বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

অর্ধযুগ পর যানজটমুক্ত বেনাপোল

আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে বড় ধরনের প্রভাব

বেনাপোল অফিস : | প্রকাশের সময় : ৯ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

দীর্ঘ অর্ধযুগ পর দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলকে যানজট মুক্ত করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর নিদের্শে গঠিত পরামর্শক কমিটির উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও পরিবহন শ্রমিকদের বৈঠকের পরপরই বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হয় যানজটমুক্ত অভিযান।

বেনাপোল চেকপোস্ট এলাকা থেকে প্রাইভেট কার, ইজিবাইক ও অবৈধ যানবাহনের স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করা হয়। কাস্টমস সহকারি কমিশনার মাসুদ, পুলিশ, বিজিবি, আনসার, সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশন, ট্রাক মালিক সমিতি, ট্রাক ও ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়ন উচ্ছেদ অভিযানে অংশ নেয়। এসব অবৈধ যানবাহন স্ট্যান্ডের কারণে দীর্ঘদিন ধরে দু’দেশের মধ্যে ব্যাহত হচ্ছিল আমদানি রফতানি বাণিজ্য।
বেনাপোল বন্দর দিয়ে ইতিপূর্বে ৫শ’ ট্রাক মালামাল আমদানি হতো ভারত থেকে। বর্তমানে আমদানি কমে দাড়িয়েছে ৩শ’ ট্রাকে। যদিও বেনাপোল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে রেডিমেট গার্মেন্টসসহ দ্বিগুন পরিমান পণ্য রফতানি হচেছ ভারতে। গত মাসের শেষ দিকে ভারতের দিল্লীতে অনুষ্ঠিত ভারত বাংলাদেশ জয়েন্ট গ্রুপ অব কাস্টমস এর মিটিংএ বেনাপোল বন্দর দিয়ে দু দেশের মধ্যে আমদানি রফতানি কমে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

বেনাপোল চেকপোস্ট এলাকায় অবৈধ প্রাইভেট কার স্ট্যান্ড, ইজিবাইক স্ট্যান্ড থাকায় ভারত থেকে আসা পণ্য বোঝাই ট্রাক ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে থাকতো এখানে। ফলে ক্রমেই কমে আসতে থাকে আমদানি পণ্যবোঝাই ট্রাকের সংখ্যা। গতকাল সকালে বন্দরের সামনের সড়ক থেকে ট্রাক চেসিস সরিয়ে বন্দরের অভ্যন্তরে নতুন ট্রাক টার্মিনালে নেয়া হলে সড়ক যানজটমুক্ত হয়। ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের মাঝে ফিরে আসে স্বস্তি। তাদের মতে, বন্দর কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনার কারণেই বেনাপোলে এই পণ্য ও যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। বেনাপোল বন্দর এলাকায় যানজটের কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ায় ব্যবসায়ীদের মাঝে দেখা দেয় হতাশা।

কলকাতা থেকে বেনাপোল বন্দরের দূরত্ব মাত্র ৮০ কিলোমিটার এবং সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল হওয়ায় দেশের আমদানি পণ্যের সিংহভাগ আসে বেনাপোল বন্দর দিয়ে। স্বল্প সময়ে এবং কম খরচে আমদানি পণ্য দেশে আনতে পারায় এ বন্দরটি খুব দ্রুতই ব্যবসায়ীদের পছন্দের বন্দরে পরিণত হয়। বন্দরে স্থান সঙ্কটের কারণে পণ্যজটে আক্রান্ত হতে থাকে বেনাপোল বন্দর। বিপাকে পড়েন বন্দর কর্তৃপক্ষ। আর পণ্যজটের সাথে সাথে বন্দর এলাকায় বাড়তে থাকে যানজটও। বেনাপোল বন্দরের দেড় কিলোমিটার এবং ভারতের পেট্রাপোল বন্দর থেকে চাকদা রোডের ২৩ কিলোমিটার পর্যন্ত আমদানি পণ্যবাহি ট্রাকের জট লেগেই আছে।
ঘন্টার পর ঘন্টা আটকা পড়ে থাকে শত শত ট্রাক। ভারতের রপ্তানিকারকরা তাদের পণ্য বোঝাই ট্রাক পেট্রাপোল বন্দরে আসার পর থেকেই বাংলাদেশি আমদানিকারকদের কাছ থেকে প্রতিদিন ডেমারেজ বাবদ ট্রাক প্রতি আড়াই হাজার রুপি ডেমারেজ আদায় করে থাকেন। এমন ডেমারেজ দিতে হয় ১৫ থেকে ২০ দিন। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা এসব সমস্যা নিরসনে কলকাতা কাস্টম হাউজ এজেন্ট এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে পত্র দেন কলকাতাস্থ বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনারকে। চিঠিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহবান জানানো হয় চেকপোস্টে যানজট সমস্যা সমাধানের। বেনাপোল সি এন্ড এফ এজেন্ট এসোসিয়েশন বেনাপোল বন্দর এলাকায় যানজট দূর করতে এবং ভারতে যাতায়াতকারী দেশি-বিদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রীদের ভোগান্তি নিরসনে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়কে ২টি বাইপাস সড়ক নির্মাণের জন্য পত্র দিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মহোদয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। মন্ত্রী সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীকে জরুরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেন। তারপরও নিরসন হয়নি বন্দরে যানজট।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে আধুনিক চেকপোস্ট এবং বেনাপোল বন্দরে নবনির্মিত প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল উদ্বোধনের ভিডিও কনফারেন্সের সময় ভারত ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দু-দেশের বন্দর উন্নয়নের জন্য একমত প্রকাশ করেন। সে সময় বেনাপোল সি এন্ড এফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বেনাপোল বন্দরের সার্বিক বিষয সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। বন্দরে ভয়াবহ স্থান সংকট দেখা দেয়ায় ভারত থেকে আমদানি করা শত শত ট্রাক ও বাস চেসিস বন্দরের প্রাধন সড়কে যত্রতত্র পড়ে থাকায় দেখা দেয় ভয়াবহ যানজট। গত দু মাস ধরে বন্দরের সামনের একটি সড়ক ট্রাক চেসিস’র দখলে থাকে। বারবার বন্দর কর্র্তপক্ষকে তাগিদ দেয়া সত্বেও কোন ফল হয়নি। যদিও বেনাপোল বন্দর থেকে সরকার প্রতিবছর ৭ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করে থাকে। তারপরও বন্দরে তেমন একটা উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি বলে ব্যসায়ীদের অভিযোগ। যানজট নিরসনের পরপরই আজই আমদানি বেড়ে ৩শ’ থেকে ৪শ’ ট্রাকে দাঁড়িয়েছে।
বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসেন চৌধুরী জানান, দু’দেশের জয়েন্ট গ্রুপ অব কাস্টমস এর মিটিং এ বেনাপোল চেকপোস্টকে যানজট মুক্ত করার আহবান জানানো হয় ভারতীয় কাস্টমস এর পক্ষ থেকে। যানজটের কারণে আমদানি কমে রাজস্ব আয়ও কমে যাচ্ছিল। বিজিবি, পুলিশ, আনসার সিএন্ডএফ এজেন্টস ও ট্রাক শ্রমিকদের সহযোগিতায় চেকপোস্টকে যানজটমুক্ত করায় আমদানি বাড়তে শুরু করেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন