সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আজ বোধন। বোধন অর্থ জাগরণ বা চৈতন্যপ্রাপ্ত। দুর্গা পূজার প্রাক্কালে এই বোধনের মাধ্যমে দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দেবী দুর্গার নিদ্রা ভাঙার জন্য বন্দনা পূজা করা হয়। মন্ডপে-মন্দিরে আজ রোববার পঞ্চমীতে সায়ংকালে তথা সল্পব্দ্যায় এই বন্দনা পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
বোধন দুর্গাপূজার অন্যতম একটি আচার। পূজা শুরুর আগে সল্পব্দ্যায় বেলশাখায় দেবীর বোধন দুর্গাপূজার একটি অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গ। শরৎকালের দুর্গাপূজায় এই বোধন করার বিধান রয়েছে। বিভিন্ন পূরাণ অনুসারে ভগবান রামচন্দ্র শরৎকালে রাক্ষসরাজ রাবণকে বধ করার উদ্দেশ্যে দুর্গাপূজা করেন। তিনি অকালে এই বোধন করেন বলেই এটি অকালবোধন নামে খ্যাত। তবে বসন্তকালে চৈত্র মাসে যে দুর্গাপূজা তথা বাসন্তীপূজা অনুষ্ঠিত হয় তাতে বোধন করার প্রয়োজন হয় না।
দুর্গা পূজার আজ বোধন। আগামীকাল সোমবার ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গা পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। শেষ হবে ১৯ অক্টোবর শুক্রবার প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে।
এদিকে এবারের দুর্গাপূজায় বিজয়া দশমী শুক্রবার হওয়ায় ওইদিন বেলা ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত শোভাযাত্রা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গতকার শনিবার দুপুরে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন-বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত, সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জী, মনীন্দ্র কুমার নাথ, অ্যাডভোকেট তাপস কুমার পাল, বিপ্লব দে, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি শৈলেন্দ্র নাথ মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক কিশোর রঞ্জন মন্ডল প্রমুখ।
সভায় জানানো হয়, এবার দুর্গাপূজায় সারাদেশে ৩১ হাজার ২৭২টি পূজামন্ডপে পূজা উদযাপিত হবে। গত বছর পূজামন্ডপের সংখ্যা ছিল ৩০ হাজার ৭৭টি। এবার বৃদ্ধি পেয়েছে ১ হাজার ১৯৫টি। এরমধ্যে ঢাকায় ৬ হাজার ৮০৪টি, চট্টগ্রামে ৪ হাজার ৫০৬টি, সিলেটে ২ হাজার ৩৪১টি, খুলনায় ৪ হাজার ৮৮৩টি, রাজশাহীতে ৩ হাজার ৫৪২টি, রংপুরে ৫ হাজার ৩৭১টি, বরিশালে ১ হাজার ৭২৪টি ও ময়নসিংহে ২ হাজার ১০১টি। একমাত্র সিলেট বিভাগ ছাড়া বাকি সাতটি বিভাগেই পূজামন্ডপের সংখ্যা বেড়েছে।
সভায় বক্তারা বলেন, গত সোমবার শুভ মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবীপক্ষের শুভ সূচনা হয়েছে। এরসঙ্গে শারদোৎসবের আমেজও ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। দেবীপক্ষের সূচনালগ্নেই ঘোষিত হয়েছে আনন্দময়ীর আগমনী বার্তা। বাঙালি জীবনে ধর্মাচরণ স্ব স্ব সম্প্রদায়ের হলেও এর উৎসবের ব্যাপ্তি সার্বজনীন। বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধারায় শারদীয় দুর্গোৎসব কেবল হিন্দু সম্প্রদায়ের নয়, এটি বাংলাদেশের মানুষের। যেমনটি ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা, ঈদে মিলাদুন্নবী, বৌদ্ধপূর্ণিমা ও বড়দিন। ঐতিহ্যের এই উৎসবগুলো ধর্ম নির্বিশেষে পারস্পরিক স¤প্রীতির বন্ধনকে গভীর থেকে গভীরতর করে। পূজার মাধ্যমে এই ধারাকেই প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
তারা বলেন, আগামী শুক্রবার বিজয়া দশমী। প্রতি বছরের মতো এবারও যথানিয়মে বিজয়া দশমীর দিন প্রতিমা নিরঞ্জনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। যেহেতু শুক্রবার জুম্মার দিন তাই ওইদিন দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত শোভাযাত্রা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে রাত ১০টার মধ্যে নিরঞ্জন সম্পন্ন করার জন্য সব অঙ্গ সংগঠনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন