শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

স্বাধীন দেশে সরকার ছাড়া আর কেউই স্বাধীন না

‘আমার ভোট আমি দেবো, তোমার ভোটও আমি দেবো যখন খুশি তখন দেবো, দিনের ভোট রাতে দেবো’ যমুনা টিভির টক শোতে ড. সাদাত হোসেন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

স্বাধীন স্বার্বভৌম দেশে সরকার ছাড়া আর কেউ স্বাধীন নয় বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব ও সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সাবেক চেয়ারম্যান ড. সাদাত হোসেন। তিনি বলেন, গোটা বিশ্বেই এটা প্রচলিত আছে যে, ভোটারের ক্ষমতায়ন বলতে বোঝায়- আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশী তাকে দেবো। কিন্তু এখন সরকারের দল হলে বলবে আমরা ভোটারদের আরও ক্ষমতায়ন করেছি। ক্ষমতা দিয়েছি এমন যে, তারা স্লোগান দেবে আমার ভোট আমি দেবো, তোমার ভোটও আমি দেবো।
যখন খুশী তখন দেবো, দিনের ভোট রাতে দেবো। পুরা ক্ষমতায়িত হয়েছে ভোটাররা। গত সোমবার রাতে যমুনা টেলিভিশনে মীর হাসানের উপস্থাপনায় ‘নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশন’ শীর্ষক এক টকশোতে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ড. সাদাত হোসেন ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন - রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর দিলারা চৌধুরী, ডিবিসি নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে ড. সাদাত হোসেন বলেন, দলীয় সরকার রেখে ক্ষমতায় রেখে নিরপেক্ষ এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করা অলীক স্বপ্ন। দলীয় সরকার নিরপেক্ষ থাকলেও যখন তারা ক্ষমতায় থাকবে তখন নির্বাহী প্রশাসনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারবে না। সেটা যদি উপর থেকে নির্দেশ দেয়া হয়, এমনকি প্রধানমন্ত্রী রেডিও-টেলিভিশনে ঘোষণা দেন যে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে হাবে তাও সম্ভব হবে না। কারণ স্বাভাবিক প্রবণতা থাকে যে দল ক্ষমতায় থাকে সেই দলকে তারা খুশী করতে চেষ্টা করবে। তবে বদলে যাবে যদি বড় রকম কোন আন্দোলন করে প্রশাসনকে সীমানা দেয়ালের উপর বসানো যায়। সেরকম করতে পারবে কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে। যেদিন তারা সীমানা দেয়ালের ওপর উঠবে সেদিন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে।
এমনকি দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকলে কোন প্রতিষ্ঠানই সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, এখানে সরকার সামান্য বিরক্ত হয় এমন কিছু করবে না। এমনকি অন্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোও এটা করবে না। বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশন (ইসি) বা অন্য কোন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সরকারের বিরুদ্ধে গিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এমন হয় নাই। দু’একজন সদস্য এটা করে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এটি করে না। সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চাইলে ইসির সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ ও গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরী বলেন, বর্তমান ইসি ইতোমধ্যে বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। যেভাবে নিয়োগ ও গঠন হয়েছে সেটা নিয়েই বিতর্ক আছে। ইসির বক্তব্য নিয়েও বির্তক আছে এই বলছে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পারবো না আবার বলছে দিতে পারবো। এগুলো নিয়ে জনমনে ইসির সক্ষমতা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
তিনি বলেন, ইসি সরকারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। তারা সরকারের নির্দেশমত নির্বাচন করবে। এই কারণ এই ইসি তার বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে কি নির্বাচন করতে চাইবে একটা ছোট বাচ্চাও বুঝে। তারা জানে এই কমিশনের কোন সক্ষমতা নাই, ইচ্ছা নাই সুষ্ঠু নির্বাচনের এবং সরকারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠান। প্রথম থেকেই সিইসিকে (প্রধান নির্বাচন কমিশনার) যেভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কোথাকার কোন ছোট একটি দলের প্রধান স্বপ্নে দেখলে যে তাকে সিইসি বানাতে হবে। এভাবে কোন দেশে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়না। সবদলের মতামত নিয়ে যদি ইসি গঠন করতো তাহলে সকলে মেনে নিত। এটা এখানে করা হয়নি। প্রথম থেকে ইসি নিয়ে যে, প্রশ্ন ও সংশয় দেখা দিয়েছিল। তার ফল হলো মাহবুব তালুকদারের নোট অব ডিসেন্ট এবং সন্দেহ আরও ঘনিভূত হলো যে একটা দলীয় সরকারের অধীনে এই নির্বাচন কমিশন দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন পক্ষের সাথে আলোচনাকে লোক দেখানো মন্তব্য করে এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, ইসি রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যে আলোচনা করেছে সেগুলো ছিল লোক দেখানোর জন্য। কিন্তু তাদের এজেন্ডা পূর্বনির্ধারিত। রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও স্টেক হোল্ডাররা যা বলছে সেগুলো তাদের কাছে কোন বিষয় না। তারা আগে থেকে যেটা ঠিক করে রেখেছে সেটাই বাস্তবায়নের পথে যাচ্ছে। অথচ সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত ছিল আলোচনার ভিত্তিতে। প্রক্রিয়াটাকে স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু করে। সুশীল সমাজের সময় অনেকেই বলেছিলেন নির্বাচনের সময় সংসদ ভেঙে দিতে হবে। এখন শুনি ইসি এই বিষয়টি আমলেই নেয়নি। তাহলে তো তাদের ওপর ভরসা রাখা যায় না এখানে ইসি সরকারের কথায় চলবে, দলীয় সরকার থাকবে, সংবিধান থাকবে আর সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, এটা আশা করা যায় না।
দেশে এখন গণতন্ত্র নেই উল্লেখ করে দিলারা চৌধুরী বলেন, এখানে গণতন্ত্র বলতে কিছু নাই। এখানে সংসদে বিরোধী দল নাই। এখন সংসদে যাদের বিরোদী দল বলা হয় এটা হাস্যকর ব্যাপার। বেগম এরশাদের অবস্থা যা দেখি সংসদে উনি বক্তব্য দিচ্ছেন আর তার দলের লোকেরা হাসছে। উনার কোন সেল্ফ রেসপেক্ট নাই।
প্রফেসর দিলারা জানান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যে কয়টা নির্বাচন হয়েছে সেখানে ইসিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এতোটা চাপে রাখেনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইসিকে কাজ করতে দিয়েছে। সরকারের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ সরকারের নিরপেক্ষ সাহায্য ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। #

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
জামান ১৭ অক্টোবর, ২০১৮, ৩:০২ এএম says : 3
তিক্ত হলেও একদম সত্য কথা বলেছেন।
Total Reply(0)
চঞ্চল মাহমুদ ১৭ অক্টোবর, ২০১৮, ৩:০২ এএম says : 3
সব সময় সত্য বলার সাহস সবার থাকে না। আপনার আছে। এজন্য আপনাকে স্যালুট জানাচ্ছি
Total Reply(0)
হাবিব ১৭ অক্টোবর, ২০১৮, ৩:০৪ এএম says : 5
ভোটাধিকার বলে একটা বিষয় যে আছে সেটাই আমরা এখন ভুলে যেতে বসেছি
Total Reply(0)
Nannu chowhan ১৭ অক্টোবর, ২০১৮, ৮:১০ এএম says : 2
Shushto nirbachon jeno desher jonogoner kolponatito.mone hoy jeno asha koratao vool.eai shorkar o eai nirbachon comissioner odhine shushto nirbachon asha koratao shopno matro..... .
Total Reply(0)
Mohammed Shah Alam Khan ১৭ অক্টোবর, ২০১৮, ৯:৪২ এএম says : 2
এখানে সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব ও সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সাবেক চেয়ারম্যান ড. সাদাত হোসেন যেভাবে সমালোচনা করেছেন এবং অভিযোগ এনেছেন এসব কি তিনি আনতে পারেন?? তিনি আরো বলেছেন, ‘গোটা বিশ্বেই এটা প্রচলিত আছে যে, ভোটারের ক্ষমতায়ন বলতে বোঝায়- আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশী তাকে দেবো। কিন্তু এখন সরকারের দল হলে বলবে আমরা ভোটারদের আরও ক্ষমতায়ন করেছি। ক্ষমতা দিয়েছি এমন যে, তারা স্লোগান দেবে আমার ভোট আমি দেবো, তোমার ভোটও আমি দেবো। যখন খুশী তখন দেবো, দিনের ভোট রাতে দেবো।‘ একজন প্রাক্তন সচিব এধরনের বক্তব্য দিলে সেটা দেশের এবং সরকারের কি পরিমাণ ক্ষতি হয় সেটা কি ভাববার বিষয় নয়?? ..............
Total Reply(2)
Nannu chowhan ১৭ অক্টোবর, ২০১৮, ৪:২১ পিএম says : 4
Shahadot shaheb shotti kotha bolese ete shorkarer kono khoti hoy nai brong shorkari doler shudhrie neoar shojog hoyese bote...
Mim ২০ অক্টোবর, ২০১৮, ৮:৪৯ এএম says : 4
Moger mulluk naki ? Gae manena apni murol ?
নাম অপ্রকাশ্য ১৭ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০৯ পিএম says : 2
সাদাৎ সাহেব উচিৎ কথা বলেছেন।এ কথাটা কারো আতে ঘা লাগতেও পারে।
Total Reply(0)
Abdul Motaleb ১৭ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:১৫ পিএম says : 3
আন্দোলনের কোন বিকল্প নাই
Total Reply(0)
Parizat Rony ১৭ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:১৬ পিএম says : 2
Thank you for speaking the truth sir
Total Reply(0)
১৭ অক্টোবর, ২০১৮, ৪:০৬ পিএম says : 2
হায় কপাল, স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরেও ভাবতে হচ্ছে, আমার ভোট আমি দিতে পারবো কি না? ভোট আদৌ হবে কি না?. কথা বলতেও ভাবতে হচ্ছে বলবো কি না। সেই কবিতা আবারো সকলকে স্বরণ করে দেয়, দেখা যাবেনা, ছোয়া যাবেনা বলা যাবেনা কথা রক্ত দিয়ে পেলাম এক আজব স্বাধীনতা।
Total Reply(0)
১৮ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:৩৯ এএম says : 2
এখানে আপনি আপনার মন্তব্য করতে পারেনএই দেশ আর জনগনের নাই,যার বেশি ক্ষমতা আছে তারি এই দেশ।
Total Reply(0)
Abdullah al mahmud ২৩ অক্টোবর, ২০১৮, ৯:৩১ এএম says : 0
এসব চলমান থাকলে দেশের স্বাধীনতা বিপন্ন হতে খুব বেশি সময় লাগবেনা।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন