শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

২৪ ঘণ্টার মহাযন্ত্রণা

মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল, চান্দিনা (কুমিল্লা) থেকে | প্রকাশের সময় : ৩ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকামুখী গাড়ির চাপ লেগেই আছে। গতকাল শুক্রবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা সেতু থেকে কুমিল্লার মাধাইয়া পর্যন্ত প্রায় ৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট দেখা গেছে। গত বুধবার গভীর রাত থেকে শুরু হওয়া মহাসড়কের এ অংশের যানজটের তৃতীয় দিন অতিবাহিত হলো গতকাল শুক্রবার। হাজার হাজার গাড়ি আটকা পড়েছে।
সংবাদপত্র পরিবহন চালক কেফায়েতের কথায় ফুটে ওঠে প্রতিদিনের যানজটের ভয়াল চিত্র। কাঁচপুর থেকে যানজটের সূচনা। সড়ক পাশে অপরিকল্পিত গাড়ি পার্কিংয়ের কারণেও সৃষ্টি হয় যানজট। ভুক্তভোগী যাত্রীরা বলছেন, যানজট প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে। যানজট মানে কয়েক ঘণ্টার মহাযন্ত্রণা। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা অভিমুখী অ্যাম্বুলেন্সে থাকা সঙ্কটাপন্ন রোগীদের জীবন নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয়। এদিকে টানা তিন দিন ধরে ভয়াবহ যানজটে অচল এই মহাসড়কে ট্রাক ও লরি ভাড়া বেড়ে গেছে দ্বিগুণ। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পৌঁছতে লেগে যাচ্ছে ২০ ঘণ্টারও বেশি সময়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পণ্যসামগ্রী সরবরাহ করা হয়। মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনের ৬০ শতাংশই পণ্যবাহী। ২৪ ঘণ্টাই লেগে থাকছে যানজট। গত বৃহস্পতিবারের ৬০ কিলোমিটারের যানজট গতকাল শুক্রবার বেড়ে দাঁড়িয়েছি ৬৫ কিলোমিটারে। এগোতে পারেনি রোগী বহনকারী অ্যাম্বুল্যান্সও। মহাসড়কের পাশে বিশ্রামাগার, শৌচাগার না থাকায় যাত্রীসাধারণ ও চালকদের গাড়িতে বসে অসহনীয় দুর্ভোগে কাটাতে হচ্ছে রাত-দিন।
মহাসড়কে চলাচলরত গাড়ি চালকরা বলছেন গতকাল শুক্রবার ঢাকা থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত যেতে সময় লেগেছে ১২-১৩ ঘণ্টা। ৫টি কারণে মহাসড়কে এই মহাজট অব্যাহত রয়েছে বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। এগুলো হলো- মাত্রাতিরিক্ত যানবাহনের চাপ, ৪ লেনে চলাচলকারী গাড়িগুলোর ২ লেনের গোমতী ও মেঘনা ব্রিজ দুটিতে ওঠার ক্ষেত্রে বিলম্ব এবং গাড়ি চালকদের মধ্যে পরস্পরকে অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়ার প্রবণতা ও এ অংশে অনিয়ন্ত্রিত গাড়ি চালানো, দাউদকান্দির টোল প্লাজার ওজন মাপার যন্ত্রে হয়রানি ও অহেতুক দেরি, উল্টোপথ ফাঁকা থাকলে সেদিক দিয়েই গাড়ি চালানো এবং অতিরিক্ত পণ্যবাহী যানবাহনের যাতায়াত ও ধীরগতিতে চলাচল।
স্টার লাইন পরিবহণের যাত্রী জুয়েল আহম্মদ দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, দুপুর ১টার দিকে দাউদকান্দির গৌরীপুর থেকে টোল প্লাজায় তিনি পৌঁছেছেন বিকেল সোয়া ৩টার দিকে। ভোর সাড়ে ৬ টার দিকে কুমিল্লা থেকে ঢাকার দিকে রওনা দিয়ে মাহাবুব হোসেন সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর দুপুর ১টার দিকে পৌঁছেন কাঁচপুর ব্রিজের কাছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সারাদেশে কাঁচামাল ও পণ্য সামগ্রী ঠিক সময়ে পৌঁছাতে না পারায় বন্ধ হয়ে গেছে অনেক কারখানার উৎপাদন। বেড়ে গেছে সব ধরনের পণ্যের দাম। আগে ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রাক ভাড়া যা ছিল ৭ হাজার টাকা তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার থেকে ১১ হাজার টাকায়। রফতানি পণ্য ঠিকমত চট্টগ্রাম না পৌঁছায় গার্মেন্টসসহ বহু রফতানি চালানের শিপমেন্ট ও অর্ডার বাতিল হয়ে যাচ্ছে। এভাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সৃষ্ট অচলাবস্থার কারণে গত এক মাসে জাতীয় ক্ষতির পরিমাণ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
আন্তজেলা ট্রাক মালিক সমিতির সদস্য ইকবাল হোসেন বলেন, ২ ঘণ্টার পথ ৪ ঘণ্টায় অতিক্রম করা যায় না। ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডের অবস্থা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। নির্ধারিত সময়ে পণ্য পৌঁছে দিতে দেরি হওয়ায় অনেক সময় ভাড়ার পুরো অর্থ পাওয়া যায় না। দাউদকান্দি হাইওয়ে পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মো. আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, যানবাহনগুলো দ্রুত গতিতে গোমতী, মেঘনা ও কাঁচপুর ব্রিজের কাছে এসে জড়ো হয়ে মেঘনা ও গোমতীর টোল প্লাজায় সারিবদ্ধ হয়। এর পর সেতুতে ওঠার সময় যানবাহনের গতি অন্তত ৮০ ভাগ কমে যায়। চার লেনের গাড়িগুলো দুই লেনের সেতুতে ধীর গতিতে চলায় যানজট দেখা দেয়। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত যানজট অব্যাহত ছিল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন