শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

বাজেট বাস্তবায়নে অপারগতা উদ্বেগজনক

প্রকাশের সময় : ২৯ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

একদিকে সরকার বিশাল অর্থনৈতিক উন্নয়নের গোলাপি চিত্র অঙ্কন করছেন, অন্যদিকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ সূচকে নি¤œমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জনগণকে এবং সেই সাথে দাতাদেশ ও সংস্থাসমূহকে তাক লাগানোর জন্য বিশাল আকারে বাজেট পেশ করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের বাজেট যখন গত বছরের পয়লা জুন পেশ করা হয় তখন দলনিরপেক্ষ সুস্থ চিন্তার অধিকারী অর্থনীতিবিদগণ ঐ বাজেটকে উচ্চাভিলাষী বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। এখন দেখা যাচ্ছে, বাজেটের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ খাতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে বাজেটের এক-চতুর্থাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে মাত্র। আর উন্নয়ন বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়িত হয়েছে মাত্র ২৩ শতাংশ। এবার গত অর্থবছরের তুলনায় সকল প্রকার বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণও কমেছে। বিশেষ করে বৈদেশিক অনুদানের পরিমাণ কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। সেই সাথে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পাওয়ার পরিবর্তে কমেছে। চলতি অর্থবছরে উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন মিলিয়ে বাজেটের মোট আকার ছিল ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। গত ছয় মাসে বাজেটের ৭৬ হাজার ৬২১ কোটি টাকা খরচ হয়েছে, যা মোট বাজেটের ২৬ শতাংশ। আর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) খরচ হয়েছে ১৭ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদানের পরিমাণ ধরা ছিল ৩৯৩ কোটি টাকা। কিন্তু এ বছর বৈদেশিক অনুদান এসেছে ২২৪ কোটি টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ১৬৯ কোটি টাকা কম। গত বছরের ৬ মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ৭ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা। আর এবার এসেছে ৭ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২ লাখ ৮ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা। ডিসেম্বর পর্যন্ত আদায় হয়েছে ৭৭ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়িত হয়েছে মোট বরাদ্দের ২৩ শতাংশ, ব্যয়ের হিসাবে যা দাঁড়ায় ২২ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা।
শুধুমাত্র বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেই বাজেট অনেক পেছনে পড়ে থাকেনি, বাজেটের পরিমাণও অনেক কাটছাঁট করতে হয়েছে। চলতি বছরের বাজেট থেকে ৩০ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা কাটছাঁট করা হয়েছে। একই সঙ্গে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে ৩১ হাজার ৪৩ কোটি টাকা। সরকারের রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ঘাটতির কারণে বাজেটের আকার ছোট করা হয়েছে। কাটছাঁটের পর চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬৪ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, বাজেট ঘোষণার শুরু থেকে বলা হয়েছে, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে উচ্চাভিলাষী, বাস্তবভিত্তিক নয়। এখন রাজস্ব আদায় না হওয়ার কারণেই বাজেটের আকার কমানো হচ্ছে। তিনি আরো বলেছেন, বাজেট কিছুটা উচ্চাভিলাষী থাকতে পারে। তবে বাস্তবতার সঙ্গে তার মিল থাকতে হবে। কিন্তু বর্তমান বাজেটে এর প্রতিফলন নেই। এসব ছাড়াও আরো যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে সেখানে দেখা যাচ্ছে যে, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমে গেছে এবং অনুৎপাদনশীল খাতে খরচ বেড়েছে। এর ফলে খেসারত দিতে হচ্ছে জনগণকে। বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বছরখানেক হলো আন্তর্জাতিক জ্বালানির বাজারে জ্বালানির মূল্য হ্রাস পেয়েছে বিশাল অঙ্কে। ১২০ ডলার থেকে নেমে এসেছে ২৮ ডলারে। তারপরও বাংলাদেশে বিগত প্রায় ১ বছর ধরে জ্বালানির দাম কমানো হয়নি। জনগণ এবং অর্থনীতিবিদের চাপে সরকার জ্বালানির মূল্য কিছুটা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু পরিবহন খাতের বাস বা সিএনজির মালিকরা তাদের পরিবহন ভাড়া এক পয়সাও কমাতে রাজি নয়। তাহলে জ্বালানির দাম কমিয়ে লাভ হলো কার? মুষ্টিমেয় কয়েকজন মালিকের মুনাফা বৃদ্ধির জন্যই কি এই দাম কমানো হলো?  
চলতি বাজেট যে সামগ্রিকভাবে অবাস্তব ছিল তার প্রমাণ এই যে, মোট ব্যয়, মোট রাজস্ব, এনবিআর কর, এনবিআর বহির্ভূত কর, কর ব্যতীত প্রাপ্তি, অনুন্নয়নসহ অন্যান্য ব্যয়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি প্রভৃতি সব খাতেই মূল বাজেটের চেয়ে সংসদীয় বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা বিপুল পরিমাণে কমানো হয়েছে। এর অর্থ হলো, এই বাজেট প্রণয়নকালে সেই সময়কার বিদ্যমান অবস্থা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানের অভাব এবং বাজেট বরাদ্দে দূরদর্শিতার অভাব। যেখানে প্রত্যাশিত বৈদেশিক সাহায্য ও অনুদান এসে পৌঁছে না এবং অনুৎপাদনশীল খাতে বেশি বরাদ্দ করা হয় সেখানে এত বড় আকারের বাজেট পেশ করা হয় কেন? একটি বাজেট সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে একদিকে বাজেট প্রণয়নকারীদের থাকতে হবে দূরদর্শিতা অন্যদিকে সরকারের থাকতে হবে সেই বাজেট বাস্তবায়নে পূর্ণ রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং দৃঢ় পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট। আগামী বাজেট প্রণয়নে বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটবে এমনটাই আমরা আশা করি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন