বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

প্রবাস জীবন

মালয়েশিয়ায় কর্মী সঙ্কট

অপেক্ষমাণ ৬০ হাজার কর্মী যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে ১০ অক্টোবর মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত হতে পারে

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ৭ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

মালয়েশিয়ার বিভিন্ন সেক্টরে অভিবাসী কর্মী সঙ্কট চরমে পৌঁছেছে। কর্মীর অভাবে ফ্যাক্টরীসহ অন্যান্য সেক্টরে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ধস নেমেছে। কর্মী সংকটের দরুণ মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের দেশগুলোতে যথাসময়ে পণ্য সরবরাহে হিমসিম খাচ্ছেন মালয়েশিয়ার ফ্যাক্টরীর মালিকরা। বাংলাদেশ থেকে দ্রুত কর্মী পাঠিয়ে দেশটির উৎপাদন প্রক্রিয়ায় গতি ফিরিয়ে আনতে অনুরোধ জানিয়েছেন ফ্যাক্টরীর সংশ্লিষ্ট মালিকরা। শিগগিরই মালয়েশিয়ায় অনলাইন ও ম্যানুয়াল প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ থেকে অপেক্ষমান প্রায় ৬০ হাজার কর্মী দেশটিতে যাওয়ার সুযোগ পাবে। বায়রার সভাপতি বেনজীর আহমেদের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল গত বুধবার মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনে হাই কমিশনার মোঃ শহিদুল ইসলামের সাথে বৈঠকে এতথ্য অবহিত করা হয়। কুয়ালালামপুর থেকে নির্ভরযোগ্য সূত্র এতথ্য জানিয়েছে। আগামী ১০ অক্টোবর মালয়েশিয়ার মন্ত্রিসভায় বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে বায়রার একজন শীর্ষ কর্মকর্তা এ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
মালয়েশিয়ার বুকিত তাছর মোয়ার জেলার পিওয়্যর স্টার এসডিএন বিএইচ ডি , ওরা উড এসডিএন বিএইচডি ও সেলিং তাং পাপান এসডিএন বিএইচডির স্বত্বাধিকারী মিঃ পেউচিং হাউ গতকাল শনিবার বাংলাদেশী রিক্রুটিং এজেন্সীর ইয়াম্বু ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের ওভারসীজ নির্বাহী মোঃ দেলোয়ার হোসাইনের কাছে ১শ’ ৭০ জন কর্মী দ্রুত নিয়োগের জন্য ওয়ার্ক অর্ডার হস্তান্তর করেন। মিঃ পেউচিং হাউ তার পরিচালিত ৭টি ফ্যাক্টরীর কর্মী সঙ্কটের চিত্র তুলে ধরে বলেন, অভিবাসী কর্মীর অভাবে বিদেশী ক্রেতার কাছে যথাসময়ে উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী সরবরাহ করতে পারছেন না। এতে উল্লেখিত ফ্যাক্টরীগুলো বৈদেশিক মূদ্রা অর্জনে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কুয়ালালামপুর থেকে ইয়াম্বু ট্রেডের ওভারসীজ নির্বাহী দেলোয়ার হোসাইন বলেন, মালয়েশিয়ার বিভিন্ন সেক্টরে অভিবাসী কর্মীর অভাবে হাহাকার চলছে। তিনি বলেন, জনপ্রতি ১ হাজার রিংগিত বেসিকে কর্মী নিয়োগের ওয়ার্ক অর্ডার হাতে পেয়েছি। এসব কর্মীরা প্রতিদিন ৪ ঘন্টা করে ওভার টাইম করতে পারবে।
বিগত ২০১৭ সালের ১০ মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত জি-টু-জি প্লাসে দশ সিন্ডিকেট অনলাইনে নিবন্ধনের মাধ্যমে দেশটিতে দুই লক্ষাধিক কর্মী পাঠিয়েছে। বাংলাদেশের দশ সিন্ডিকেট একতরফা ও অনৈতিকভাবে ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ ওঠার পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী ড. মাহথির মোহাম্মদ গত ১ সেপ্টেম্বরের পর বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ বাতিল করেন। কিন্তু ১ সেপ্টেম্বরের আগে কাজের অনুমতি পাওয়া প্রায় ৬০ হাজার কর্মীর মালয়েশিয়া যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। অনলাইনে নিয়োগের প্রক্রিয়া বাতিল ঘোষণা করার পর থেকে বাংলাদেশি কোনো কর্মীকে আর কাজের অনুমতিপত্র দেয়নি মালয়েশিয়া।
ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতায় ২৫ সেপ্টেম্বর দুই দেশের কর্মকর্তারা পুত্রাজায়ায় জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক করেন। মন্ত্রী পর্যায়ের অনুষ্ঠিত উল্লেখিত বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নিতে দেশটির মানব সম্পদ মন্ত্রী এম কুলাসাগার সম্মত হন। বৈঠকে আটকেপড়া প্রায় ৬০ হাজার কর্মীকে মালয়েশিয়ায় নেয়ার বিষয়টিও নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া অবৈধ প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মীদের বৈধতা দেয়ার সুযোগ দেয়ার বিষয়টি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
গত ৩০ আগষ্টের আগে যেসব বাংলাদেশি কাজের অনুমতিপত্র পেয়েছে, তাদের সবাই আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সুযোগ পাবে । বাংলাদেশকে এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেছে মালয়েশিয়া কর্র্তৃপক্ষ। বাংলাদেশী হাই কমিশনার মোঃ শহিদুল ইসলাম সম্প্রতি পুত্রাজায়ায় দেশটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠকে বসলে তারা অপেক্ষমান বাংলাদেশী কর্মীদের অনলাইন ও ম্যানুয়াল প্রক্রিয়ায় নেয়ার আশ্বাস দেন। বায়রার সিনিয়র সহ-সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজ গতকাল বলেন, বায়রার সভাপতি বেনজীর আহমেদ ও বায়রার সাবেক মালয়েশিয়া স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান আলহাজ এমডি গিয়াস উদ্দিন বাবুলসহ আমরা হাই কমিশনার শহিদুল ইসলামের সাথে সম্প্রতি কুয়ালালামপুরে বৈঠকে বসেছিলাম। বৈঠকে সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সি যাতে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সুযোগ পায় সে বিষয়টি তুলে ধরেছি। হাই কমিশনার জানিয়েছেন, মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো লিখিতভাবে কর্মী নেয়ার বিষয়টি অবহিত করেনি। তবে তারা আশ্বস্ত করেছেন, অপেক্ষমান সকল কর্মীকে নেয়ার সুযোগ দিবে। আগামী ১০ অক্টোবর মালয়েশিয়ার মন্ত্রিসভায় বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার বিষয়টি চূড়ান্তভাবে অনুমোদন লাভ করতে পারে বলেও বায়রা নেতা ফিরোজ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এদিকে, ঢাকাস্থ মালয়েশিয়ান হাই কমিশন কর্তৃপক্ষ গত বুধবার থেকে অপেক্ষমান বাংলাদেশী কর্মীর পাসপোর্ট জমা নেয়া শুরু করেছে। ইস্টার্ন বে-বাংলাদেশ-এর অপেক্ষমান শতাধিক কর্মীর পাসপোর্ট বুধবার মালয়েশিয়ান হাই কমিশনে জমা হয়েছে। এছাড়া, বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সি অপেক্ষমান কর্মীদের ভিসা পাওয়ার জন্য প্রতিদিন হাই কমিশনে পাসপোর্ট জমা দিতে ভিড় জমাচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন