শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

সান হোসে’তে বাংলাদেশী দম্পতি খুন : দুই সন্তান গ্রেফতার

প্রকাশের সময় : ১৬ এপ্রিল, ২০৩০, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:৫৬ এএম, ৩০ এপ্রিল, ২০১৬

ইনকিলাব ডেস্ক : পিতা-মাতাকে হত্যার সন্দেহে সান হোসে’র পুলিশ হাসিব বিন গোলাম রাব্বিকে তিনদিন খোঁজার পর প্রেফতার করেছে। তার ১৭ বছর বয়সী ভাইকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। অঙ্গরাজ্যের সান হোসে শহরের নিজ বাড়ি থেকে ২৪ এপ্রিল শনিবার প্রকৌশলী গোলাম রাব্বি (৫৯) ও তাঁর স্ত্রী হিসাব রক্ষক শামিমা রাব্বির (৫৭) গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশের পাশে পুলিশ একটি চিরকুটও উদ্ধার করে তাতে লেখা ছিল, ‘দুঃখিত আমার প্রথম হত্যাকাÐটি বিরক্তিকর হয়ে গেল।’
সান হোসে পুলিশ বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, এই খুনের জন্য দায়ী হাসিব বিন গোলাম রাব্বি (২২) এবং তার ১৭ বছর বয়সী ভাই তদন্তে এটা উদঘাটনের পর এই ভ্রাতৃদ্বয়কে সান হোসে থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় ছোট ভাইয়ের নাম প্রকাশ করা হয়নি যেহেতু সে কমবয়সী। পুলিশের বিজ্ঞপ্তিতে তদন্ত সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়নি। তাদেরকে সান হোসে কাউন্টি কারাগারে আটক রাখা হয়েছে এবং শুক্রবার হাসিবকে আদালতে হাজির করার কথা। তার ছোট ভাইয়ের ব্যাপারে আদালতের তারিখ এখনো ঠিক হয়নি।
এই বাংলাদেশি দম্পতির লাশ তাদের বাসভবনে পাওয়া যায়। কয়েকদিন তাদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ না হওয়ায় বন্ধুরা এই দম্পত্তিকে খুঁজতে এসে বাড়িতে তাদের লাশ দেখার পর পুলিশে খবর দেওয়া হয়। লাশের পাশেই একটি চিরকুট পাওয়া যায়।
রোববার সকালে গোলাম রাব্বির বাড়িতে বন্ধুরা একটি কাচের দরজা খোলা দেখতে পান। ঘরে ঢুকতেই তারা দেখেন রক্তাক্ত মৃতদেহ কাঠের মেঝেতে পড়ে আছে। এ সময় নিহত দম্পতির ১৭ ও ২২ বছর বয়সী দুই ছেলে বাড়িতে ছিল না বলে জানিয়েছেন তাদের বন্ধুরা।
ঘটনা তদন্তকারী সান হোসে পুলিশ জানায়, ঘটনার পর পরই মনে করা হয়েছিল, পরিচিত কেউ এ খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে। রাব্বি ও শামিমা স্থানীয় ইসলামী এবং বাংলাদেশি স¤প্রদায়ের নানা তৎপরতায় সক্রিয় ছিলেন। তাঁরা পাশের এভারগ্রিন ইসলামিক সেন্টারে নামাজ পড়তে যেতেন। শুরুতেই পুলিশ বলছিল যে এটি বিদ্বেষপ্রসূত হামলা নয়।
এছাড়া তদন্ত কর্মকর্তারা ওই বাড়ির দেয়ালে আরেকটি বার্তা দেখতে পান। তাতে লেখা, ‘তোমার মতো আমি মিথ্যাবাদী হতে পারব না। আমি ওদের (মা-বাবা) অজ্ঞাতে অথবা সম্মতি ছাড়া কাউকে ভালোবাসতে পারব না।’
ঘটনার পর পরই এ দম্পতির ছোট ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে বড় ছেলেকেও আটক করে পুলিশ।
হাসিবকে দ্য সানফ্রান্সিকো ক্রনিকল’র সঙ্গে সংক্ষেপে কথা বলার অনুমতি দেওয়া হয়, এতে সে পুরো ঘটনা বলতে আগ্রহ প্রকাশ করে। কারাগারের ভেতরে হাতকড়া পড়া অবস্থায় সে বলে, যা ঘটেছে তা সবাইকে জানাতে চাই তবে আইনজীবীর উপস্থিতি ছাড়া আমি কিছুই বলতে পারবো না। সে আরও বলে, সবচেয়ে ভালো হয়, কেউ যদি ঘটনা পুরোপুরি জানতে চায় তাহলে তাকে বিচার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
সে কেবল একটি কথাই বারবার বলেছে যে তার ছোট ভাই এই ঘটনার সঙ্গে জাড়িত নয়। সে সম্পূর্ণ নিরাপরাধ।
সোমবার তার ছোট ভাই স্থানীয় এভারগ্রিন ভ্যালি হাইস্কুলে উপস্থিত ছিল। সে সময় তার ১৬ বছর বয়সী এক ক্লাসমেট লক্ষ্য করে যে সে খুবই চুপচাপ। ওই ক্লাসমেট বার্তা সংস্থা এপিকে এ কথা জানায়।
অপরদিকে, সিবিএসের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে হাসিবের বন্ধু ম্যাথিউ কুচ দাবি করে হত্যাকাÐের পর হাসিব তার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল। পরে পুলিশ আটক করে। কুচ আরো দাবি করে যে হাসিব নিজের এবং পরিবারের নিরাপত্তার আশংকা থেকে এই ঘটনা ঘটায় বলে তাকে জানায়। হাসিব আমাকে বলেছে যে, সে তার পিতার মাথায় গুলি করতে চায়নি যেহেতু সেটা অসন্মানের কারণ তার চাওয়া ছিল যে মুখমÐল অক্ষত অবস্থায় যেন তাকে দাফন করা হয়। সে আরো দাবি করে যে, এই খুনের পেছনে হাসিবের হয়তো কোনো মোটিভ ছিল।
কুচকে হাসিব আরো বলেছিল যে, কয়েক মাস ধরে কেউ নাকি তার ভেতরে আসতো ও তাকে নির্যাতন করতো এবং পিতা-মাতাকে হত্যা না করা পর্যন্ত এটা বন্ধ হবে না।
নিহত গোলাম রাব্বির ভাতিজা গোলাম মোস্তাকিম সানফ্রান্সিসকো ক্রনিকলকে বলেন, তিনি কখনো নিহত পিতা-মাতা ও তাদের সন্তানদের মধ্যে কখনো কোনো অস্বাভাবিকতা বা মানসিক সমস্যা দেখেননি। আমার জানা মতে তাদের কোনো টেনশনই ছিল না। তারা ছিল খুবই শান্ত স্বভাবের এবং সন্তানরাও খুবই চমৎকার। পিতা-মাতার সঙ্গে তারা সব সময় অত্যন্ত মিশুক ছিল। তিনি জানান, এ ঘটনায় মানসিকভাবে তিনি ভেঙে পড়েছেন।
কমিউনিটির সদস্যরা অভিযুক্ত ভ্রাতৃদ্বয়কে নিরপরাধ বলে মনে করে। এজন্য তারা তাদের জন্য প্রার্থনা করছে। তাদের প্রার্থনা খুনী যে কেউ হোক সন্তানরা যেন না হয়।
এভারগ্রিন ইসলামিক সেন্টারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল জুকা বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, রাব্বি-শামীমা ছিল খুবই চমৎকার দম্পতি। এটা এমন এক ট্র্যাজেডি যা কখনো কেউ কল্পনাও করতে পারে না। আমরা সবাই তাদের জন্য এখন আল্লাহর কাছে কেবল দোয়াই করতে পারি।
উল্লেখ্য, কয়েক দশক আগে বাংলাদেশকে থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেন রাব্বি। এই দম্পতি বন্ধুবৎসল ও শান্তিপ্রিয় ছিলেন বলে জানিয়েছে তাদের বন্ধুরা। তাদের সঙ্গে কারো কোনো বিরোধ ছিল কি না সে বিষয়টি অবশ্য নিশ্চিত করতে পারেননি তারা। রাব্বিকে নিজেদের একজ সক্রিয় সদস্য হিসেবে দাবি করে। এভারগ্রিন ইসলামিক সেন্টারের আরেক সদস্য ফয়সাল ইয়াজাদি বলেন, ‘তিনি মসজিদের কাছেই থাকতেন। যেভাবে তাদের মৃত্যু হলো, তা কোনোভাবেই মনে নেওয়া যায় না। তাদের এই মর্মান্তিক মৃত্যুতে কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সূত্র : এবিসি নিউজ, ফক্স নিউজ, ওয়াশিংটন পোস্ট, এপি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন