শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সিম নিবন্ধনে ভোগান্তি

ঝরে যেতে পারে ৪ কোটি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে রাজস্বে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উদীয়মান শিল্প

প্রকাশের সময় : ১৬ এপ্রিল, ২০৩০, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:২০ পিএম, ২৯ এপ্রিল, ২০১৬

ফারুক হোসাইন : সার্ভারের সমস্যার কারণে শেষ সময়ে বায়োমেট্রিক (আঙুলের ছাপ) পদ্ধতিতে সিম পুনঃনিবন্ধনে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকরা। ছুটির দিন এবং নিবন্ধনের শেষ মুহূর্তের চাপে সারাদেশে দেখা যায় একই চিত্র। সার্ভার ডাউন হওয়ায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে নিবন্ধন করতে আসা মোবাইল ব্যবহারকারীদের। আবার যেটুকু সময় কাজ হয়েছে তাও প্রচ- ধীর গতিতে। যদিও নির্বাচন কমিশন এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম দাবি করেছেন, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সার্ভারে কোন সমস্যা হয়নি। সমস্যা হয়েছে মোবাইল ফোন অপারেটরদের সার্ভারে। তাদের সার্ভার ডাউন থাকায় সমস্যা হয়েছে। এর আগেও নিবন্ধন প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই সিম নিবন্ধন করতে গিয়ে নানাভাবে ভোগান্তি পোহাতে হয় গ্রাহকদের। একজনের আঙুলের ছাপ ও জাতীয় পরিচয় পত্র দিয়ে অন্য জনের সিম নিবন্ধন হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে এরই মধ্যে। আঙুলের ছাপ ও জাতীয় পরিচয়পত্রের সাথে অমিল থাকায় এক কোটিরও বেশি গ্রাহক নিবন্ধন করতে গিয়েও ফিরে এসেছেন। এদিকে মোবাইল অপারেটরদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শেষ সময়ে এসে পুনঃনিবন্ধনের অতিরিক্ত চাপে এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। একটি অপারেটরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, পুনঃনিবন্ধনের অতিরিক্ত চাপে সার্ভারে সমস্যা হচ্ছে। তবে নিবন্ধন প্রক্রিয়া কখনো বন্ধ করা হয়নি। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, গতকাল (শুক্রবার) ছুটির দিনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সিম নিবন্ধন কেন্দ্রগুলোতে ছিল গ্রাহকের উপচে পড়া ভিড়। পুনঃনিবন্ধন শেষ করতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা আর ভোগান্তির কথা বলেছেন গ্রাহকরা। সিম নিবন্ধনের জন্য আসা ব্যক্তিদের সামাল দিতে হিমশিম অবস্থা হয় কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা ব্যবস্থাপকদের। গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে সকালে কয়েক ঘণ্টা পরই সার্ভার ডাউন হয়ে যায়। ভোগান্তিতে পরতে হয় নিবন্ধন করতে আসা গ্রাহকদের। পরবর্তীতে সার্ভার সচল হলেও তা কাজ করেছে প্রচ- ধীর গতিতে। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তাদের।
রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় সিম নিবন্ধন করতে আসা সোহেল জানান সকালে গ্রামীণফোনের সিম পুনঃনিবন্ধন করতে গেলে প্রথমে তাকে বলা হয় সার্ভার ‘ডাউন’। দীর্ঘসময় অপেক্ষার পর তার সিমের পুনঃনিবন্ধন হয়। সকালের পর থেকেই ফার্মগেটে গ্রামীণফোন কাস্টমার সেন্টারে ছিল প্রচুর ভিড়। সার্ভার কাজ না করায় সেখানে অপেক্ষা করতে দেখা যায় গ্রাহকদের। এসময় মনির নামে একজন গ্রাহক বলেন, সিম পুনঃনিবন্ধন করতে এসেছেন কিন্তু সার্ভার কাজ না করায় অপেক্ষা করছেন। দুপুরের পর সার্ভার সচল হলেও নিবন্ধনের গতি ছিল সেøা। মশিউর রহমান নামের এক ব্যক্তি বললেন, তথ্য নিয়ে নেবে এমন কথা বলা হচ্ছিল। অবশ্য এ সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই। যেহেতু সিম নিবন্ধন করতেই হবে, তাই চলে আসা। তিনি বলেন, বাসার চারটি সিমই তিনি নিজের নামে নিবন্ধন করেছেন। ফলে ভোগান্তি তার একার ওপর দিয়েই গেছে। শাহবাগ এলাকার নিবন্ধন করতে আসা সোলায়মান মামুন বলেন, নিবন্ধন শেষ হতে অনেক সময় লেগেছে। লম্বা লাইন ছিল। তারপর সার্ভার ডাউনের কারণে তথ্য নাকি মেলানো যাচ্ছিল না। কয়েকবার পিন কোড দেওয়ার পর নিবন্ধন শেষ হয়েছে। শুধু কেন্দ্রগুলোতেই নয়, টুল নিয়ে বিভিন্ন পাড়া মহল্লা ও সড়কের পাশে বসে সিম নিবন্ধনের কাজ চলে। সেগুলোতেও মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল, নীলক্ষেত, মিরপুর, মহাখালীসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় একই চিত্র ছিল। কেবল ঢাকা নয়, দেশের অন্যান্য স্থানেও কাস্টমার কেয়ার সেন্টার ও রিটেইলার পয়েন্টে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়ার কথা জানিয়েছেন গ্রাহকরা। মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন এসোসিয়েশন অফ মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) মহাসচিব টি আই এম নুরুল কবির বলেন, নিবন্ধনের অতিরিক্ত চাপে এ সমস্যা হতে পারে। অপারেটর ও এনআইডি কর্তৃপক্ষের কারিগরি দল এ সমস্যা সমাধানে কাজ করে যাচ্ছে। জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়ন (এনআইডি) কাজের সঙ্গে যুক্ত এনআইডি উইংয়ের পরিচালক (অপারেশন্স) সৈয়দ মুহাম্মদ মূসা বলেন, এনআইডি সার্ভার ঠিকই ছিল। মোবাইল ফোন অপারেটরদের সার্ভারগুলো ডাউন থাকায় সমস্যা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, সার্ভার ডাউন হওয়ায় রাজধানীতে কয়েক ঘণ্টার জন্য সিম নিবন্ধনে যে সমস্যা হয়েছিল তা এনআইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) সার্ভার ডাউনের কারণে নয়। এনআইডি সার্ভার ডাউন না।’
৪ কোটি সিমের প্রভাব পড়বে রাজস্বে
বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের শেষ পর্যায়ে এসে প্রায় ৪ কোটির মতো সিম ঝরে পড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর সাথে যুক্ত হয়েছে আঙুলের ছাপের অমিল, জাতীয় তথ্য ভা-ারে থাকা তথ্যের সাথে সামঞ্জস্য না হওয়া, জাতীয় পরিচয় পত্র না থাকা, ২০০৮ সালের আগের জাতীয় পরিচয়পত্রধারী ১ কোটিরও বেশি গ্রাহক। যারা সিম নিবন্ধন করতে গিয়েও নিবন্ধন সম্পন্ন করতে পারেন নি। এমনকি তাদের বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় কিংবা টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি) এর পক্ষ থেকে এখনো সুস্পষ্ট কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি। ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী ও সচিব এসব গ্রাহককে প্রকৃত গ্রাহক হিসেবে উল্লেখ করলেও তাদের সিম ৩০ এপ্রিলের পর বন্ধ হয়ে যাবে নাকি অন্য কোন পদ্ধতিতে নিবন্ধন হবে সে বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। ফলে সিম বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা এবং উদ্বেগ নিয়ে সময় পার হচ্ছে এসব সিমের গ্রাহকদের। রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কে একাধিকবার নিবন্ধন করতে গিয়ে ফিরে আসা সোহাগ নামে একজন গ্রাহক ইনকিলাবকে বলেন, আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে জাতীয় পরিচয় পত্র পেয়েছি। ওইসময় আমাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেয়া হয়নি। এখন সিম নিবন্ধন করতে গিয়ে বারবার ফিরে আসতে হচ্ছে। একই সমস্যায় আছেন ১৮ বছর বয়সের নিচে থাকা মোবাইলফোন ব্যবহারকারীরা। যারা এখনো জাতীয় পরিচয়পত্র পায়নি। নানা কারণে এতো বিপুল সংখ্যক মোবাইল ফোনের সিম কমে গেলে মোবাইল ফোন অপারেটরদের রাজস্ব এবং জাতীয় রাজস্বেও ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন অপারেটর ও এই খাত সংশ্লিষ্টরা।
খাত সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন শুরু হওয়ার পর থেকেই এক দিকে যেমন কমে গেছে নতুন সিম বিক্রি। তেমনি সিম তৈরির মতো বাংলাদেশে উদীয়মান একটি শিল্পও ইতোমধ্যে মুখ থুবড়ে পড়েছে। মোবাইল ফোনের সিম কার্ড ও স্ক্র্যাচ কার্ড প্রস্তুতকারী কারখানাগুলোর প্রায় তিন হাজার কর্মী বেকার হওয়ার পথে। কারখানাগুলোতে কাজ কমে গেছে। সফটওয়্যারভিত্তিক অন্য কোনো পণ্য উৎপাদনের কাজে না লাগানো গেলে এসব কর্মীর অনেকেই ছাঁটাই হতে পারেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, একসময় মোবাইল ফোনের সিম কার্ড ও স্ক্র্যাচ কার্ড আমদানি করা হতো। ২০০৭ সালে সিল্কওয়ে নামের একটি প্রতিষ্ঠান দেশেই এসবের উৎপাদন শুরু করে। আরো তিনটি প্রতিষ্ঠান সিম কার্ড ও স্ক্র্যাচ কার্ড তৈরি করছে। এগুলো হচ্ছে ইস্টকমপিস, আইসিএল ও ফনস। সংশ্লিষ্টরা আরো জানান, সাশ্রয়ী হওয়ায় দেশে উৎপাদিত সিম কার্ড ও স্ক্র্যাচ কার্ডের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে মোবাইল ফোন অপারেটররাও। তবে সংযোগসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকায় সেসবের চাহিদা কমেছে। সিল্কওয়ের নির্বাহী পরিচালক কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, তাঁদের কারখানার দিনে আড়াই লাখ সিম কার্ড ও এক কোটি স্ক্র্যাচ কার্ড উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে। মোবাইল অপারেটরদের কাছ থেকে একসময় মাসে প্রায় ৫০ লাখ সিম কার্ডের অর্ডার আসত। কয়েক মাস ধরে তাদের চাহিদা ২০ লাখ কার্ড। এছাড়া ৪ কোটি সিমে ভয়েস কল এবং ডাটার ব্যবহার থেকে সরকার এবং মোবাইল অপারেটরগুলো যে রাজস্ব অর্জন করতে সেগুলোও হঠাৎ করে কমে যাবে। যার প্রভাব পড়বে গোটা টেলিযোগাযোগ শিল্পেই। গ্রাহক সংখ্যা কমে যাওয়া এবং সিম ঝড়ে পড়ার প্রসঙ্গে তারানা হালিম বলেন, ৯ থেকে ১০ কোটি সিম নিবন্ধন হলে সরকারের লক্ষ্য পূরণ হবে। তিনি বলেন, সেই সিমগুলো ঝড়ে পড়বে সেগুলো সন্ত্রাসী কর্মকা-ের জন্য বা অবৈধ ভিআইপি কাজের জন্য বা জঙ্গি অর্থায়নে ব্যবহার করা হয়। গতকাল পর্যন্ত সারা দেশে প্রায় সাড়ে আট কোটি ৩৮ লাখ সিম পুনর্নিবন্ধনের কাজ শেষ হয়েছে। মোবাইল অপারেটররা জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত সারা দেশে মোট সিম বিক্রি করা হয়েছে প্রায় ১৩ কোটি ৩৮ লাখ। ফলে এখনো প্রায় ৫ কোটি সিমের নিবন্ধন বাকি আছে। আজকের পর সিম নিবন্ধনের সময় না বাড়ালে এসব সিম বন্ধ হয়ে যাবে। যদিও সিম নিবন্ধনের সময় বৃদ্ধির বিষয়টি আজ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা আসতে পারে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আগে থেকে ঘোষণা দিলে নিবন্ধন প্রক্রিয়া ধীরগতি আসতে পারে বলেই শেষ সময়ে কয়েকদিন সময় বাড়ানোর ঘোষণা আসতে পারে।
গত ১৬ ডিসেম্বর সিম নিবন্ধনে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু হওয়ায় আঙুলের ছাপ না দিয়ে এখন আর নতুন সিম কেনা যাচ্ছে না। পাশাপাশি বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে পুরনো সিমের পুনঃনিবন্ধন চলছে, যা আজ রাত ১০টায় শেষ হতে যাচ্ছে।
সিম পুনঃনিবন্ধনের সময় বাড়ানো হবে কিনা তা আজ জানানো হবে
Ñতারানা হালিম
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা ঃ ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট তারানা হালিম বলেছেন, গতকাল পর্যন্ত ৮ কোটি ৩৮ লাখ সিম পুনঃনিবন্ধন হয়েছে। এনআইডি’ সার্ভার ডাউন না। মোবাইল অপারেটরদের সমস্যা কিনা তা দেখতে হবে। আমি মনে করি, অপারেটরদের আরো সচেতন হওয়া দরকার ছিল। এটা গণতান্ত্রিক সরকার, আমরা জনপ্রতিনিধিরা মানুষকে ভোগান্তি দেয়ার জন্য এখানে আসি নাই। জনগণের প্রতি বর্তমান সরকার সব সময় শ্রদ্ধাশীল। সিম পুনঃনিবন্ধনের সময় বাড়ানো হবে কিনা তা আগামীকাল ৩০ এপ্রিল বিস্তারিত জানানো হবে। শুক্রবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কান্দাপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন, দলিল হস্তান্তর ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। এতে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতীক) বলেছেন, কান্দাপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়কে হাইস্কুলে রূপান্তর করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, তারাবো পৌরসভার মেয়র হাসিনা গাজী, ডাক বিভাগের পরিদর্শক নাসির আহমেদ, নারায়ণগঞ্জ জেলা অতিরিক্ত ম্যাজিষ্ট্রেট সারোয়ার হোসেন, রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানা ইসলাম, জেলা সহকারী পুলিশ সুপার ফোরকান আলী সিকদার, তারাবো পৌরসভার সাবেক মেয়র মাহাবুবুর রহমান খান প্রমুখ।
দক্ষিণাঞ্চলে ৬০ ভাগের বেশী সীম পুনঃনিবন্ধন হয়নি
নাছিম উল আলম : মোবাইল ফোনের সিম ও রিম রি-রেজিষ্ট্রেশন নিয়ে গতকাল বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের হাজার হাজার গ্রাহককে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। সকাল থেকে বার-বারই নেটওয়ার্কের সমস্যার কারণে গ্রামীণ ফোন ও টেলিটকের গ্রাহকদের চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এরই মধ্যে বিপুল সংখ্যক গ্রাহক দুঃসহ গরম আর রোদ উপেক্ষা করেই বরিশাল মহানগরীর বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিলেন সীম পুনঃ নিবন্ধনের জন্য। ৩০এপ্রিল সীম পুনঃ নিবন্ধনের সময় শেষ হয়ে যাবে এবং ১ মে থেকে অনিবন্ধিত সীম প্রতিদিন ৩ ঘন্টা করে বন্ধ রাখার সরকারী সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে গত দু’দিন ধরে বিরুল সংখ্যক গ্রাহককে বায়েমেট্রিক পয়েন্টে ভিড় করতে দেখা যাচ্ছে। তবে এর পারেও এখনো দক্ষিণাঞ্চলে ৬০ভাগের বেশী সীম পুনঃনিবন্ধন শেষ হয়নি।
এমনকি গ্রাহকের তুলনায় সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল জুড়েই বায়েমেট্রিক পয়েন্টের সংখ্যা অনেক অপ্রতুল হওয়ায় সাধারণ গ্রাহকদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ সাধারণ মানুষের। বিশেষ করে গ্রামীণ ফোন ও বাংলা রিংক-এর গ্রাহকের তুলনায় রি-রেজিষ্ট্রেশন করার সুবিধা অনেক কম বলে অভিযোগ সাধারণ গ্রাহকদের। টেলিটক ও রবি সহ অন্যান্য অপারেটরদেরও কিছু বায়োমেট্রিক পয়েন্ট চালু করা হয়েছে তাদেও কাষ্টমার কেয়ার-এর বাইরে। কিন্তু গ্রাহকের তুলনায় সে সংখ্যাও অনেক অপ্রতুল বলে মনে করছেন সাধারণ গ্রাহকগণ। গত কয়েকদিনের তুলনায় গতকাল আরো অনেক বেশী গ্রাহক সকাল থেকে বরিশাল মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রচ- রোদ ও দুঃসহ গরম উপেক্ষা করে রাস্তার পাশের বায়োমেট্রিক পয়েন্টগুলোতে সীম রি-রেজিষ্ট্রেশন করতে ভিড় করেন। এমনকি বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরদের কাষ্টমার কেয়ার সেন্টারগুলোতেও ছিল উপচে পড়া ভিড়।
কিন্তু নেটওয়ার্ক সমস্যায় অন লাইনে রেজিষ্ট্রশন মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছিল গতকাল। ফলে মানুষের দুর্ভোগ ছিল বর্ণনার বাইরে। যেখানে ৫মিনিটে একটি সীম রেজিষ্ট্রেশন হবার কথা সেখানে গতকাল ১৫মিনিট থেকে কুড়ি মিনিটও অপেক্ষা করতে হয়েছে বেশীরভাগ গ্রাহকদের। ফলে মোবাইল অপারেটরদের কর্মীগণও যথেষ্ট দুর্ভোগে পড়েন। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও অপেক্ষমাণ সব গ্রাহকের সীম রি রেজিষ্ট্রেশন সম্ভব হয়নি।
বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি জেলায় বিভিন্ন কোম্পানীর প্রায় দেড় কোটি সেল ফোন গ্রাহকের মধ্যে কতকাল পর্যন্ত ঠিক কতজনের রি রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন হয়েছে তা নিশ্চিত করে কোন অপারেটরই বলতে না পারলেও এখনো ৬০ভাগের বেশী নিবন্ধন সম্পন্ন হয়নি বলে মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল মহল। ফলে চলমান শতভাগ সীম রি-রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন করতে আরো অন্তত একমাস সময় প্রয়োজন বলে মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরদের দায়িত্বশীল মহল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঐসব দায়িত্বশীল কর্মকর্তাগণের মতে ‘গত প্রায় ১৮ বছরে দেশে মোবাইল ফোনের যে বিশাল নেটওয়ার্ক ও গ্রাহক তৈরী হয়েছে, এত স্বল্প সময়ে তার পুনঃনিবন্ধন অকল্পনীয়’।
একাধিক সেল ফোন গ্রাহকের মতে, ‘সরকার যদি জনগণের দুর্ভোগ লাঘব হ্রাসের কথা চিন্তা করে, তবে অবশ্যই এর জন্য আরো সময় দিতে হবে’ । তাদের মতে ‘যারা ঠা-া ঘরে বসে সব সিদ্ধান্ত জনগণের ওপর চাপিয় দেন, তাদের রাস্তায় ঘুরে দেখা উচিত সাধারণ মোবাইল গ্রাহকগণ সিম রি রেজিষ্ট্রেশনে কি দুর্ভোগ মাথায় করে এ দুঃসহ গরমে রাস্তার পাশে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে কাজটি করছেন’। সীম পুনঃ নিবন্ধনের নামে এধরনের দুর্ভোগ অসহনীয় বলে মন্তব্য করে এক্ষত্রে সময় সীমা বৃদ্ধি না করার সিদ্ধান্তে অটল থাকাকে কোন ‘জনকল্যাণ মুখী কাজ নয়’ বলেও মন্তব্য করেছন একাধিক গ্রাহক।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন