বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে আনতে বাধা খেলাপি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ নভেম্বর, ২০১৮, ৭:৫৬ পিএম

দেশে শিল্পায়ন ও কর্মস্থান বাড়াতে সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসার ঘোষণা দেয় সরকার। ঋণে ৯ এবং আমানতে ৬ শতাংশ সুদহার প্রথমে ১ জুলাই পরে ৯ আগস্ট কার্যকর করার কথা বলা হয়। কিন্তু ঘোষিত এ হার ৩৯টি ব্যাংক গত সেপ্টেম্বরেও কার্যকর করতে পারেনি। বিআইবিএমে এ সংক্রান্ত একটি গবেষণাপত্রেও বিষয়টি উঠে আসে। গবেষণাপত্রটির উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে কয়েকজন আলোচক বলেন, এখনও ৯ শতাংশের উপরে সুদ কাটছে বেশিরভাগ ব্যাংক। তবে ঋণের সুদ সিঙ্গেল ডিজিটে নামাতে বড় বাধা উচ্চ খেলাপি ঋণ। কারণ এশিয়ার মধ্যে সব চেয়ে বেশি খেলাপি বাংলাদেশে। এছাড়া দেশে প্রয়োজনের তুলনায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বেশি হওয়ায় অসুস্থ্য প্রতিযোগিতাও বেড়েছে। এসব কারণে কষ্ট অব ফান্ড বেড়ে যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৮ নভেম্বর) রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট বিআইবিএমের সপ্তম বার্ষিক ব্যাংকিং সম্মেলনে একটি গবেষণাপত্রে সুদহার সিঙ্গেল ডিজিট অতিক্রমের বিষয়টি উঠে আসে। গবেষণাপত্রটির উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক ড. মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান। হাবিবুর রহমান বলেন, ২০১৭ সালে দেশের ব্যাংকিং খাতের গড় সুদের হার ছিল ৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ। যা আগের বছর ২০১৬ সালে ছিল ১০ দশমিক ২৬ শতাংশ। অন্যদিকে ব্যাংকগুলোর গড় খেলাপি ঋণের হার ২০১৬ সালে ছিল ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং ২০১৭ সালে তা কিছুটা কমে ১১ দশমিক ৪১ শতাংশে দাঁড়ায়। হুট করেই ব্যাংকের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসা সম্ভব নয়। এটা বাস্তবায়ন করতে সময় লাগবে বলেও জানান তিনি।
বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি প্রফেসর হেলাল আহমেদ বলেন, শুধু ঘোষণা দিয়েই সিঙ্গেল ডিজিট বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। সিঙ্গেল ডিজিট বাস্তবায়নের সঙ্গে অনেক বিষয় অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তার মধ্যে খেলাপি ঋণ সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে অসুস্থ্য প্রতিযোগিতা সিঙ্গেল ডিজিট বাস্তবায়ন না হওয়ার অন্য আরেকটি কারণ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিআইবিএমের প্রফেসর নেহাল আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশে যেখানে ২ থেকে ৩ শতাংশ ¯েপ্রড রেট (ঋণ-আমানতে সুদহারের ব্যবধান)। সেখানে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে ¯েপ্রড রেট ৪ থেকে ৫ শতাংশ। এর প্রধান কারণ খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পাওয়া। খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে না আসলে ¯েপ্রড রেট কখনোই নিম্নমুখী হবে না।
গত বুধবারের সম্মেলনে বাংলাদেশ, চীন, থাইল্যান্ড ও শ্রীলংকার খেলাপি ঋণের একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়। তাতে দেখা যায়, ২০১১ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সব সময়ই বাংলাদেশের খেলাপি ঋণ বেশি ছিলো। সর্বশেষ ২০১৭ সালে বাংলাদেশে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় বিতরণ করা ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণ ছিলো ৯ দশমিক ৩০ শতাংশ (জুন ২০১৮ পর্যন্ত ১০ দশমিক ৪১ শতাংশ), যেখানে চীনের খেলাপি ঋণ ১ দশমিক ৭৪ শতাংশ, শ্রীলংকার খেলাপি ঋণের হার ২ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং থাইল্যান্ডের খেলাপি ঋণের হার ছিলো ৩ দশমিক ০৭ শতাংশ।
বিআইবিএমের আরেক সুপারনিউমারারি প্রফেসর ইয়াসিন আলি বলেন, কিছু ব্যাংক পুঁজিবাজারে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে। সে কারণে ব্যাংকিং খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে আসবে না।
এছাড়া আর্থিক অন্তর্ভূক্তির চিত্র তুলে ধরে একটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মো. আনোয়ারুল ইসলামের নেতৃত্বে ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্টের উপপরিচালক বীরেন্দ্র চন্দ্র দাস ও বিধান চন্দ্র সাহা। গবেষণাপত্রে দেখা যায়, দেশে ব্যাংক হিসাবধারীর সংখ্যা বেড়েছে। ২০০৯-২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত কৃষকসহ সুবিধাবঞ্চিত মানুষের ১ কোটি ৭৯ লাখ ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে। ব্যাংকিং খাতের সর্বমোট ৯ কোটি ২ লাখ হিসাবের মধ্যে ক্ষুদ্র আমানতী হিসাবের পরিমাণ ৮ কোটি ১৩ লাখ, যা মোট হিসাবধারীর ৯০ দশমিক ১২%। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে ১০ বছরে ক্ষুদ্র আমানত হিসাবের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ২ দশমিক ৩৭ গুণ বা ২৩৭%। অপরদিকে একই সময়ে বৃহৎ হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে ৩ দশমিক ০৪ গুণ বা ৩০৪%। ক্ষুদ্র আমানতী হিসাবে জমা আছে মোট আমানতের মাত্র ৬% টাকা কিন্তু বড় আমানত হিসাবে (যা মোট হিসাবের ১০%) জমা রয়েছে ৯৪% টাকা। ২০০৯ সালে ক্ষুদ্র আমানতী হিসাবে জমা ছিল মোট আমানতের ১৫% টাকা। অর্থাৎ সময়ের সঙ্গে ক্ষুদ্র আমানত হিসাব এবং মোট স্থিতি বাড়লেও এর তুলনায় বড় আমানতের স্থিতির প্রবৃদ্ধি ছিল ব্যাপক। এতে বোঝা যাচ্ছে-ধনী এবং গরীবের বৈষম্য বড় আকার ধারণ করেছে।
এবারের বার্ষিক ব্যাংকিং সম্মেলনে দুই দিনে চারটি সেশনে মোট ২২টি প্রবন্ধ উপস্থাপিত হয়। দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞ, ব্যাংকার, গবেষক এবং শিক্ষার্থীরা এসব সেশনের আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। ২০১২ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে বড় এ অনুষ্ঠানটি আয়োজন করছে বিআইবিএম। এবার সপ্তম ব্যাংকিং সম্মেলন।###শব্দ-৬২৬

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন