রাজশাহী মহানগরীতে এতদিন একটিমাত্র সিনেমা হল ছিল। উপহার নামের এ সিনেমা হলটিও শেষ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেছে। সিনেমা হলের ম্যানেজার তপন কুমার দাস জানান, মালিকের নির্দেশনা অনুযায়ী গত বৃহ¯পতিবার রাত ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এ হলের শেষ শো চলে। এরপর হলটি বন্ধ হয়ে যায়। তিনি বলেন, মন্দা ব্যবসার কারণেই রাজশাহীর সিনেমা হলগুলো একের পর এক বন্ধ হয়ে গেছে। এর অংশ হিসেবেই উপহারও বন্ধ হয়েছে। উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালের সরকারি হিসাব অনুযায়ী, রাজশাহী নগরীসহ জেলায় সিনেমা হল ছিল ৫৫টি। হল বন্ধ হতে হতে উপহারসহ চালু ছিল মাত্র পাঁচটি। এর মধ্যে বন্ধ হয়ে গেল উপহার। বাকি আছে, পবার নওহাটার বাবুল, মোহরপুরের কেশরহাটের দিনান্ত, তানোরের আনন্দ ও বাগমারার মাদারিগঞ্জে অন্তরা। রাজশাহী নগরীতে সিনেমা হল ছিল পাঁচটি। নগরের এক সময় জনপ্রিয় সিনেমা হল ছিল স্মৃতি (অলকা), উৎসব, বর্ণালী, লিলি ও উপহার। এসব সিনেমা হলের নামে এখনও এলাকার মোড়গুলোর নামকরণ রয়ে গেছে। নেই শুধু সিনেমা হলগুলোই। ২০০৭ সালে শহরের সবচেয়ে পুরনো সিনেমা হল ‘স্মৃতি’ ভেঙে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ব্রিটিশ আমলে রাজশাহীর ভিক্টোরিয়া ড্রামাটিক ক্লাবের উদ্যোগে নাট্য আন্দোলন এগিয়ে নিতে নির্মিত হয়েছিল রাজা প্রমথনাথ টাউন হল। প্রতিষ্ঠা থেকে সেখানে নিয়মিত বাংলা সাহিত্য ও নাট্যচর্চা হতো। ১৯১৯ সালের ২ এপ্রিল ভিক্টোরিয়া ক্লাবের কাছ থেকে হলটি কিনে নেয় রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশন। পরে রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশনের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে অলকা সিনেমা হল নামে যাত্রা শুরু করে। নব্বইয়ের দশকে স্মৃতি সিনেমা হল নামে হলটির নামকরণ হয়। পরে ওই হল ভেঙে রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশন বহুতল ভবণ নির্মাণ করে ভাড়া দেয়া হয়েছে। নগরীর আলুপট্টির উৎসব সিনেমা হলে ২০১০ সালে ভেঙে স্বচ্ছ টাওয়ার নামে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়। নগরীর কাদিরগঞ্জ ও আমবাগানের মধ্যবর্তী এলাকায় ছিল বর্ণালী সিনেমা হল। বর্তমানে হলটি না থাকলেও শহরের ওই এলাকার নামকরণ রয়েছে বর্ণালীর মোড় নামেই। শহরের পাশেই মোল্লাপাড়ার লিলি সিনেমা হলটিও আর নেই। সেখানে করা হয়েছে মার্কেট। উপহার সিনেমা হলটি বন্ধের ঘোষণার পর থেকেই রাজশাহীর চলচ্চিত্র সংসদসহ সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো মানববন্ধন, অবস্থানসহ বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে আসছে। উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক, রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য, ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি ডা. এফ এম এ জাহিদ, রাজশাহী ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি ও চলচ্চিত্রনির্মাতা আহসান কবীর লিটন, ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটি রাজশাহীর সাধারণ স¤পাদক এবং সিনেমাটোগ্রাফার ও অভিনেতা মাহমুদ হোসেন মাসুদসহ অনেক গুণীজন বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি ড. সাজ্জাদ বকুল বলেন, বিভাগীয় একটি শহরে একটি সিনেমা হল থাকবে না, এটা একটি অশনিসংকেত। ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি ডা. এফ এম এ জাহিদ বলেন, এভাবে সব সিনেমা হল ভেঙে ফেলা হলে, নতুন প্রজন্ম সিনেমা হল আর কখনও চিনবে না, সিনেমার সঙ্গে পরিচয়ও ঘটবে না। তাই ঐতিহ্য হিসেবে হলেও বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে একটি সিনেমা হল বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এজন্য সমাজের দায়িত্ববান লোকদের এগিয়ে আসার অনুরোধ করছি। অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক এই হলে তাঁর ছবি দেখার স্মৃতিচারণ করে হলটিকে রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন