বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

বালু উত্তোলনে বেহাল করতোয়া

কোনোভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না

পীরগঞ্জ (রংপুর) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৩ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

রংপুর-দিনাজপুর জেলাকে বিভক্ত করে প্রবাহিত করতোয়া নদীর দু’ধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। কোনোভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না বালু উত্তোলনকারীদের। ফলে ভাঙছে নদীর পাড়, বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, গাছপালা, ফসলি জমি, সর্বস্বান্ত হচ্ছে নদীপাড়ের নিরীহ মানুষ। গতকাল রোববার সরেজমিন উপজেলার করতোয়া নদীবেষ্টিত চকভেকা গ্রামে এ অবস্থা লক্ষ করা গেছে। শুধু চকভেকা গ্রামেই নয়, করতোয়ার ধার ঘেঁষা পীরগঞ্জ উপজেলার তিন ইউনিয়নের ১২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এ অবস্থা বিরাজ করছে। কর্তৃপক্ষ জানায়, সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) দপ্তর থেকে ওই এলাকায় ৩৭ জন বালু উত্তোলনকারীর নামের তালিকা করে তাদের নোটিশ দেয়া হলে তালিকাভুক্তদের দৌড়ঝাপ শুরু হয়। এরপর কি এক অজ্ঞাত কারণে সেই প্রক্রিয়া থেমে যায়। ফলে আবারো শুরু হয় বালু উত্তোলন। অবৈধ বালু উত্তেলনকারীদের মধ্যে এলাকার প্রভাবশালী, জনপ্রতিনিধি এমনকি রাজনৈতিক ব্যক্তিও রয়েছেন। উপজেলার চতরা ইউনিয়নের করতোয়া নদী ঘেঁষা গ্রাম চকভেকা।

তিন শতাধিক পরিবারের বাস ওই গ্রামে। নদীবেষ্টিত গ্রামটির মানুষের একমাত্র পেশা কৃষি। তাদের কৃষি জমির বেশির ভাগই নদীর দু’পাড়ে। যা গ্রাস করে যাচ্ছে এক সময়ের খরস্রোতা প্রমত্তা করতোয়া নদী। গতকাল রোববার দুপুরে নদী ভাঙনকবলিত ওই এলাকায় গেলে গ্রামবাসীর মধ্যে এনছার আলী (৬০), নুরুল ইসলাম (৭৫), হোসেন আলী (৬৫), সেরাজ উদ্দিন (৭০) জানান, এই গ্রামে তাদের সাতপুরষের বাস। আজ থেকে পাঁচ বছর আগেও নদীর অবস্থান ছিল প্রায় অর্ধ কিরোমিটার দক্ষিণে। প্রতি বছর পালাক্রমে প্রতিযোগিতামূলক স্যালো মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে তাদের আবাদি জমি, গাছপালা, ফলের বাগান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। তারা আরো জানান, তাদের বাধা উপেক্ষা করে বালু তোলায় নদীর ভাঙন বসতভিটা ছুঁই ছুঁই করছে। আরেকবার বর্ষা এলে তাদের ঘরবাড়িগুলো নদীগর্ভে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

একই গ্রামের বাসীন্দা চতরা ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার শাহজামালের পুত্র সবুজ মিয়া (৩৫) , আব্দুল কাদেরের পুত্র রেজাউল করিম (৪০) ও আব্দুর রশিদের ছেলে সুজন মিয়া (৩০) পৃথক পৃথকভাবে বালু তোলা মেশিন স্থাপন করে লোকজন নিয়ে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বালু তোলায় মেতে উঠেছে। এই বালু তোলাকে কেন্দ্র করে এলাকায় একাধিকবার সংঘর্ষ হয়েছে। হয়েছে একটি হত্যা মামলাও। তারপরও থেমে নেই বালু তোলা। ওই গ্রামের গৃহিণী জাহানারা বেগম(৫৫) বলেন, নদীভাঙনের ফলে আমার বিয়ের বছরে শ^শুর চকভেকার গ্রামের আরেক স্থান থেকে উঁচা জায়গা মনে করে এই জায়গায় এসে বাড়ি করেন। বালু তোলার কারণে নদীভাঙন বাড়ির কাছে এসেছে। স্থানীয় বাসীন্দা আজিজার রহমান (৮৫) বলেন, ছেলে বয়স থেকে বুড়ো হয়ে গেলাম এখানকার বালু তোলা বন্ধ হলো না। নদীভাঙন ঠেকানোরও ব্যবস্থা কেউ করল না। চতরা ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক শাহীন বলেছেন, চতরা ইউনিয়নটি করতোয়া নদীবেষ্টিত। ভাঙন শুধু চকভেকা গ্রামেই নয়, এই ভাঙন ইউনিয়নের চন্ডিদুয়ার, কুয়াতপুর, মাটিয়ালপাড়া, ঘাষিপুর, কুমারপুর, বাটিকামারী, বদনাপাড়া গ্রামকেও গ্রাস করছে। এসব ভাঙন রোধে অচিরেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম এ মান্নান বলেন, আমি নতুন এসেছি। এসব কোনো তথ্যই জানা নেই। অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন