বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

বাংলাদেশের জয়ে নায়ক ইমরুল

ফল : বাংলাদেশ ২৮ রানে জয়ী

ইমরান মাহমুদ, মিরপুর থেকে | প্রকাশের সময় : ২২ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম | আপডেট : ১২:২৭ এএম, ২২ অক্টোবর, ২০১৮

শুরুর ধাক্কা সামলে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস, ৭ম উইকেটে রেকর্ড জুটি। ৩০ ওভারে ৬ উইকেট হারানো বাংলাদেশ যেখানে থমকে ১৩৯ রানে, সেটিকে ইনিংস শেষে নিয়ে গেছেন ৮ উইকেটে ২৭১-এ! এর সবই সম্ভব হয়েছে একজন ইমরুল কায়েসের কল্যাণে। নিজে পেয়েছেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি, সাইফউদ্দিনকে নিয়ে গড়েছেন ৭ম উইকেটে রেকর্ড ১২৭ রানে জুটি। এই দু’জনের ব্যাটে চড়েই গতকাল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে আশাতীত সংগ্রহ পায় মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। লক্ষ্য তাড়ায় শেষ পর্যন্ত লড়াই করেও ২৪৩ রানেই থামে ৯ উইকেট হারানো জিম্বাবুয়ে। ২৮ রানের জয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ১-০তে এগিয়ে বাংলাদেশ।
আঙুলের ইনজুরি নিয়ে সিরিজেই নেই তামিম ইকবাল। নিয়মিত ওপেনার হারিয়ে যখন ঝুঝছে বাংলাদেশ, তখনই আশার আলো হয়ে দেখা দেন ইমরুল। এর আগেও বহুবার ওপেনিং নিয়ে শঙ্কট উত্তরণের পথ হিসেবে স্টেপনির (বিপদ উত্তরণীয় গাড়ীর ৫ম চাকা) কাজ করে গেছেন। তবুও থিতু হতে পারেন নি পর্যাপ্ত সুযোগের অভাবে। এবার কাক্সিক্ষত সেই সুযোগটা এনে দিয়েছে দেশসেরা ওপেনারের অনাকাক্সিক্ষত চোটে। আর সেটিই কাজে লাগিয়েছেন ইমরুল, তুলে নিয়েছেন নিজের ৩য় ওয়ানডে সেঞ্চুরি। তবে কাজটি খুব সহজ ছিলো না।
ম্যাচের শুরু থেকেই রূপ দেখানো শুরু করে মিরপুরের ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ উইকেট। এক প্রান্তে ওপেনারের শূণ্যতা লিটন দাসকে দিয়ে ঘোঁচালেও অনিশ্চয়তা ছিলো আরেকজনকে নিয়ে। ইমরুলকে দিয়ে স্টেপনির কাজটি এশিয়া কাপ থেকে আবারও চালিয়ে নিচ্ছে বিসিবি। তাতেও কম্বিনেশনে আসেনি পরিপক্কতা। দলীয় মাত্র ১৬ রানেই নেই লিটন। এরপরই নামেন অভিষিক্ত ফজলে মাহমুদ রাব্বি। মাত্র এক রানের ব্যবধানে নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে কোন রান না করেই ফিরেন ৩০ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার। তিনি একাই নন, ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেকে শূণ্য রানে আউট হওয়া ৭ম দূর্ভাগা রাব্বি।
এরপর ইমরুলের সঙ্গে ৪৯ রানের জুটি গড়ে ভালো কিছু ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম। কিন্তু তিনি মাভুতার বাজে বলে লেগে ঘোরাতে গিয়ে উইকেট হারান। ফলে আবারো চাপে পরে বাংলাদেশ। এরপর মোহাম্মদ মিঠুনের সঙ্গে জুটি বেঁধে সে চাপ থেকে দলকে উদ্ধার করেন ইমরুল। স্কোর বোর্ডে ৭১ রান যোগ করেন এ দুই ব্যাটসম্যান। কিন্তু এরপর আবার সব এলোমেলো। তৃতীয় স্পেলে বল করতে এসে ভয়ংকর হয়ে ওঠেন কাইল জার্ভিস। ২ রানের ব্যবধানে তিন টাইগার ব্যাটসম্যানকে শিকার করেন তিনি। তিন জনই নিজেদের উইকেট দিয়েছেন উইকেটরক্ষক ব্রেন্ডন টেইলরের তালুবন্দি হয়ে। সব মিলিয়ে ৬ উইকেটের ৫টিই উইকেটের পেছনে থেকে নিয়েছেন এই অভিজ্ঞ জিম্বাবুইয়ান। তখন মনে হচ্ছিল দুইশত রান করাই কষ্টকর হয়ে যাবে টাইগারদের জন্য।
কিন্তু সে শঙ্কা দূর হয় ওই ইমরুলের ব্যাটেই। সঙ্গী হিসেবে পান দীর্ঘদিন পর জাতীয় দলে ফিরে আসা তরুণ সাইফউদ্দিনকে। ১২৭ রানের দারুণ এক জুটি গড়েন এ দুই ব্যাটসম্যান। ফলে বাংলাদেশ পায় ২৭১ রানের লড়াই করার পুঁজি। ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে থামেন ১৪৪ রানে। ১৪০ বলে ১৩টি চার ও ৬টি ছক্কায় নিজের ইনিংস সাজান তিনি। দারুণ ব্যাটিং করেন সাইফউদ্দিনও। ৬৯ বলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় নিজের প্রথম ফিফটি তুলে নেন তরুণ এই অলরাউন্ডার (৫০)।
এমনই এক সন্ধ্যায় পেয়েছিলেন তিন অঙ্কের দেখা। ২০১৬ সালে সেবার প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। ভেন্যু মিরপুর এবং মাসটিও মিলে গেল একই বিন্দুতে। অক্টোবরের সেই সন্ধ্যায় ১১২ রানের লড়াকু এক ইনিংসের পর কেটে গেছে দুটি বছর। মাঝে নিউজিল্যান্ড (৫৯, নেলসন) এবং দক্ষিণ আফ্রিকার (৬৮, পার্ল) মাটিতে দুটো ফিফটি পেলেও ধরা দিচ্ছিলো না ম্যাজিক্যাল ফিগার। সেই আক্ষেপ অবশেষে ঘুঁচলো ইমরুল কায়েসের। ঢাকার হোম অব ক্রিকেটের মাটিতেই আবারও সেঞ্চুরি পেলেন ইমরুল।
এমন একটি দিন বৃথা যেতে দেননি বোলাররাও। বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নামা জিম্বাবুইয়ানদের শুরু থেকেই চেপে ধরেছিলেন মাশরাফি-মুস্তাফিজ-অপু-মিরাজরা। শুরুতে কিছুটা আগ্রাসী হলেও পেস-স্পিন কম্বিনেশনের সেই ধাক্কা সামলে উঠতে পারেনি সফরকারীরা। ঝুওয়াওয়ের (৩৫) স্ট্যাম্প উড়িয়ে শুরুটা করেন মুস্তাফিজ। সেই উৎসবে একে একে সামিল নাগ অপু, মিরাজরা। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আগেই টেলরকে (৫) ফেরান নাজমুল, ক্রেগ অরভিনের (২৪) শিকারি মিরাজ। স্রোতের বীপরিতে কিছুটা লড়াই চালিয়ে যাওয়া অধিনায়ক মাসাকাদজা (২১) রানআউটে ফেরেন মুশফিক-ইমরুলের দারুণ বোঝাপড়ায়।
এরপর কিছুটা ধীর গতিতে রান তোলায় মনোযোগ দেয় জিম্বাবুয়ে। সেখানেও আঘাত হানেন মিরাজ। ২৬ রান করা পিটার মুরকে ফিরিয়ে সিন উইলিয়ামসের সঙ্গে ৪৫ রানের জুটি ভাঙেন এই স্পিনার। তিরিপানোকে (২) দূর্দান্ত এক রানআউটে ফেরান অভিষিক্ত ফজলে মাহমুদ। পরের আঘাতটিও মিরাজের। এবার নিজের বলে নিজেই চোখজুড়ানো এক ফিরতি ক্যাচে দারুণ খেলা মাভুতাকে ফিরিয়ে ১০ ওভারে ৩ উইকেটের কোটা পূর্ণ করেন এই চায়নাম্যান। দ্বতীয় স্পেলে বল করতে এসে এবার শিকারির ভূমিকায় মাহমুদউল্লাহ। মুশফিকের ক্যাচে পরিণত করেন ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা জারভিসকে (৩৭)। বাকি সময়টা চাতারাকে (২*) নিয়ে কাটিয়ে নিজের ফিফটি তুলে নেয়া ছাড়া দলের জয় হার এড়াতে পারেননি উইলিয়ামস (৫০*)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন