দিনের খেলা শেষ। মাঠকর্মীরা ব্যস্ত মাঠ পরিচর্যায়। মাঠের চারপাশ ঘুরে রানিং করতে থাকা নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমনকে দেখে এক সাংবাদিকদের রসিকতা, ‘দ্বিতীয় ইনিংসে নামবেন নাকি তিন নম্বরে?’ হাবিবুল জবাব দিলেন, ‘নামলে এরচেয়ে ভালো করতাম’। এই রসিকতায়ও মিশে থাকল শ্লেষ। জিম্বাবুয়ের গড়পড়তা বোলারদের বিপক্ষে এমন নিদারুণ ব্যাটিং ব্যর্থতার আসলে কি ব্যাখ্যাই বা থাকতে পারে।
১১০, ১২৩, ৪৩, ১৪৪, ১৪৯, ১৬৮ পরে গতকাল ১৪৩। সর্বশেষ সাত টেস্ট ইনিংসে এই হলো বাংলাদেশের রান। টানা সাত ইনিংসে বাংলাদেশ গুটিয়ে গেল দুশো রানের নিচে। তারমধ্যে মাত্র একবার পেরুতে পেরেছে দেড়শো। ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অতি টার্নিং উইকেট ছিল, ওয়েস্ট ইন্ডিজে খেলতে হয়েছে পেস-বাউন্সে ভরা দূরুহ উইকেটে। ওই ছয় ইনিংসের তবু ব্যাখ্যা ছিল। কিন্তু এবার ‘দুর্বল’ প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ের জন্য জুতসই উইকেটে কেন এই হাল? সেটা জানার জন্য তো দলের কাউকে লাগবে। সংবাদ সম্মেলনে দলের প্রতিনিধি হয়ে এলেন তাইজুল ইসলাম। বেচারা বোলার। সাড়ে তিন বছর পর পাঁচ উইকেট পেয়েছেন সকালে। তার কাছে ব্যাটিং নিয়ে জানতে চাওয়ারও আসলে কিছু নেই।
তবু বোলার হলেও তো বোঝা যায় উইকেট ব্যাটিং বান্ধব, না বোলিং সহায়ক। তাইজুল এক কথায় পরিষ্কার করে দিয়েছেন তা। তার মতে দেড়শোর নিচে গুটিয়ে যাওয়ার মতো তো নয়ই, উইকেট ছিল বরং ব্যাটিং সহায়কই, ‘উইকেট খুব কঠিন ছিল না। উইকেট কিছুটা মন্থর ছিল। আপনি এই উইকেটে ফ্ল্যাট উইকেট বলতে পারেন।’ তাইজুলকে হয়তো শিখিয়ে পড়িয়ে পাঠানো হয়েছে। এসব পরিস্থিতিতে তার মতো ক্রিকেটারদের তেমন কিছু বলার থাকে না। ওয়েস্ট ইন্ডিজে করুণ দশার পর দলে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি ছিল কিনা এই প্রশ্নেও ‘না’ বোধক। আবার জিম্বাবুয়েকে পেয়ে তবে অতি আত্মবিশ্বাস ছিলো কিনা, এই প্রশ্নেও ‘না’ বোধক জবাব দিয়েছেন তিনি। সেইসঙ্গে কমন একটা উত্তর তো আছেই, ক্রিকেটে সব কিছুই হতে পারে। তাইজুলও এর বাইরে গেলেন না, ‘ক্রিকেটে এমন হয়, কিছু দিন আসে যেদিনটা আমাদের পক্ষে যাবে না। হয়তো আমাদের প্রথমে দুইটি উইকেট পড়ে যাওয়ার পর এমন হয়েছে।’
আর মাত্র ৩ উইকেট পেলেই ছাড়িয়ে যাবেন মাশরাফি বিন মুর্তজাকে। এবারের ৬ উইকেট মিলয়ে পেছনে ফেলে দিয়েছেন ডানহাতি পেসার শাহাদাৎ হোসেন রাজীবকে। তাইজুলের সামনে সুযোগ তালিকার তিন নম্বরে ওঠার। মাশরাফি তার ক্যারিয়ারে ৩৬ টেস্ট খেলে নিয়েছেন মোট ৭৮টি উইকেট। আজ দ্বিতীয় ইনিংসে ৪টি উইকেট পেলেই ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ম্যাচে দশ উইকেট নেয়ার পাশাপাশি মাশরাফিকেও টপকে যেতে পারবেন তাইজুল। ৭৮ উইকেট পেতে বর্তমানে টেস্ট না খেলা মাশরাফি যেখানে বোলিং করেছেন ৫১ ইনিংস, সেখানে এখনো পর্যন্ত তাইজুলকে ২০ ম্যাচে ৭৫ উইকেট নিতে বোলিং করতে হয়েছে মাত্র ৩৫টি ইনিংসে।
সিলেটে বাংলাদেশের ভাগ্যে কি আছে সেটি সময়ই বলে দেবে, তবে ভেন্যুর অভিষেক টেস্টটি যে তাজুলের নাম লেখা থাকবে সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন