শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

অক্টোবর-মিরপুর মিলেমিশে একাকার

দুই বছর পর ইমরুলের সেঞ্চুরি

ইমরান মাহমুদ, মিরপুর থেকে | প্রকাশের সময় : ২৩ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম


শীতের আভাস বাতাসে। এরই মধ্যে কুয়াশার আস্তরণ সবুজ ঘাসে। মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে যেন তার ছিঁটে ফোঁটাও নেই। ছ’টি সুউচ্চ টাওয়ারে জ¦লে উঠেছে ফ্লাড লাইট। তার উত্তাপ তো ছিলোই, হোম অব ক্রিকেটের সেই আলোর ছাপিয়ে গ্যালারীতেও ছুটলো তার বিচ্ছুরণ। এর সবকিছুই ঘ্নান করে দিলো একটি ব্যাট। চাতারার নীচু হয়ে আসা বলটিকে লেগ সাইডে ঠেলে দিয়ে দ্রুত বদল করলেন প্রান্ত। ইমরুল কায়েস পেয়ে গেলেন কাক্সিক্ষত সেঞ্চুরির দেখা। সেই মিরপুর, সেই অক্টোবর যেখানে মিলেমিশে একাকার!
বেশ কিছুক্ষণ থেকেই মুঠোফোনের লাইট জেলে রাখা ২৪ হাজার বাংলাদেশি দর্শকের হাত নড়ে উঠলো এক সঙ্গে। আলোকোজ্জ্বল সেই উদযাপনে পিছিয়ে ছিলেন না ইমরুলও, ব্যাটে আলতো চুমু একেঁই ছুড়ে দিলেন টিভি ক্যামেরার দিকে। পরক্ষণেই ব্যাটকে প্রসারিত দু’হাতে দুলালেন কিছুক্ষণ। সম্প্রতী প্রথম সন্তানের বাবা হয়েছেন এই ওপেনার। এমন উদযাপনটি যে সেই পুত্রের জন্যই বলে দিতে হল না! সেই আনন্দের ছোঁয়া লাগলো স্ট্যান্ডে থাকা মাশরাফি-রোডসদের চোখে-মুখেও।
সর্বশেষ এমনই এক সন্ধ্যায় পেয়েছিলেন তিন অঙ্কের দেখা। ২০১৬ সালে সেবার প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। ভেন্যু মিরপুর এবং মাসটিও মিলে গেল কাকতালীয় ভাবে। অক্টোবরের সেই সন্ধ্যায় ১১২ রানের লড়াকু এক ইনিংসের পর কেটে গেছে দুটি বছর। মাঝে নিউজিল্যান্ড (৫৯, নেলসন) এবং দক্ষিণ আফ্রিকার (৬৮, পার্ল) মাটিতে দুটো ফিফটি পেলেও ধরা দিচ্ছিলো না ম্যাজিক্যাল ফিগার। এরপর অবশ্য দলে সুযোগই পেয়েছেন এশিয়া কাপের মাঝপথে এসে। অবশেষে তিন অঙ্কের আক্ষেপ ঘুঁচলো ইমরুল কায়েসের। ঢাকার হোম অব ক্রিকেটের মাটিতেই আবারও সেঞ্চুরি পেলেন ইমরুল।
আঙুলের ইনজুরি নিয়ে সিরিজেই নেই তামিম ইকবাল। নিয়মিত ওপেনার হারিয়ে যখন ঝুঝছে বাংলাদেশ, তখনই আশার আলো হয়ে দেখা দেন ইমরুল। এর আগেও বহুবার ওপেনিং নিয়ে শঙ্কাট উত্তরণের পথ হিসেবে স্টেপনির (বিপদ উত্তরণীয় গাড়ীর ৫ম চাকা) কাজ করে গেছেন। তবুও থিতু হতে পারেন নি পর্যাপ্ত সুযোগের অভাবে। এবার কাক্সিক্ষত সেই সুযোগটা এনে দিয়েছে দেশসেরা ওপেনারের অনাকাক্সিক্ষত চোটে। আর সেটিই কাজে লাগিয়েছেন ইমরুল, তুলে নিয়েছেন নিজের ৩য় ওয়ানডে সেঞ্চুরি।
তবে কাজটি খুব সহজ ছিলো না। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানো বাংলাদেশ যখন ধুঁকছে ঠিক তখনই জ¦লে উঠেছে তার ব্যাট। বাকিরা যেখানে ছিলেন যাওয়া-আসার মিছিলে, মিরপুরের ‘আপপ্রেডিক্টেবল’ উইকেটে ইমরুল সাবলীল থেকেছেন শুরু থেকেই। ভালো বলকে সম্মান দেখিয়েছেন, বাজে বল পেলে ছেড়ে কথা বলেনি তার ব্যাট। দূর্দান্ত কিছু শটে কখনও খেলেছেন লং অনে, অফে কিংবা গালি। কখনও কাট, কখনও কাভার ড্রাইভ, খেলেছেন রিভার্স সুইপও। পুরো মাঠেই দৌড়িয়েছেন জিম্বাবুইয়ান ফিল্ডারদের।
এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচেই আঙুলের চোট ছিটকে দেয় তামিমকে। পরের ম্যাচ থেকেই নিয়মিত ছিলেন দলে। তবে ঠাঁই মেলেনি ওপেনিংয়ে। সৌম্য সরকার না থাকায় একপ্রান্তে সেট হয়ে গেলেন লিটন দাস। ইমরুলের ভাগ্যে মিললো মিডল অর্ডারে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ছয়ে নেমে খেললেন অপরাজিত ৭২ রানের ইনিংস। পরের ম্যাচে প্রতিপক্ষ পাকিস্তান, তবে হাসেনি তার ব্যাট। ফাইনালে মাশরাফি চমক দেখিয়ে করলেন মেহেদী হাসান মিরাজকে দিয়ে ওপেন। সেদিন তিনে নেমেও সুবিধা করতে পারেন নি। পারবেন কিভাবে, ওপেনিংই যে তার ধ্যান-জ্ঞ্যান। ক্যারিয়ার জুড়েই এই পজিশনেই সবসময় হেসেছে তার ব্যাট। পছন্দের জায়গা আর পছন্দের ভেন্যু পেয়ে ঠিকই দেখালেন ভেল্কি। ১১৮ বলে ছুঁয়েছেন সেঞ্চুরি, সেটি থেমেছে ১৪৪ রানে। ভাঙে সাইফউদ্দিনের সঙ্গে সপ্তম উইকেটে বাংলাদেশের ১২৭ রানের রেকর্ড জুটি। দলের প্রয়োজনে তার ১৪০ বলের দূদান্ত ইনিংসটি ১৩টি চার ও ৬টি ছক্কায় সাজানো। সামনে ছিলো বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ব্যাক্তিগত ইনিংস। তবে সদ্য শেষ হওয়া এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে করা মুশফিকুর রহিমকে (১৪৪) ছুঁলেও তালিকায় সবার ওপরে থাকা তামিম ইকবাল থেকে গেছেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তাদেরই মাঠ বুলাওয়েতে ২০০৯ সালে ১৫৪ রানের ইনিংসটি খেলেছিলেন দেশসেরা ওপেনার।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Ali Ahmed ২২ অক্টোবর, ২০১৮, ৩:৫২ এএম says : 0
they played well
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন