হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে আলোড়ন তুলেছেন আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া-তনয় ড. রেজা কিবরিয়া। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে কৌতূহল বিরাজ করছে তার প্রার্থিতার ঘোষণা নিয়ে।
ড. রেজা কিবরিয়া বিগত ১/১১-এর সময়ে সংস্কারপন্থি হিসেবে আওয়ামী লীগ থেকে ছিটকে পড়েন। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের লবিং করেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হন। গতকাল তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তিনি নিজেই এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
ড. রেজা কিবরিয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনয়ন দিলে শতভাগ নিশ্চিত তিনি ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবেন। হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করার ইচ্ছা পোষণ করছেন।
ড. রেজা কিবরিয়া বর্তমানে জাতিসংঘে কাজ করছেন এবং কম্বোডিয়া সরকারের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবেও কর্মরত আছেন। তার বাবা শাহ এএমএস কিবরিয়া ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জের বৈদ্যেরবাজারে এক জনসভায় গ্রেনেড হামলায় নিহত হন। এরপর ২০০৬ সালে রেজা কিবরিয়া আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পান। পরে সংস্কারপন্থি দলে চলে যাওয়ায় তার পরিবর্তে ২০০৮ সালে দেওয়ান ফরিদ গাজীকে এ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়। পরে ২০১০ সালে দেওয়ান ফরিদ গাজী মৃত্যুবরণ করলে উপনির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী শেখ সুজাত মিয়া নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় জাতীয় পার্টির এমএ মুনিম চৌধুরী বাবু এ আসন থেকে নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের রাজনীতি ছেড়ে তিনি ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী কেন হলেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে রেজা কিবরিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ ১০ বছর ধরে যেভাবে দেশ পরিচালনা করছে, তার সঙ্গে তিনি একমত নন। তাঁর আদর্শের সঙ্গে মিল নেই। তিনি বলেন, আমার বাবা শাহ এ এম এস কিবরিয়া ও আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা যে আদর্শ লালন করতেন, আওয়ামী লীগ এখন সেই জায়গায় নেই। অর্থনীতিবিদ রেজা কিবরিয়া জানান, তাঁর বাবাকে ২০০৫ সালে হত্যার পর বিএনপির সরকারের সময় এবং পরবর্তীকালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিচার করা হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের ১০ বছরেও এ মামলার সুষ্ঠু তদন্ত বা বিচার করার কোনো উদ্যোগ নেয়নি দলটি।
রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘কী কারণে আওয়ামী লীগ সরকার উদ্যোগ নেয়নি, তা দেশের মানুষ আন্দাজ করতে পারছেন। মামলার আংশিক তদন্তকাজ করে তারা আমাদের জোর করে এ তদন্ত মেনে নেওয়ানোর চেষ্টা করে। এমনকি মামলার বাদী সাংসদ আবদুল মজিদ খান আমার মাকে ধমক দিয়ে বলেছিলেন, এ তদন্তই মেনে নিতে হবে। তিনি আমার মাকে এ ধমক দেওয়ার সাহস কোথা থেকে পান?’
রেজা কিবরিয়া দেশবাসীর উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘এবার দেশের মানুষ বলুক, আওয়ামী লীগের প্রতি আমার আনুগত্য থাকা উচিত কি না?’ অর্থনীতিবিদ বলেন, গণফোরামের সভাপতি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। তিনি হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনে নির্বাচন করবেন। তিনি বলেন, আমার বাবার স্বপ্ন ছিল হবিগঞ্জ-১ আসনে নির্বাচন করার। আমি সেই স্বপ্ন এবার বাস্তবায়ন করতে চাই। কারণ, এলাকাটি অবহেলিত একটি জনপদ। এলাকার মানুষের জীবনমানে গুণগত পরিবর্তন আনতে চাই। রেজা কিবরিয়া বলেন, তিনি ও তাঁর বাবা জাতিসংঘে কাজ করেছেন। তবে দেশের জন্য তাঁদের অন্য রকম ভালোবাসার টানে দেশ ছেড়ে অন্য কোথাও স্থায়ী হননি। তিনি সাংসদ হলে নবীগঞ্জ-বাহুবল এলাকাকে দেশের অন্যতম এলাকা হিসেবে গড়ে তুলবেন বলে জানান।
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের আজ সাক্ষাতকার শুরু
স্টাফ রিপোর্টার
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষের মনোনয়ন পেতে বিএনপির মনোনয়ন ফরম কিনেছেন ৪ হাজার ৫৮০ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী। গত সোমবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন পেতে ফরম কিনেছেন এবং পূরণ করে তা নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমাও দিয়েছেন। যেসব প্রার্থী মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছে তাদের সাক্ষাতকার শুরু হচ্ছে আজ। চলবে আগামী ২১ নভেম্বর পর্যন্ত। রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সকাল ৯টায় প্রথম দিন রংপুর বিভাগের পঞ্চগড়-১ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মাধ্যমে শুরু হবে এই সাক্ষাৎকার গ্রহণ। পরবর্তীতে একে একে রংপুর বিভাগের বাকী সংসদীয় আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাতকার গ্রহণ করবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত মনোনয়ন কমিটি। একই দিনে রাজশাহী বিভাগের সাক্ষাতকার নেওয়া হবে। সাক্ষাৎকারের সময় মহানগর, জেলা, উপজেলার সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি উপস্থিত থাকবেন। এরপর পর্যায়ক্রমে বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট ও বৃহত্তর ঢাকা বিভাগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাতকার গ্রহণ করা হবে। প্রত্যেক আসনে যতজন ব্যক্তি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তাদের সবার একসাথে সাক্ষাতকার নেয়া হবে। সাক্ষাতগ্রহণকালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মোবাইলে কথা বলবেন। তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশীদেরকে নির্দেশনা দিয়ে বলবেন যিনিই মনোনয়ন পান তার পক্ষে সবাইকে একসাথে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান, সংসদীয় আসন অনুযায়ি পঞ্চগড়-১ আসনটি প্রথম হওয়ায় সেই আসন দিয়েই সাক্ষাতকার গ্রহণ করা হবে। মনোনয়ন ফরম কেনা এবং জমা দেয়ার সময় যেমন নেতাকর্মী, সমর্থকদের নিয়ে মিছিল সহকারে এসেছিলেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। সাক্ষাতকারের অনুষ্ঠানে এর বিপরীত চিত্র থাকবে। সেখানে প্রার্থীদের আসতে বলা হয়েছে কর্মী ও সমর্থক ছাড়াই। বরং মনোনয়ন প্রত্যাশী তাদের সমর্থকদের সাথে করে আনলে তা অসদাচরণ গণ্য হবে। মনোনয়ন প্রত্যাশীদেরকে সাক্ষাতের সময় আবেদন ফরম জমাদানের রশিদ আনতে বলা হয়েছে। সাক্ষাতকারের সময় প্রার্থীদের সামনে মনোনয়ন কমিটির সদস্যরা ছাড়াও সংশ্লিষ্ট মহানগর ও জেলাধীন নির্বাচনী এলাকার বিএনপি’র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকগণও উপস্থিত থাকবেন।
সাক্ষাতকারের সময়: ১৮ নভেম্বর রোববার সকাল ৯টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত রংপুর বিভাগ। একই দিন দুপুর আড়াইটা থেকে রাজশাহী বিভাগ। ১৯ নভেম্বর সোমবার সকাল ৯টায় থেকে দেড়টা পর্যন্ত বরিশাল বিভাগ। দুপুর আড়াইটা থেকে খুলনা বিভাগ। ২০ নভেম্বর মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিভাগ।দুপুর আড়াইটা থেকে কুমিল্লা ও সিলেট বিভাগ। ২১ নভেম্বর বুধবার সকাল ৯টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর বিভাগ। দুপুর আড়াইটা থেকে ঢাকা বিভাগ।#
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন