শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দেশের সবকিছু চলছে স্বৈরাচারের ইচ্ছানুযায়ী -মির্জা ফখরুল

খালেদা জিয়ার বক্তব্যে রাষ্ট্রদ্রোহিতার চিহ্নমাত্র ছিল না

প্রকাশের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টর : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কেউ এখন আর নিরাপদে নেই। এখন কথা বললেই ও মতামত দিলেই সেটা অপরাধ। সবকিছু চলছে স্বৈরাচারের ইচ্ছানুযায়ী। তারা যা চাইবে তাই হবে। এ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান জানান তিনি।
গতকাল জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করা হয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বেগম খালেদা জিয়া যে বক্তব্য দিয়েছেন সেখানে রাষ্ট্রদ্রোহিতার চিহ্নমাত্র ছিল না। অথচ ওই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়েই তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া যদি কারাগারের বাইরে থাকেন তাহলে সরকারের টনক নড়ে যায়, তাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ে। আর সে কারণেই তাকে রাজনীতি থেকে সরাতে চায় সরকার। আসলে এ মামলা পরিহাস ছাড়া আর কিছুই নয়।
গত ২১ ডিসেম্বর রাজধানীতে একটি আলোচনা সভায় খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘আজকে বলা হয় এত লক্ষ লোক শহীদ হয়েছেন। এটা নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে যে আসলে কত লক্ষ লোক মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন? নানা বই-কিতাবে নানা রকম তথ্য আছে।’
মির্জা ফখরুল গতকাল সোমবার বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, উনি একটা সভাতে বক্তব্য রেখেছেন। কী বক্তব্য রেখেছেন? তার বক্তব্যের মধ্যে রাষ্ট্রদ্রোহিতার চিহ্ন মাত্র নেই। বরঞ্চ তিনি বলেছেন, যে এটার একটা সঠিক হিসাব হওয়া উচিৎ। যে হিসাবটা হলে আমরা আমাদের শহীদদের প্রকৃত মর্যাদা দিতে পারব। যার ব্যাখ্যা আমি কিন্তু একটি বিবৃতি দিয়ে গোটা জাতিকে জানিয়েছি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, শুধু এই রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা নয়, চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে এর আগেও একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। অথচ একাত্তর সালে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি কারাবরণ করেছেন, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করেছেন। তিনবার প্রধানমন্ত্রী থাকাবস্থায় দেশের উন্নয়ন করেছেন। গণমানুষের জন্য কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়াউর রহমানের স্ত্রীও।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার সাফল্যের সঙ্গে গোটা দেশকে দুইভাগে বিভক্ত করে ফেলেছে। তারা গ্রাম পর্যায়েও এই বিভক্তি নিয়ে গেছেন। এখন চায়ের দোকানেও দল বিবেচনায় ক্রেতার আগমন ঘটে। গ্রাম্য সালিশেও দল বিবেচনায় বিচার হয়। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। সরকার সচেতনভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যই এটা করেছে। তবে এটা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে মোটেই সাহায্য করবে না।
আন্দোলনের বিকল্প নেই জানিয়ে সাবেক এই মন্ত্রী আরো বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও অধিকার রক্ষায় আমাদের নিজেদেরই ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এসে আমাদের সাহায্য করবে না। তাই আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এটাই এখন সবচেয়ে জরুরি।
দেশ কঠিন সময় অতিক্রম করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খানের সামরিক শাসন দেখেছি। ভয়ঙ্কর পাকিস্তানি শাসন দেখেছি। মুক্তিযুদ্ধপূর্ব সামরিক শাসন ও স্বাধীনতা যুদ্ধের ভয়াবহতাও দেখেছি। কিন্তু অতীতে মানুষ এমন দুঃসময় আর কখনো মোকাবেলা করেনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, কেউ এখন আর নিরাপদে নেই। এখন কথা বললেই ও মতামত দিলেই সেটা অপরাধ। সবকিছু চলছে স্বৈরাচারের ইচ্ছানুযায়ী। তারা যা চাইবে তাই হবে। ফলে গণতান্ত্রিক সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে। এমন অবস্থার মধ্যেই আমাদের সংগঠিত হতে হবে। জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
সরকারের উদ্দেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, কোনো অপরাধ সংগঠিত হলেই বিরোধী দলের ওপর দায় চাপানোর অপচেষ্টা হয়। জঙ্গিবাদ ইস্যুতেও আমাদের ওপর দায় চাপানো হয়। অথচ এটি মোকাবিলায় বিরোধী দলসহ সকলকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রেও জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।
দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সেমিনার হলে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সম্মেলন হয়। কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান দুদুর সভাপতিত্বে এবং সহ-দফতর সম্পাদক এস কে সাদীর সঞ্চালনায় সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- কৃষক দলের সহ-সভাপতি মেহেদী আহমেদ রুমী, এম এ তাহের, একেএম মোয়াজ্জেম হোসেন, নাজিম উদ্দিন, যুগ্ম সম্পাদক তকদীর হোসেন মো. জসীম, জামালউদ্দিন খান মিলন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি ও যাশোরের সাবেরুল হক সাবু প্রমুখ। প্রতিনিধি সম্মেলনে দেশের ৬৪ সাংগঠনিক জেলার তিন শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন