সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে
তীব্র গরমে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে কুমিল্লার জনজীবন। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। বেড়েই চলছে তাপমাত্রা। বৃষ্টিও হচ্ছে না। ঘরে বাইরে কোথাও স্বস্তিতে থাকতে পারছে না মানুষ। তীব্র তাপদাহ কুমিল্লার জনজীবনে দুর্ভোগ বয়ে দিচ্ছে। এবারে বৈশাখের শুরুতেই অত্যধিক গরম অনুভূত হতে থাকে। যার ধারাবাহিকতা টানা ১০/১২দিন ধরে রয়েছে। গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে মৌসুমি জ্বরসহ নানা রোগব্যাধিতে। কুমিল্লার হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া ও পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত বয়স্ক ও শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রচ- গরমে হাঁপিয়ে উঠেছে কুমিল্লার সব বয়সি ও শ্রেণি-পেশার মানুষ। গত এক সপ্তাহের বেশি ধরে কুমিল্লায় ৩৮ থেকে ৪১ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করছে। তীব্র গরমে কুমিল্লার যেসব অফিসে কর্মকর্তা কর্মচারীরা কেবল সিলিং ফ্যানের হাওয়ায় কাজকর্ম সারছেন তারাও হাঁপিয়ে উঠেছেন। আবার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ থেকে বেরিয়ে অনেকেই বাইরের তাপমাত্রার সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে না পেরে অস্বস্তি বোধ করছেন। কুমিল্লা নগরীর ফুটপাতের দোকানি ও ভ্রাম্যমাণ হকাররা গরমে কাহিল। নগরীর কান্দিরপাড়ে কাজের সন্ধানে সকালে জড়ো হওয়া দিনমজুরের সংখ্যা গরমের কারণে কমে গেছে। দুপুরের আগেই নগরীতে রিকশার সংখ্যা কমে যাচ্ছে। প্রচ- গরমে রিকশাচালকদের বেশির ভাগই সকাল থেকে বেলা বারোটা এবং বিকেলে সূর্যের তাপ কমার পর রাত্র পর্যন্ত সময়ে রিকশা নিয়ে রাস্থায় বের হচ্ছে। কুমিল্লা নগরীর শাসনগাছা, পুলিশ লাইন, ঝাউতলা, কান্দিরপাড়, টমসনব্রিজ, মনোহরপুর, রাজগঞ্জ, গোয়ালপট্রি ও চকবাজার এলাকায় রিকশাভ্যানে পানির ফিল্টার মেশিন বসিয়ে লেবুর শরবত বিক্রি হচ্ছে। আবার এসব এলাকায় বিভিন্ন রকমের গাছগাছালির ছাল-বাকল দিয়ে বরফের ঠা-া শরবত বিক্রি হচ্ছে। গরমে ক্লান্ত পথচারিরা ৫ থেকে ১০টাকার বিনিময়ে তৃষ্ণা মেটাতে গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে। ফুটপাতে ডাব ও তরমুজের কাটা চির বিক্রিও জমে উঠেছে। নগরীর কনফেকশনারী ও ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোতে ফ্রিজে রক্ষিত বিভিন্ন কোম্পানির কোমল পানীয়, আইসক্রীম, দই ও জুসের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। ফার্মেসি ও অন্যান্য মনোহরী দোকানগুলোতে খাবার স্যালাইন দেদারছে বিক্রি হচ্ছে। প্রচ- গরমে পুকুর দিঘীর পানিতে এক ধরনের দুর্গন্ধ অনুভূত হচ্ছে। গোসলের পর অনেকের শরীরে চুলকানি হচ্ছে বলে জানা গেছে। আবার প্রচ- গরমের মাঝেও প্রতিদিন নগরী ও নগরীর বাইরের সব এলাকাতেই দুই, তিন ঘণ্টার লোডশেডিং চলছে। বাজারে চার্জার ফ্যানের চাহিদা বেড়েছে। প্রচ- গরমকে কেন্দ্র করেই এতোসব কা-। এদিকে প্রচ- গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, মৌসুমি জ্বরসহসহ পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। কুমিল্লা সদর হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ অন্যান্য প্রাইভেট হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী প্রতিদিনই কমবেশি ভর্তি হচ্ছে। এরমধ্যে বয়স্ক ও শিশু রোগীর সংখ্যাই বেশি। নগরীর শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চেম্বারে প্রচ- গরমের কারণে সর্দি কাশিসহ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়া শিশুদের নিয়ে অভিভাবকরা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছে। যেসব শিশুর অবস্থা জটিল তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন