বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

প্রধান বিচারপতিকে ‘কথা কম’ বলার পরামর্শ সুরঞ্জিতের

প্রকাশের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : বিচার বিভাগের ‘কোন্দল’ প্রকাশ্যে এনে উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে দায়ী করে তাকে কথা ‘কম’ বলার পরামর্শ দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের প্রবীণ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।
অবসরে যাওয়ার পর বিচারকদের রায় লেখা ‘সংবিধান পরিপন্থি’ বলে বক্তব্য দিয়ে প্রধান বিচারপতি অনধিকার চর্চা করেছেন বলেও মনে করেন জাতীয় সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেন। সোমবার রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজের শোকসভায় সুরঞ্জিত এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতাদের অন্যতম সুরঞ্জিত সেন বলেন, সাংবিধানিকভাবে প্রধান বিচারপতি দেশের প্রধান তিনজনের একজন। প্রধান বিচারপতিরা প্রধান বিচার করেন, প্রধান কথা বলেন না। এই পদে থেকে সাধারণত প্রধান কথা শোনা যায় না।
তিনি বলেন, এই পদে থেকে তিনি এমন কিছু কথা বলে ফেলেছেন, যা জাতীয় রাজনীতিতে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। এটা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। এভাবে কথা বলতে বলতে তিনি কোথায় চলে যাচ্ছেন, তার সীমানা থাকছে না। বিচারপতি সিনহার বক্তব্য সংবিধান সমর্থন করে না বলেও তিনি দাবি করেন।
সুরঞ্জিত বলেন, তিনি এমন কিছু কথা বলেছেন, যা সংবিধানের কোথাও নেই। সংবিধান রচনা করেছি আমি। সংবিধানের কোন জায়গায় লেখা আছে যে বিচারপতিরা অবসরে গেলে রায় লেখা যাবে না। এ কথা সংবিধানের কোথাও লেখা নেই। তিনি বলেন, উনি (প্রধান বিচারপতি) যা বলেছেন, এটা তো কোনো আইন নয়। উনি যদি মনে করেন, শপথ শেষ হয়ে গেলে আর বিচার দেখতে দেব না, সেটা অবসরে যাওয়ার কতদিন আগ থেকে, জাজমেন্ট ঘোষণা করতে হবে? এটাও আইনে আনতে হবে; মন্তব্য করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত মনে করেন প্রধান বিচারপতির এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগের অন্তঃকোন্দল প্রকাশ্য হয়েছে। সম্প্রতি অবসরে যাওয়া সুপ্রিম কোর্টেও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর অভিযোগের দিকে ইঙ্গিত করে সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত বলেন, আপনারা দুই বিচারপতির মধ্যে গোলমাল, আক্রোশ-বিক্রোশ, এটা বাইরে আসবে কেন? আমি এবং তুমি-এটা জনগণ জানবে কেন? আপনাদের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে, আর আপনি সেটা নিয়ে পাবলিকলি কথা বলে অনেককে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছেন। নিজস্ব কোন্দলের জন্য জাতীয়ভাবে এত বড় একটা উত্তেজনা সৃষ্টি করবেন, এটা আমরা আশা করি না।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে প্রধান বিচারপতির সাম্প্রতিক আরেক বক্তব্যেরও প্রতিবাদ জানান ক্ষমতাসীন দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত। তিনি বলেন, আপনাকে প্রধান বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ দেয়ার পর রাগ-অভিমান-বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে দেশের জন্য, জাতির জন্য কাজ করে যাওয়ার কথা। আর আপনি বলে উঠলেন, আপনার ক্ষমতা কেড়ে নেয়া হচ্ছে!
আওয়ামী লীগের প্রবীণ এ নেতা বলেন, এখন আইনের শাসনের যুগ। আপনারা তো স্বাধীন আলাদা। সংবিধানে স্পষ্ট লেখা রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি এই তিনটি অঙ্গনই একে অপরের পরিপূরক।
বৃহত্তর সিলেটের বাসিন্দা বিচারপতি সিনহাকে বাক সংযমী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে একই অঞ্চলের সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত বলেন, আপনি কথাবার্তা আরও সংযত হয়ে বলুন। এমন কোনো কথা বলবেন না, যা জাতীয় জীবনে-রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে। সংঘাতপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হবে। যত কথা কম বলা যায়। একেবারে বাক সংযত। আপনার এখনও সময় আছে। প্রতিষ্ঠানটির কথা চিন্তা করুন।
খালেদা জিয়াকে আইন মানার পরামর্শ
মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্যে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেন তাকে (খালেদা জিয়া) আইন মানার পরামর্শ দিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের ওই স্মরণসভায় সাবেক মন্ত্রী সুরঞ্জিত বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়েছে। তার মানে এই নয় যে আজ মামলা হয়েছে, কাল উনাকে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে আসবে।
তিনি বলেন, দেশে কোনো সামরিক শাসন চলছে না। উনি আদালতে আত্মসমর্পণ করতে পারেন। আবারও জামিনের আবেদনও জানাতে পারেন।
কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয় মন্তব্য করে সুরঞ্জিত বলেন, আমরা দেশের এক-দু’নম্বর নেতা হলেই যা ইচ্ছা তাই করতে চাই। আমি তাকে (খালেদা) বলব, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হন।
স্মরণসভায় আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানা প্রমুখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন