কেএনআর লিঃ যৌথভাবে প্রকল্পের কার্যাদেশ পায়। আউটার রিং-রোড নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। পতেঙ্গা থেকে সাগরিকা স্টেডিয়াম পর্যন্ত ১৭.১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৬০ ফুট প্রস্থ সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। এরমধ্যে ১৫.২ কিলোমিটার কোস্টাল রোড এবং ২.১৫ কিলোমিটার ফিডার সড়ক। বর্তমান বেড়িবাঁধকে ১০ ফুট উঁচু করে সড়কটি নির্মিত হচ্ছে এবং এরজন্য সাগর উপকূল থেকে মাটি তোলার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে সিডিএ’র চুক্তি হয়েছে।
দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত বন্দরনগরীর আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় নির্মিত হয়েছে সুরম্য বিশ্ব বাণিজ্যকেন্দ্র (ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারÑডবলিউটিসি)। চিটাগাং চেম্বারের উদ্যোগেই এটি নির্মিত হয়েছে। যা বাংলাদেশে প্রথম ডব্লিউটিসি। ৭৫ কাঠা জায়গার উপর ২শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে এটি। ২০০৬ সালের মে মাসে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ইতোমধ্যে তা শেষ হয়েছে। তিনটি বেসমেন্টসহ ২৪ তলা ভবনটি চট্টগ্রামের সর্বোচ্চ ভবন। প্রধানমন্ত্রী আগামী শনিবার ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার উদ্বোধন করবেন। চট্টগ্রামে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ভবনের ৫৩ হাজার ৯১৩ বর্গফুট আয়তনের বিশাল পরিসরে থাকছে আন্তর্জাতিক মানের কনভেনশন সেন্টার, কনফারেন্স হল, হেলথ ক্লাব, দেশীয় পণ্যসামগ্রীর প্রদর্শনী হল, সুইমিং পুুল, মূল অফিস, আইটি ও মিডিয়া সেন্টার, অফিস স্পেস, পাঁচ তারকামানের হোটেল, আন্তর্জাতিকমানের ব্যবসা-বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট পরিসেবা ইত্যাদি
এদিকে দেশের প্রাইম চেম্বার খ্যাত চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ ইতোমধ্যে তার প্রতিষ্ঠাকালের ১শ’ ১০ বছর অতিক্রম করেছে। এবার চিটাগাং চেম্বারের শতবর্ষপূর্তি উৎসব উদযাপন করা হচ্ছে। এ উপলক্ষে ৫ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা সূচিত হচ্ছে আগামীকাল (বুধবার)। প্রথম দিন ২৭ জানুয়ারি মিলাদ মাহফিল, দ্বিতীয় দিন ২৮ জানুয়ারি চিত্তাকর্ষক ‘লাইট এন্ড সাউন্ড শো’, ৩০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক চিটাগাং চেম্বারেরই সফল প্রকল্প ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার উদ্বোধন, ৩১ জানুয়ারি হোটেল রেডিসন ব্লুতে বিজনেস কনফারেন্স এবং ১ ফেব্রুয়ারি রাঙ্গামাটিতে পর্যটন সামিট অনুষ্ঠিত হবে। চেম্বারের শতবর্ষ উদযাপনে চট্টগ্রামে এবারই প্রথম লাইট এন্ড সাউন্ড শোর আয়োজন করা হচ্ছে। এতে চট্টগ্রামের হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরা, আরব্য, পর্তুগীজ, তুর্কি, পারস্য, চীনা বণিকদের চট্টগ্রামে গমনাগমন থেকে শুরু করে সুদূর অতীতকে লাইট এন্ড সাউন্ড শোর মাধ্যমে উপস্থাপন করা হবে। বন্দর স্টেডিয়ামে লাইট এন্ড সাউন্ড শো অনুষ্ঠিত হবে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন