শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ডেঙ্গু রোগীর রেকর্ড

চলতি বছর এ পর্যন্ত ৭ হাজার ২৬৭ নারী পুরুষ ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ১৪ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

চলতি বছর শেষ হতে এখনও আড়াই মাসেরও বেশি সময় বাকি। ইতোমধ্যে দেশ এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর পরিসংখ্যানে সর্বোচ্চ রেকর্ড ছুঁয়েছে। গতকাল শনিবার পর্যন্ত সাত সহস্রাধিক (৭ হাজার ২৬৭) নারী, পুরুষ ও শিশু ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার নতুন রেকর্ড হয়েছে। এর আগে ২০০২ সালে সর্বোচ্চ ৬ হাজার ২৩২ জনের আক্রান্ত হওয়ার রেকর্ড ছিল। তবে ডেঙ্গুজনিত মৃতের সংখ্যায় এখনও ২০০০ সালের ৯৩ জনের মৃত্যুর রেকর্ডই সর্বাধিক। চলতি মৌসুমে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। যদিও এই তথ্য পুরোরাজধানীর চিত্র নয়। কারণ এই তথ্য শুধুমাত্র রাজধানীর ১৩টি সরকারি হাসপাতাল এবং ৩৬টি বেসরকারি হাসপাতালের। এছাড়া ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে অনেক রোগী হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শে বাসায় রেখে চিকিৎসা করাচ্ছেন।
রাজধানীর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের তথ্য নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গোলমাল থাকলেও কয়েকমাস থেকে রাজধানীবাসীর জন্য ডেঙ্গু যেন এক আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছে। প্রতিনিয়তই রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে উদ্বেগও বাড়ছে। আর বড় দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে এবং এদের মৃত্যুঝুঁকিও অত্যন্ত বেশি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, গত ১৬ বছরের মধ্যে এবারই ডেঙ্গুর ভয়াবহতা সবচেয়ে বেশি। এর অন্যতম কারণ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুপস্থিতি।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সর্বোচ্চ রেকর্ডের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ) প্রফেসর ডা. সানিয়া তহমিনা নতুন রেকর্ডের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ২০০০ সালে ডেঙ্গু রোগ শনাক্ত করার জন্য তেমন যন্ত্রপাতি ছিল না, চিকিৎসকদের মধ্যেই রোগ কিংবা এর সুচিকিৎসা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা ও জ্ঞান ছিল না। তাছাড়া মানুষের মধ্যেও রোগ শনাক্তকরণের ব্যাপারে তেমন সচেতনতা ছিল না। কিন্তু বর্তমানে সবার মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে পরিসংখ্যান অনুসারে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যার নতুন রেকর্ড হয়েছে। তবে আগের তুলনায় মৃতের সংখ্যা কমেছে।
তিনি বলেন, জুন-জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু মৌসুম। এ হিসেবে চলতি মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে আসবে। তবে এখন সারা বছরই ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে।
ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসার বিষয়ে নতুন গাইডলাইন প্রণয়ন, ডেঙ্গু রোগীর ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট তথা আধুনিক চিকিৎসা সম্পর্কে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। রাজধানীর বড় সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুম থেকে ডা. কামরুল হাসান গতকাল ইনকিলাবকে জানান, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত (১৩ অক্টোবর) হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন ৭ হাজার ২৬৭ জন, মারা গেছে ১৭ জন। তাদের মধ্যে ২১৬জন এখনও বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গত ২৪ ঘণ্টায় (১৩ অক্টোবর) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৪৩ জন। তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসের ১৩ দিনেই (শনিবার) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। অক্টোবরে ১ হাজার ১২ জন নারী, পুরুষ ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
সূত্র মতে, শুধুমাত্র সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় ৩ হাজার ৮১ জন। যা প্রায় গত আগষ্টের দ্বিগুন। আগস্ট মাসে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় ১ হাজার ৬৬৬ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ ডা. আয়েশা আক্তার জানান, গত জুন মাস থেকে এ রোগের প্রকোপ বাড়তে শুরু করে। ওই মাসে আক্রান্ত হয় ২৭৬ জন। যার মধ্যে ৩ জনের মৃত্যু ঘটে। জুলাই মাসে আক্রান্ত হন ৮৮৭ জন এবং মৃত্যু হয় ৪ জনের, আগষ্ট মাসে আক্রান্ত হন ১ হাজার ৬৬৬ জন এবং মৃত্যু হয় ৪ জনের। সর্বশেষ সেপ্টেম্বর এবং এ মাস মিলিয়ে এ পর্যন্ত ৬ জনের মৃত্যু ঘটেছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, এক দশক পরপর ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ে। ২০০০ থেকে ২০০২ সাল- এই তিন বছরে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ছিল সর্বাধিক। ২০০৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা এবং এর ফলে মৃতের সংখ্যা ছিল তুলনামূলক কম। এরপর ২০১৫ সাল থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে থাকে। গত চার বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন