শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বৈদেশিক কর্মসংস্থান নীতি অনুমোদন

প্রকাশের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : নিরাপদ অভিবাসন, নারী কর্মীদের নিরাপদ শ্রম অভিবাসন এবং অভিবাসী শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষার বিধান রেখে ‘প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান নীতিমালা-২০১৬’-এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়।
বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, অভিবাসন নিয়ে ২০০৬ সালের নীতিটি ছিল সংক্ষিপ্ত। এটিকে আরও বেশি বিস্তারিত করা হয়েছে নতুন নীতিমালায়। এই নীতির আলোকে একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হবে। প্রয়োজন হলে নতুন আইনও করা হবে। নতুন নীতিমালাটি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ছাড়াও অর্থ, পররাষ্ট্র, বাণিজ্য, স্বরাষ্ট্র ও বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয় বাস্তবায়নের সঙ্গে থাকবে।
সচিব আরো বলেন, ছয়টি নির্দেশনা রয়েছে এই নীতিমালায়। এর মধ্যে রয়েছে- অভিবাসী ও তাদের পরিবারের সুরক্ষা, অভিবাসী কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা-কল্যাণ নিশ্চিতকরণ, নারী কর্মীদের শ্রম অভিবাসন, জাতীয় উন্নয়নের সঙ্গে অভিবাসনকে সম্পৃক্তকরণ ও শ্রম অভিবাসনের সুষ্ঠু পরিকল্পনা।
তিনি আরো বলেন, এ নীতি অনুসরণ করে বিধিমালা প্রণয়ন করা যাবে। নীতিতে মানবপাচার কিংবা চোরাচালান রোধে গাইডলাইন দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অভিবাসনের ক্ষেত্রে মানবপাচার ও চোরাচালানরোধে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় দেখভাল করবে।
তিনি বলেন, নীতিতে নারী কর্মীদের শ্রম অভিবাসন নামে এগারোটি অনুচ্ছেদ রয়েছে। এর মধ্যে নারী কর্মীদের শ্রম অভিবাসন গৃহিত সম্ভাবনা, অভিবাসন প্রক্রিয়ায় নারী অংশগ্রহণ জোরদার করার প্রয়োজনীয় অভিবাসনে নারীর সরকারি-বেসরকারি সংস্থার ট্রেড ইউনিয়ন, নিয়োগদাতার কার্যক্রমসহ নানা বিষয় উল্লেখ রয়েছে। নারী কর্মীদের শ্রম অভিবাসন নিয়ে নীতিতে আলাদা একটি অধ্যায় রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ বিষয়ে সরকারকে সমন্বিত কার্যক্রম নিতে বলা হয়েছে।
দুই চুক্তি অনুমোদন
বাংলাদেশ ও তুরস্কের মিলিটারি মেডিকেল সার্ভিসের মধ্যে সহযোগিতা প্রটোকল স্বাক্ষরের একটি খসড়ায়ও অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, দুই দেশের সামরিক চিকিৎসা অধিদপ্তর একে অপরকে চিকিৎসা বিষয়ক প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা করবে। বাংলাদেশের সামরিক ব্যক্তিরা তুরস্কে প্রশিক্ষণ নিয়ে সেই জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দেশে প্রয়োগ করতে পারবেন। উভয় দেশের সম্মতিতে পাঁচ বছর পরপর এই চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো যাবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
স্থল বন্দরগুলোর সঙ্গে কানেকটিভিটি তৈরিতে ‘ইন্টার গভর্নমেন্টাল এগ্রিমেন্ট অফ ড্রাই পোর্ট’ চুক্তি অনুসমর্থনের প্রস্তাবও অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বাংলাদেশসহ ১৭টি দেশ এই চুক্তিতে সই করেছে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, বাংলাদেশ আগেই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে, এখন আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতেই মন্ত্রিসভার অনুমোদন নেয়া হল। বাণিজ্য বৃদ্ধি ও পণ্য সরবরাহ নির্বিঘœ করতে বাংলাদেশ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে বলে জানান তিনি।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার তৈরি করতে বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন। বৈঠকে উপস্থিত দু’জন মন্ত্রীর সঙ্গে এ তথ্য জানান।
বৈঠকে উপস্থিত দু’জন মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের কূটনীতিকদের শুধু কূটনেতিক বিষয় নিয়ে ভাবলে চলবে না। তাদের বাংলাদেশি পণ্যের বাজার তৈরির প্রচেষ্টা চালাতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, বাংলাদেশের পণ্যকে আন্তর্জাতিক বাজারে তুলে ধরতে হবে। বিদেশে কীভাবে দেশীয় পণ্যের বাজার তৈরি করা যায়, সে ব্যবস্থা করতে হবে। কোন্ দেশে কোন্ পণ্যের চাহিদা আছে, কোন পণ্য কোন দেশের বাজারে চাহিদা রয়েছেÑ সে বিষয়গুলোও খুঁজে বের করতে হবে।
পররাষ্ট্রনীতি অনুযায়ী ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’ এ নীতির ভিত্তিতে দেশি পণ্য বিদেশি বাজারে তুলে ধরার নির্দেশনা দেয়া হয়।
মন্ত্রিসভা বৈঠকের পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস উপলক্ষে ১০ টাকা মূল্যমানের স্মারক ডাকটিকেট, একই মূল্যমানের উদ্বোধনী খাম এবং পাঁচ টাকা মূল্যমানের ডাটা কার্ড অবমুক্ত করেন। এজন্য একটি বিশেষ সিলমোহরও ব্যবহার করা হয়।
জন্মদিনে মন্ত্রিসভায় শুভেচ্ছাসিক্ত মুহিত
মন্ত্রিসভার বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে তার ৮৩তম জন্মদিন উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানানো হয়। জন্মদিনের প্রসঙ্গটি প্রথমে তোলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। এরপর প্রধানমন্ত্রীসহ অন্য মন্ত্রীরা অর্থমন্ত্রীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে তার দীর্ঘায়ু কামনা করেন। বয়সের অংক দুটো উল্টে দিয়ে একজন মন্ত্রী বলেন, তার যে অবস্থা তাতে বয়স ৮৩ না বলে ৩৮ বছর বলাই ভালো। অনেকেই তার এ কথায় সহাস্যে সায় দেন। বৈঠকে উপস্থিত একজন প্রতিমন্ত্রী জানান, শুভেচ্ছাসিক্ত অর্থমন্ত্রীর মুখে এ সময় ছিল স্মীত হাসি। তবে তিনি নিজে কোনো কথা বলেননি।
একজন সিনিয়র মন্ত্রী রসিকতা করে অর্থমন্ত্রীকে বলেন, জন্মদিনের খাবার কই? এ সময় আরও কয়েকজন এই রসিকতায় যোগ দেন। বৈঠক শেষে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন অর্থমন্ত্রীকে তার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি কেক পাঠান অর্থমন্ত্রীকে।
উন্নয়ন অগ্রগতিতে সউদী সহযোগিতা করুন
দেশের উন্নয়ন অগ্রগতিতে সউদী আরবের সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত এবং সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এই লক্ষ্য অর্জনে আমাদের ভ্রাতৃপ্রতীম দেশগুলোর কাছ থেকে আরো বেশি সহযোগিতা প্রয়োজন। সাত সদস্যের একটি সউদী প্রতিনিধি দল গতকাল সোমবার বিকেলে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তাদের প্রতি এই আহ্বান জানান। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন সেদেশের জেনারেল ইনটেলিজেন্স প্রেসিডেন্সির পরিচালক খালিদ বিন আলী আল হুমায়দান। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহ্সানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
প্রধানমন্ত্রী সউদী আরবকে বাংলাদেশের ভ্রাতৃপ্রতীম দেশ হিসেবে উল্লেখ করে দু’দেশের মধ্যকার বিরাজমান সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এবং সৌদি আরবের মধ্যকার সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার।
শেখ হাসিনা সউদী আরবে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশী শ্রমিকের অবস্থানের কথা উল্লেখ করে বলেন, তারা দু’দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে মূল্যবান অবদান রাখছে।প্রধানমন্ত্রী প্রতিনিধিদলের মাধ্যমে দুটি পবিত্র মসজিদের তত্ত্বাবধায়ক এবং সউদী বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজকে তার শুভেচ্ছা জানান।
সউদী প্রতিনিধিদলের নেতা খালিদ বিন আলী আল হুমায়দান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিতে অভূতপূর্ব সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী সউদী আরবে কাজ করছেন এবং তারা কঠোর পরিশ্রম করছেন। তিনি সউদী আরব এবং বাংলাদেশকে ভ্রাতৃপ্রতীম দেশ হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো বৃদ্ধির ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, মুসলমান হিসেবে আমরা এই অঞ্চল রক্ষা করব। বৈঠকে হুমায়দান সউদী বাদশাহ এবং যুবরাজের আন্তরিক শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীকে পৌঁছে দেন।এ সময় প্রধানমন্ত্রীর অফিসের সচিব সুরাইয়া বেগম, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত সউদী রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ এইচএম আল মুতাইরি উপস্থিত ছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন