বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আজ থেকে দুর্গাপূজা শুরু

১৫২টি পূজামন্ডপে ডিএসসিসি’র অনুদান নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই : ডিএমপি কমিশনার

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৫ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০১ এএম

আজ থেকে শুরু হচ্ছে পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গাপূজা। ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে সূচনা ঘটছে এই পূজার। ১৯ অক্টোবর শুক্রবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে এর শেষ হবে। হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় এ উৎসবকে ঘিরে সারাদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে এখন উৎসবের আমেজ বইছে।
এদিকে গতকাল রোববার নগর ভবনে আয়োজিত পূজামন্ডপের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা ও অনুদানের চেক হস্তান্তরের এক অনুষ্ঠানে রাজধানীর ১৫২টি পূজামন্ডপের প্রতিনিধিদের হাতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে অনুদানের চেক তুলে দিয়েছেন ডিএসসিসি’র মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন।
এসময় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পুজামন্ডপ কমিটির সদস্যদের দাবির আলোকে শারদীয় দুর্গোৎসবকে সামনে রেখে পূজামন্ডপগুলোর আশপাশে জমে থাকা আবর্জনা দু’দিনের মধ্যে অপসারণের ঘোষণাও দিয়েছেন দক্ষিণ সিটির মেয়র সাঈদ খোকন। গতকাল রোববার সারাদেশের পূজামন্ডপগুলোতে দুর্গা দেবীর বোধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুর্গাপূজার প্রাক্কালে এই বোধনের মাধ্যমে দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দেবী দুর্গার নিদ্রা ভাঙার জন্য বন্দনা পূজা করা হয়। মন্ডপে-মন্দিরে পঞ্চমীতে সায়ংকালে তথা সল্পব্দ্যায় এই বন্দনা পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
সনাতন বিশ্বাস ও পঞ্জিকামতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার ঘোটকে (ঘোড়া) চড়ে মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) আসবেন (আগমন)। যার ফল হচ্ছে ফসল ও শস্যহানি। দেবী মর্ত্যলোক থেকে বিদায় নেবেন (গমন) দোলায় (পালকি) চড়ে। যার ফল হচ্ছে মড়ক। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোগ ও মহামারীর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাবে। এবার সারাদেশে ৩১ হাজার ২৭২টি পূজামন্ডপে দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে। যা গতবারের তুলনায় ১৯৫টি বেশি। আর ঢাকা মহানগরীর এবারের পূজামন্ডপের সংখ্যা ২৩৪টি, যা গত বছরের তুলনায় ৪টি বেশি। দুর্গাপূজার প্রথম দিনে আজ ষষ্ঠীতে দশভূজা দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাস। ষষ্ঠীতিথিতে সকাল ৯টা ২৫ মিনিটের মধ্যে দেবীর ষষ্ঠ্যাদি। সায়ংকালে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হবে মূল পূজা। আগামীকাল মঙ্গলবার মহাসপ্তমী, বুধবার মহাষ্টমী ও কুমারী পূজা, বৃহস্পতিবার মহানবমী এবং শুক্রবার বিজয়া দশমী। শেষ দিনে প্রতিমা বিসর্জন ও বিজয়ার শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।
ডিএসসিসি’র নগর ভবনে মতবিনিময় সভা ও অনুদানের চেক হস্তান্তরের অনুষ্ঠানে মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল। তাই দুর্গাপূজার উৎসব নিয়ে আতঙ্ক বা উদ্বেগের কিছু নেই। তবে নগরবাসীকে আহ্বান জানাবো, এমন কোনো মন্তব্য করবেন না, যা মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে, উদ্বেগের আশঙ্কা জাগায়।
সভায় ওয়ারি থানা পূজা উদযাপন কমিটির সদস্য বাপ্পী রায় অভিযোগ করে বলেন, আমাদের এখানে পূজামন্ডপের পাশে ময়লার কন্টিনার রাখা আছে। এ ছাড়া পাশে ময়লা আবর্জনার স্তূপ রয়েছে। কোতোয়ালি থানা পূজা উদযাপন কমিটির সদস্যরা জানান, ৫ নম্বর গলিতে সব সময় আবর্জনা থাকে, যেখানে পূজামন্ডপ রয়েছে। সূত্রাপুর থানা পূজা উদযাপন কমিটির নেতারা বলেন, রাজধানীর সবচেয়ে বেশি পূজামন্ডপ এ এলাকায়। এখানে ২৭টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। যার অনেকগুলোর আশপাশে ময়লা-আবর্জনার কন্টিনার, ময়লার স্তূপও রয়েছে। যা পূজার আগে অপসারণ করলে পূজা উদযাপনে আর কোনো সমস্যা থাকে না।
এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, আগামী দুইদিনের মধ্যেই এসব ময়লা অবসারণ ও পরিস্কার করা হবে। এছাড়া আরও যেসব সমস্যা রয়েছে আপনার জানিয়ে দিন, আমরা সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তা সমাধানের ব্যবস্থা নেব।
মেয়র বলেন, ধর্ম নিরপেক্ষতার চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশ এগিয়ে চলছে। তবে অনেকেই এর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে। অবশ্য তা নতুন কোনো বিষয় নয়। বহু বছর আগে থেকে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে তাদের নিজস্ব চিন্তা চেতনা, নিজস্ব ভাবনা প্রতিফলন করে এসেছে। এতে বিভিন্ন সময় প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, সত্যিকার অর্থে মানুষ যদি তার ধর্মের মাধ্যমে পরিচালিত হয় তাহলে এগুলো হওয়ার কথা নয়। যারা ধর্মকে নিজের মনের মতো করে পরিচালনা করতে চায় তারাই এগুলো সৃষ্টি করে। আমরা চাই যে চেতনায় দেশ স্বাধীন হয়েছে সেই চেতনায় এগিয়ে চলবে।
এদিকে দুর্গাপূজা উপলক্ষে কোনো ধরনের শঙ্কা কিংবা নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই উল্লেখ করে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, পূজাকে কেন্দ্র করে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। গতকাল রোববার দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ডিএমপি কমিশনার আরো বলেন, ঢাকা মহানগরীতে এবার ২৩৪টি মন্ডপে সার্বজনীন দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে বড় মন্দির ৯টি। প্রত্যেকটি মন্দির সিসিটিভি দ্বারা মনিটরিং করা হবে। প্রবেশকালে আর্চওয়ের ভেতর দিয়ে ভক্ত ও দর্শকদের প্রবেশ করতে হবে। পোশাকে পুলিশ, নারী পুলিশ ও সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। স্বেচ্ছাসেবকরা আর্মব্যাচ পরিহিত আলাদা পোশাকে নিয়োজিত থাকবেন। প্রত্যেক দর্শনার্থী ও ভক্তকে নিরাপত্তা বলয়, তল্লাশি ও মেটাল ডিটেকক্টর দিয়ে চেক করার পর প্রবেশ করতে হবে।
তিনি বলেন, ঢাকেশ্বরীর বাইরের প্রত্যেকটি মন্দিরেই সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে। ফায়ার টেন্ডার থাকবে। অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা থাকবে। পুরো পূজা উৎসব ঘিরে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে অস্থায়ী পুলিশ কন্ট্রোল রুম বসানো হয়েছে। যেখান থেকে সার্বক্ষণিক ডিউটিতে থেকে পূজা কমিটির নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা বিধান করা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন