দক্ষিণাঞ্চলের সরকারি টেলিফোনে আস্থা হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ। গ্রাহক সেবার মান ঠেকেছে তলানিতে। তার সাথে যোগ হয়েছে অতিরিক্ত মাসুল। ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি জেলায় রাষ্ট্রীয় টেলিযোগাযোগ কোম্পানী বিটিসিএল-এর বর্তমান অবস্থা নড়বড়ে। রাজস্ব আয়েও নেমেছে ধ্বস।
জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি জেলায় প্রায় ৬৭ হাজার সংযোগ ক্ষমতার এক্সচেঞ্জগুলো থেকে বর্তমানে গ্রাহক সংখ্যা কাগজেপত্রে ২৩ হাজারের কাছাকাছি হলেও বাস্তবে বিশ হাজার টেলিফোনও সচল নেই। এখনো মূল সুইচ রুমের এমডিএফ থেকে ভূগর্ভস্থ প্রাইমারি কেবলের সাহায্যে কেবিনেট হয়ে সেকেন্ডারি কেবল-এর মাধ্যমে ডিপি থেকে গ্রাহকের কাছে টেলিফোন সংযোগ দিচ্ছে বিটিসিএল। আর জরাজীর্ণ এসব সরঞ্জামাদির যেকোন একটি স্থানে গোলযোগ হলেই টেলিফোন বিকল। আর একবার টেলিফোন বিকল হলে তা সচল হওয়াও অত্যন্ত ভাগ্যের ব্যাপার।
সূত্র জানায়, বরিশাল বিভাগীয় সদরে ৩টি টেলিফোন এক্সচেঞ্জে প্রায় ১৪ হাজার সংযোগ ক্ষমতা থাকলেও বর্তমানে কাগজেপত্রে গ্রাহক সংখ্যা ৬ হাজারের মত। বাস্তবে সচল ফোনের সংখ্যা আরো কম। মহানগরীর ৬ দিয়ে শুরু চীনা টেলিফোন এক্সচেঞ্জটির ব্যাটারির আয়ুস্কাল শেষ হয়েছে আরো তিন বছর আগে। এখন বিদ্যুৎ সরবারহ বন্ধ হবার সাথেই গোটা এক্সচেঞ্জটিই বন্ধ হয়ে যায়। ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে স্ট্যান্ডবাই জেনারেটর চালু হলেও আর চালু হচ্ছে না। ফলে প্রতিদিনই এ নগরীর কয়েক হাজার টেলিফোন ঘন্টার পর ঘন্টা বন্ধ থাকছে। অথচ ৬ দিয়ে শুরু এ এক্সেচেঞ্জটির ওপরই কোতয়ালী থানা, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, দমকল ও নৌ দমকলসহ অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি পরিষেবার টেলিফোন সংযোগ রয়েছে। স্থানীয় পর্যায় থেকে গত কয়েক মাস ধরেই এ এক্সচেঞ্জটির ব্যাটারী পরিবর্তনের জন্য সদর দফতরে লেখালেখি চললেও এখনো ইতিবাচক ফল মেলেনি।
এদিকে, মহানগরীর প্রায় ১৪ হাজার টেলিফোনের ভূগর্ভস্থ প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি ক্যাবলগুলোর অবস্থাও অত্যন্ত সঙ্কটাপন্ন। সিটি করপোরেশন রাস্তা প্রশস্ত করায় দীর্ঘদিনের পুরনো এসব ক্যাবলের বেশীরভাগই এখন আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে জোড়াতালি দিয়েও এখন টেলিফোন সচল রাখা দুরুহ হয়ে পড়ছে। এরিয়াল কেবল ও ড্রপ ওয়্যার টেনে সাময়িকভাবে অনেক গ্রাহকের টেলিফোন সচল রাখার চেষ্টা করা হলেও তা টেকসই হচ্ছে না। ফলে বিরক্ত হয়ে অনেকেই এখন সরকারি ল্যান্ডলাইনের টেলিফোন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। গত পাঁচ বছরে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ১৫ হাজার টেলিফোন সমর্পণ করেছেন গ্রাহকরা। এর বাইরেও আরো অন্তত পাঁচ হাজার ফোন বছরের পর বছর ধরে অচল হয়ে পড়ে আছে। যা সচল করারও কোন উদ্যোগ নেই বিটিসিএল-এর। আর ঐসব ফোনের যে লাইনরেন্ট-এর বিল করা হচ্ছে তাও আদায় হচ্ছে না।
তবে নিয়মনুযায়ী বিটিসিএল-এর টেলিফোন ব্যবহার না করলে বা বিকল থাকলেও গ্রাহকদের ১২০টাকা লাইন রেন্ট-এর সাথে ১৫% ভ্যাট সহ প্রতিমাসে ১৩৮ টাকা গুনতে হবে। অপরদিকে বিটিসিএল থেকে যেকোন মোবাইল অপারেটরে কলচার্জ ভ্যাট সহ প্রায় ১ টাকা। তবে তা আবার প্রতি মিনিটে পালস। যা দেশের অন্যসব সেলফোন অপারেটরের কল চার্জের চেয়েও বেশি। ফলে সংযোগ ফি হ্রাস করেও নুতন গ্রাহক সংগ্রহসহ পুরনোদের ধরে রাখতে পারছে না বিটিসিএল। ক্রমশ গ্রাহক হারাচ্ছে ।
বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি জেলায় প্রতি মাসে প্রায় সোয়া ৪ কোটি টাকার টেলিফোন বিল জারি হচ্ছে। আদায় হয় সাড়ে ৩ কোটি টাকার মত। কিন্তু প্রশাসনিক ব্যয় ৫ কোটি টাকার ওপরে। এর বাইরে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ও রয়েছে। ফলে প্রতিমাসেই লোকশানের বোঝা ক্রমশ ভারি হচ্ছে রাষ্ট্রীয় এ টেলিযোগাযোগ কোম্পানীটির।
কিন্তু তা থেকে উত্তরণের কোন উদ্যোগ নেই। গ্রাহকদের তরফ থেকে দীর্ঘদিন ধরেই ‘ওয়ারলেস টেলিফোন’ ব্যবস্থা চালু করার দাবী করা হলেও তার পরিবর্তে অপটিক্যাল ফাইবার নির্ভর বহুমুখী টেলিফোন ব্যবস্থা চালু করার একটি উচ্চাভিলাসী প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে বিটিসিএল।
এসব বিষয়ে টেলিযোগাযোগ দক্ষিণাঞ্চলের সিজিএম-এর সাথে আলাপ করা হলে তিনি সেবার মান উন্নয়নসহ নতুন প্রযুক্তির টেলিফোন সংযোগের পরে পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সেবার মান উন্নয়নের কথাও বলেন তিনি। তবে কল চার্জ কমানোর বিষয়টি সরকারি সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল বলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন