বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

এনজিও কিস্তির চাপে দিশেহারা মানুষ

সেবা যখন বোঝা

মোঃ নুরুল ইসলাম, বেতাগী উপজেলা থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৪ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

বিষখালী নদীর অব্যাহত ভাঙনসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দূর্যোগে নিম্ন আয়ের মানুষের এমনিতেই চুলো জ্বলছে না। এর ওপর বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ও সমিতি থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি শোধের চাপে দিশেহারা বেতাগী উপজেলার মানুষগুলো। ইতোমধ্যেই অনেকে ভিটে বাড়ি বিক্রি করে নিঃস্ব হচ্ছেন। এনজিও কর্মী অথবা সমিতির লোকজন বাড়িতে গিয়ে কিস্তি শোধের চাপ দেয়ায়, ভয়ে পালিয়ে ফিরছেন অনেক অভাবী মানুষ।

জানা গেছে, এনজিওর ঋণে জর্জরিত উপজেলার প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ। বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী বিষখালী নদীর তীর ঘেষে গড়ে ওঠা বেতাগী পৌরসভাসহ উপজেলার ৭ ইউনিয়নের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯৪ হাজার মানুষ কর্মদক্ষ। নদীর অব্যাহত ভাঙনে শত শত পরিবার নিঃস্ব হওয়ায় পাচ্ছেন না ব্যাংক ঋণ। ফলে বাধ্য হয়ে জীবন বাঁচানোর তাগিদে গ্রহণ করছেন অধিক সুদে এনজিওর ঋণ। এ উপজেলায় ছোট-বড় এনজিওসহ বিভিন্ন সমিতির নামে ঋণ ব্যবসা করছে প্রায় অর্ধশতাধিক সংস্থা।

উপজেলা ব্র্যাক অফিস সূত্রে জানা যায়, ব্র্যাক বেতাগী ও মোকামিয়া শাখায় ৩১টি সমিতির বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ১৩ হাজার ৩৪২ জন মানুষ ঋণ নিয়েছে দুই কোটি ৩১ লাখ ৩৫ হাজার ৭৫৬ টাকা। হোসনাবাদ শাখা থেকে ১১ টি সমিতির মাধ্যমে ১ হাজার ৪৩৬ জন মানুষ ঋণ নিয়েছে ৯৬ লাখ ৬৫ হাজার ৯০০ টাকা। যুব উন্নয়ন থেকে ৭৭২ জন গ্রাহক ঋণ নিয়েছে প্রায় ২ কোটি ১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। সোসাইটি ফর সোস্যাল সার্ভিসের মাধ্যমে ১ হাজার ৪৩৪ জন লোক ঋণ নিয়েছে ৬৬ লাখ ২৫ হাজার ৮২৫ টাকা। গ্রামীণ ব্যাংকের কাছ থেকে ১ হাজার ৬৪৫ জনে ঋণ নিয়েছে ৭ কোটি ৪৩ লাখ ৩৯ হাজার টাকা।এ ছাড়াও আশা, পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশন, উন্নয়ন সংঘ, মানবিক উন্নয়ন সংস্থা (পদক্ষেপ), সংগ্রাম,সংকল্প ট্রাস্ট, আর ডি এফ, জাগোনারী সংগঠন, আমেনা ফাউন্ডেশন, ছোট-বড় অর্ধশত এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছে প্রায় এক লক্ষ মানুষ, যার ঋণের পরিমাণ ২৫ কোটি টাকা। গ্রামীণ ব্যাংকের মাঠ কর্মী নাজমুল আহসান জানান, ‘আমরা সংস্থার নিয়মানুসারে গ্রাহকদের ঋণ বিতরণ ও আদায় করে থাকি এবং কেউ যথারীতি পরিশোধ না করলে সংস্থার নিয়মানুসারে কর্তৃপক্ষ ব্যাবস্থা নিয়ে থাকেন।’

পৌরসভাসহ বিবিচিনি, বেতাগী সদর ইউনিয়ন, মোকামিয়া ও সরিষামুড়ি ৪টি ইউনিয়ন সরেজমিন ঘুরে ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন সকাল হলেই ঋণের টাকার কিস্তির জন্য হাজির হয় এনজিও কর্মীরা। তাদের দেখলেই চমকে ওঠেন নদীভাঙন ও বন্যাকবলিত এলাকার দরিদ্র মানুষ। বিভিন্ন এনজিওর ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে নদীভাঙন ও বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ এখন দিশেহারা। অনেক পরিবার একাধিক এনজিওর ঋণে জর্জরিত। একটির কিস্তি পরিশোধ করতে না করতেই অন্যটির টাকা জোগাড় করতে হয়। ফলে ঋণ গ্রহীতাদের দাদন ব্যবসায়ীর দ্বারস্থ হতে হয়। মহাজনদের কাছ থেকে উচ্চহারে সুদ বা কমমূল্যে আগাম ফসল বিক্রি করে টাকা নিয়ে এনজিওর কিস্তি দিতে হয়। এমনিভাবে তাদের ঋণের বোঝা দিন দিন বেড়ে চলছে। এক ঋণ থেকে বাঁচতে অন্য ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েছে তারা। ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে গৃহবধূর স্বর্ণালঙ্কার, হালের পশু , ছাগল ও হাঁস-মুরগি বিক্রি করেও পার পাচ্ছে না অনেক পরিবার। শেষ সম্বল বাপ-দাদার বসতভিটাও বিক্রি করেছেন অনেকে।

পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা বিমল চন্দ্র পরামানিক ঋণের টাকা পরিশোধ না করতে পারায় শেষ পর্যন্ত নিজের বাড়ির ভিটে মাটি বিক্রি করে ঋণের ধার দেনা শোধ করলেন। ঋণের টাকা যথারীতি পরিশোধ না করায় অনেকে জড়িয়ে পড়ছেন মামলায়। বন্যা বা কোন ধরনের প্রাকৃতিক দূর্যোগেও ছাড় দেয় না এনজিও গুলো ঋণের কিস্তি সংগ্রহ করতে। এনজিওগুলোর ঋণে বন্দী হয়ে উপজেলার ভূমিহীন এসকল মানুষদের উন্নতির বদলে দ্রæত অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছেন। এনজিওর ঋণের চাপে সমবায় সমিতি ও দাদন ব্যবসায়ীদের ব্যবসাও এখন জমজমাট। অন্যদিকে ব্যাংকগুলোর কৃষিঋণ বিতরণে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা থাকলেও নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কারণে প্রকৃত কৃষকেরা ঋণ পান না বলে অভিযোগ রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন