শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

তরুণদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী উপহাস করেছেন -রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ অক্টোবর, ২০১৮, ১:১৩ পিএম

ছবি-এস এ মাসুম


বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, তরুণ প্রজন্মকে দেশের সব চেয়ে বড় শক্তি আখ্যায়িত করে, তাঁদের কর্মসংস্থানে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় আগামী নির্বাচনে তাঁদের ভোট চেয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের শাসনে গত ১০ বছরে দেশের জনগণ অভূতপূর্ব উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করেছে। শেখ হাসিনা এ কথা বলে কি তরুণদের উপহাস করছেন? দুঃশাসনের বিরুদ্ধে তারুণ্যের দ্রোহাগ্নির তাপ যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য নিষ্ঠুরভাবে তরণদের দমন করেছেন যিনি তিনি এখন তরুণদের হিতাকাঙ্খি সেজেছেন। প্রধানমন্ত্রীর উল্লিখিত বক্তব্যের সাথে সত্যের কোন সম্পর্ক নেই। সোমবার (২২ অক্টোবর) সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার প্রধান শেখ হাসিনাই তরুণ প্রজম্মকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছেন। বেকারত্বের অভিশাপে দেশের তরণ সমাজ আজ হতাশ ও বিপন্ন। কিছুদিন আগেই আপনারা দেখেছেন কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে নামা স্কুল, কলেজের কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের উপর সরকারি বাহিনী কি তান্ডব চালিয়েছিল। এখনও কারাগারে আছে বেশ কিছু শিক্ষার্থী, যারা জামিনে বের হয়েছেন তারা সর্বক্ষণ আতঙ্কে থাকে, যে সব শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগ সশস্ত্র হামলা চালিয়েছিল, পুলিশ গুলি চালিয়েছিল তাদের অনেকেই আজও সুস্থ হয়ে উঠতে পারেনি,অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েরসহ শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের হাতুড়ি ও রডের আক্রমনের কারণে অনেক শিক্ষার্থীকে ক্র্যাচে ওপর ভর করে পরীক্ষা দিতে যেতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, সব ধরনের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস এখন নিত্য নৈমত্তিক ঘটনা। শিক্ষামন্ত্রী সহনীয় দুর্নীতির উপদেশ দিচ্ছেন। তারপরও কি প্রধানমন্ত্রী বলবেন আপনি তরুণদের জন্য অনেক কিছু করেছেন। তবে হ্যাঁ মেধাবিদের বাদ দিয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের পাইকারি সরকারি চাকুরিতে ঢুকিয়েছেন। মেধাহীন করেছেন গোটা জাতিকে।
বিএনপি নেতা বলেন৷ গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী দেশে বর্তমানে প্রায় ৫ কোটি শিক্ষিত ও কর্মক্ষম বেকার। দেশে কোন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারেনি সরকার বরং কল-কারখানা প্রতিদিনই বন্ধ হচ্ছে, গার্মেন্টস শিল্পকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে, এ সেক্টর এখন বাংলাদেশীদের হাত ছাড়া হয়ে গেছে, গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবতো রয়েছে তার ওপর বর্তমান দুঃশাসনের কারণে বিদেশী বিনিয়োগ নাই, ব্যাংকগুলো হরিলুট করে ফতুর করে দেয়ায় ব্যবসায়ীরা মুখ থুবড়ে পড়ে বসে আছেন। সরকারি চাকুরিতে দলীয়করণের কারণে উচ্চ শিক্ষিত বেকার বেড়েছে।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ১০ টাকায় চাল খাওয়াব, ঘরে ঘরে চাকুরি দিব। গত ১০ বছরে দুঃশাসনে আর্ন্তজাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত স্বৈরাচার সরকার প্রধান শেখ হাসিনা ঘরে ঘরে বেকার উপহার দিয়েছেন। আর ১০ টাকার চালতো এখন কিনতে হচ্ছে ৫০ টাকায়। মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ও চালের দাম বৃদ্ধির উন্নয়ন ছাড়া শেখ হাসিনার আর কোন অর্জন নেই। অর্থমন্ত্রী গতকাল সরকারি পরিসংখ্যান দিয়ে বলেছেন দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা এখন ৩ কোটি। হত দরিদ্রের সংখ্যা ১ কোটি। কিন্তু গত কয়েকদিন আগে সরকারি আরেক পরিসংখ্যান বলেছে, দেশে তাদের মতে হত দরিদ্র মানুষ রয়েছে প্রায় ২ কোটি আর দারিদ্রসীমার নিচে বাস করেন সাড়ে ৩ কোটি। বাস্তবে দেশের অর্ধেক জনগোষ্টিই এখন দরিদ্রসীমার নিচে বাস করছে।
বর্তমান সরকারের দুঃশানের কথা তুলে ধরে রিজভী বলেন, দেশজুড়ে আবারও শুরু হয়েছে গুপ্ত হত্যা। গতকালও নারায়নগঞ্জে সড়কের পাশে গুলিবিদ্ধ ৪ যুবকের ও উত্তরায় দিয়াবাড়ির কাশবনে দুই যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে। এছাড়াও সারাদেশে এখন আবারও সড়কের পাশে, নদীর ধারে, ঝোঁপঝাড়ে পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে যুবকদের রক্তাক্ত লাশ। এর সঙ্গে বিচারবর্হিভূত হত্যাতো প্রতিদিন চলছেই। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে তরুণ-যুবক সমাজকে ভয় পাইয়ে দেয়ার জন্যই সরকারি পৃষ্টপোষকতায় পাইকারি গুপ্ত হত্যা শুরু হয়েছে দেশব্যাপি। আর এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে দেয়া হয়েছে ইনডেমনিটি। কারণ একটাই, একতরফাভাবে নির্বাচন করতে তরুণ-যুবকদের কোন যেন প্রতিরোধ না হয়। অবৈধ সরকার যাদেরকে ক্ষমতার প্রতিদ্বন্ধী মনে করবে তাদেরই লাশ ধানক্ষেত, খাল বিলে পড়ে থাকবে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, যুব সমাজ, তরুণ সমাজ, ছাত্রসমাজ, কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি জনতা আপনার দুঃশাসনের যাতাকলে পিষ্ট। তারা আপনাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। চক্রান্তের বেড়াজাল তৈরি একের পর এক কালাকানুন প্রণয়ন করে, মানুষ হত্যা করে, গ্রেফতার নির্যাতন করে আর রেহাই পাওয়া যাবে না। ডিজিটাল কালাকানুন গ্রাস করেছে দেশের গণতন্ত্রকে। দিগন্ত রেখায় আপনার পতনের চিহ্ন ফুটে উঠছে। চারিদিকে এখন শুধু সরকার পতনের আওয়াজ, মানুষের ভোটের অধিকার ফিরে পাওয়ার আওয়াজ। নিপীড়ন নির্যাতনের পাশাপাশি আপনার কথা বক্তব্য বিবৃতিতেও মানুষ নির্যাতন বোধ করে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, স্থায়ী কিমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরিকে উচ্চতর আদালত ও নিম্ন আদালতে জামিনে থাকার পরও গতকাল চট্রগ্রামে হাজিরা দিতে গেলে তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে আইসিটি আইনে মামলা করা হয়েছে তাকে হয়রানী করার জন্য। শেখ হাসিনা বিএনপি নেতা-কর্মীদের কারাগারে আটকে রাখতে চাচ্ছে শুধুমাত্র তাঁর গদি রক্ষার জন্য। দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কোনভাবেই যাতে প্রতিবাদ না ওঠে সেজন্যই বিএনপির শীর্ষ নেতাদের এখন আটক করা হচ্ছে। আসলে আওয়ামী সরকার দেউলিয়া হয়ে গেছে। তারা অথ্যাধিক মাত্রায় দমনপিড়নের নীতি চালিয়েও স্বস্তি ও শংকামুক্ত হতে পারছে না। এজন্য সারাদেশে হাজার হাজার গায়েবি মামলায় লক্ষ লক্ষ জ্ঞাত অজ্ঞাত নেতা-কর্মীকে আসামি করার পর এখন জাতীয় নেত্রীবৃন্দকে আটকের পালা শুরু করেছে। তার প্রথম শিকার হলেন আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Billal Hosen ২২ অক্টোবর, ২০১৮, ১:৩২ পিএম says : 0
উস্কানিমূলক কথা না বলে ভালো ও সুস্থ নির্বাচনের ভাষা ব্যবহার করা উচিত অন্যথায় নির্বাচন এর পরিবেশ নষ্ট হবে। আমরা কারো প্রতি হিংসা না করে মিলেমিশে কাজ করি।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন