‘যাক্কুম’ শব্দটি কোরআনের তিনটি সূরায় তিনবার উল্লেখ করা হয়েছে। সূরাগুলো হচ্ছে- ‘দোখান’, ‘সাফফাত’ এবং ‘ওয়াকিআ’। এতদসংক্রান্ত আয়াতগুলোতে যাক্কুমের স্বরূপ, বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি বর্ণনা করার পাশাপাশি বলা হয়েছে, কেয়ামতের দিন এটা (যাক্কুম) হবে জাহান্নামিদের আহার-আপ্যায়ন। বিভিন্ন তাফসির গ্রন্থে ‘যাক্কুম’ বৃক্ষের বিশদ বিবরণ প্রদত্ত হয়েছে এবং দুনিয়াতে এ বৃক্ষের অস্তিত্ব সম্পর্কেও নানা তথ্য পরিবেশিত হয়েছে। কোরআনের তিনটি সূরায় ‘যাক্কুম’ বৃক্ষের স্বরূপ তুলে ধরা হয়েছে তা এভাবে :
১. সূরা সাফফাতে বলা হয়েছে, আপ্যায়নের জন্য কি এটাই শ্রেয় না ‘যাক্কুম’ বৃক্ষ। জালিমদের জন্য এটা সৃষ্টি করেছি পরীক্ষা স্বরূপ। এই বৃক্ষ উদগত হয় জাহান্নামের তলদেশ হতে, এর মোচা যেন শয়তানের মাথা। ওরা এটা হতে ভক্ষণ করবে এবং উদর এ দ্বারা। তদুপরি ওদের জন্য থাকবে ফুটন্ত পানির মিশ্রণ। (আয়াত : ৬২-৬৭) ২. সূরা দোখানে বলা হয়েছে, নিশ্চই ‘যাক্কুম বৃক্ষ হবে পাপির খাদ্য, গলিত তম্রের মতো ওদের উদরে ফুটতে থাকবে ফুটন্ত পানির মতো। ওকে ধর এবং টেনে নিয়ে যাও জাহান্নামের মধ্যস্থলে, অত:পর ওর মস্তকের ওপর ফুটন্ত পানি ঢাল, শাস্তি দাও এবং বলা হবে আস্বাদ গ্রহণ করো, তুমি তো ছিলে সম্মানিত, অভিজাত। (আয়াত : ৪৫-৪৯) ৩. সূরা ওয়াকিআতে বলা হয়েছে, অত:পর হে বিভ্রান্ত অস্বীকারকারীরা! তোমরা অবশ্যই আহার করবে ‘যাক্কুম’ বৃক্ষ হতে এবং তা দ্বারা তোমরা উদর পূর্ণ করবে, পরে তোমরা পান করবে তার ওপর অত্যুষ্ণ পানি। আর পান করবে তৃষ্ণার্ত উষ্ট্রের ন্যায়। কেয়ামতের দিন এটাই হবে ওদের আপ্যায়ন। (আয়াত : ৫২-৫৬)
উল্লিখিত আয়াতগুলোতে স্পষ্ট করে জাহান্নামিদের খাদ্য ও পরিণতির কথা বলে দেয়া হয়েছে। এ সম্পর্কে তাফসির গ্রন্থগুলোতে বহু বিবরণ রয়েছে। এখানে আমরা কিছুটা ভিন্ন আঙ্গিকে ‘যাক্কুম’ বৃক্ষের কথা বলতে চাই। আর তা হচ্ছে, জাহান্নামিদের কেয়ামতের কোনো সময় এ ‘যাক্কুম’ আপ্যায়ন করা হবে, কোরআন ও হাদিসের আলোকে তা নিম্নরূপ : জাহান্নামের যে সাতটি স্তর আছে তার প্রথমটি হচ্ছে ‘জাহিম’। এ স্তর পাপি মুসলমান ও সেসব কাফেরের জন্য নির্ধারিত, যারা শির্ক করা সত্তে¡ও পয়গম্বরদের স্বীকার ও সমর্থন করত। এতদ্ব্যতীত অন্যান্য শ্রেণীর মোশরেক অগ্নি উপাসক, নাস্তিক, ইহুদি, নাসারা (খ্রিষ্টান) এবং মোনাফেকদের জন্য নির্ধারিত কয়েকটি স্তর আছে কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে। এগুলোর নাম দেয়া হয়েছে; ‘ঘাইয়্যুন’, ‘জামহারির’, ‘জুববুল হাজান’, ‘তীনাতুল খাবাল’, ‘ছাউদ’, ‘মাউন হামিম’, ‘গাসসাক’, ‘গিসলীন’ এবং ‘যাক্কুম’। এসব স্তর, ঘর, ক‚প ইত্যাদিতেও কঠিন কঠিন বেশুমার আজাব ভোগ করতে হবে। এগুলো একে একে প্রত্যেকটি অতিক্রম করতে হবে নির্ধারিত সর্ব প্রকারের আজাব ভোগের মাধ্যমে।
অবর্ণনীয় এসব আজাবের জন্য দেহকে এক ঘণ্টার মধ্যে সাতশ’ বার পর্যন্ত বদল করা হবে। কিন্তু দেহের আসল অঙ্গগুলো ঠিকই থাকবে। এ সুদীর্ঘকাল অভুক্ত থাকার ফলে যে করুণ দশার সৃষ্টি হবে তা অকল্পণীয়। এ মরণদশা অবস্থায় খাদ্য চাওয়া হবে, তখনই আপ্যায়ন করার জন্য দেয়া হবে ‘যাক্কুম’ বৃক্ষ।
‘জাহিম’ দোজখের তলদেশে গজানো ‘যাক্কুম’ তিক্ত, কাটাদার ও খুব শক্ত। কাফেরদের আহার করার জন্য দেয়া হবে। ওরা যখন খেতে আরম্ভ করবে তখন গলায় ফেসে যাবে। তারা পানি চাইবে, তখন নির্দেশ হবে ‘জাহিম’ দোজখ হতে পানি পান করানোর। পানি মুখে নেয়ার সাথে সাথে ঠোঁট জ¦লে ঝলসে যাবে এবং তা কপাল ও বক্ষে গড়াতে থাকবে। জিব বেঁকে যাবে, কণ্ঠনালী গলিত হয়ে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাবে, নাড়িভ‚ঁড়িগুলো ফেঁটে পায়খানার পথে বের হয়ে পড়বে। এ অস্থির অবস্থায় জাহান্নামের দারোগার সামনে জাহান্নামিরা আহাজারি করে বলবে, ‘আমাদেরকে মেরে ফেলো, যাতে আমরা এসব বিপদ হতে রক্ষা পাই।’ এক হাজার বছর পর দারোগা জবাব দেবে, ‘তোমরা সর্বদাই এখানে থাকবে।’ এর এক হাজার বছর পর আল্লাহ তায়ালার নিকট প্রার্থনা করবে, ‘হে আল্লাহ! আমাদের প্রাণ নিয়ে নাও এবং তোমার রহমত দ্বারা এ আজাব হতে রক্ষা করো।’ একহাজার বছর পর আল্লাহর দরবার হতে জবাব আসবে, ‘খামুশ! আমার নিকট প্রার্থনা করবে না। তোমাদের এখান হতে বের হওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই।’ সর্বশেষে ওরা বাধ্য হয়ে বলবে, ‘এসো ভাই ছবর কর, ধৈর্য ধারণ করো। কেননা ধৈর্যের ফল হয় উত্তম।’ অত:পর আল্লাহ তায়ালার নিকট বিনয় ও আহাজারির সাথে এক হাজার বছর পর্যন্ত তাঁকে স্মরণ করবে। পরিশেষে, অত্যন্ত নিরাশ হয়ে বলবে, ‘অস্থিরতা ও ধৈর্য আমাদের জন্য সমান, কোনো রকমেই মুক্তি নেই!’ অত:পর তাদের মস্তক ধরে খাড়া করা হবে, তাদের দেহ বিকৃত হয়ে কুকুর, শকুন, বাঘ, বানর, সাপ ও অন্যান্য জীব-জন্তুর আকার ধারণ করবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন