বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

গ্রিন জোন থেকে বিক্ষোভকারীরা বিতাড়িত

প্রকাশের সময় : ৩ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : বাগদাদের পার্লামেন্ট ভবনে হামলা চালানো বিক্ষুদ্ধ শিয়ারা ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় গ্রিন জোনে অবস্থানের পর গত রোববার ওই এলাকা ত্যাগ করলেও তারা পুনরায় ফিরে আসবেন বলে হুমকি দিয়েছেন। ফলে সৃষ্ট সঙ্কট থেকে বর্তমান ইরাকি নেতৃত্ব খুব সহজে রেহাই পাচ্ছেন না বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। গত শনিবার ইরাকের প্রভাবশালী শিয়া নেতা মোকতাদা আল-সদরের হাজারো বিক্ষুব্ধ সমর্থক পার্লামেন্ট ভবনে চড়াও হন। এমপিরা সরকারে সংস্কার আনার ক্ষেত্রে আবারো ব্যর্থ হওয়ায় ওই শিয়ারা রাজধানীর উচ্চ নিরাপত্তা এলাকা গ্রিন জোনের উঁচু বেষ্টনী ভেঙে পার্লামেন্টে ঢুকে পড়েন। বিক্ষোভকারীরা এমপিদের পার্লামেন্ট ত্যাগে বাধা দেন ও দুর্নীতিবিরোধীসহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। এ সময় তারা আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন। অনেক বিক্ষোভকারীকে সংসদের বিভিন্ন কক্ষ, চেয়ার, এমপিদের ডেস্ক ও গাড়ির গ্লাস ভাঙচুর করতে দেখা যায়। এতে ভবনের ভেতরে আটকা পড়া সংসদ সদস্যদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। একই দিন রোববার ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবাদি পার্লামেন্ট ভবনে হামলাকারীদের খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন বলে রাষ্ট্রীয় আল-ইরাকিয়া টিভি চ্যানেল জানিয়েছে।
এদিকে, একই দিন শিয়া নেতা মোকতাদা আল-সদরের দপ্তর এক বিবৃতিতে অষ্টম শতাব্দীর প্রখ্যাত শিয়া ইমাম মুসা আল-কাদিমের মৃত্যুবার্ষিকীর সম্মানে সমর্থকদের পার্লামেন্ট ভবন থেকে ঘরে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ প্রদান করে। বিবৃতিতে বলা হয়, আগামী শুক্রবার থেকে প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকারের পদত্যাগ দাবিতে আবারো আন্দোলন শুরু হবে। যদি এই দাবি পূরণ করা না হয় তাহলে তারা আগাম নির্বাচনের দাবি জানাবেন। এই দাবিও যদি আদায় না হয় তাহলে তারা দেশজুড়ে সর্বাত্মক অবরোধ ঘোষণা করবেন বলে বিবৃতিতে বলা হয়।
খবরে বলা হয়, ইরাকের পার্লামেন্টে ভবনে ঢুকে তছনছ করার ঘটনায় শিয়া বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তারের হুকুম দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী। এর আগে শত শত শিয়া বিক্ষোভকারী বাগদাদে পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকে দখল নেয়। তারা গ্রিন জোনের ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে। ইরাকি পার্লামেন্টে যে অচলাবস্থা চলছে তার প্রতিবাদে কট্টরপন্থি শিয়া মুসলিম নেতা মোকতাদা আল সদরের সমর্থকরা এই বিক্ষোভে যোগ দেয়। প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল আবাদি বলেছেন, যারা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে এবং সরকারি কাজে আঘাত হেনেছে তাদের সবাইকে আটক করা হবে। এই বিক্ষোভের পর রাজধানী বাগদাদে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। মার্কিন দূতাবাসের কাছে নিরাপত্তা বাহিনীকে টিয়ার গ্যাস ছুঁড়তে দেখা গেছে। বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট ভবন দখলের পর তারা ভবনটির বাইরে শনিবার রাতে ক্যাম্প বসায়। রোববারও অনেক বিক্ষোভকারীকে সেখানে দেখা গেছে। এমপিদের বহনকারী গাড়ি লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়তে দেখা গেছে বিক্ষোভকারীদের। বাগদাদে পার্লামেন্ট ভবন দখলে নেয়ার পর ভবনের বাইরে অবস্থান নেয় শিয়া বিক্ষোভকারীরা। শিয়া নেতা সদর ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল আবাদির ওপর চাপ দিচ্ছেন যাতে মন্ত্রী-পরিষদের সদস্যদের বরখাস্ত করে সে জায়গায় দল নিরপেক্ষ টেকনোক্র্যাটদের মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো এ ধরনের পরিবর্তনের বিরোধী। এ নিয়ে পার্লামেন্টে অচলাবস্থা চলছে।
শিয়াপন্থিরা ইরাকের পার্লামেন্টে ব্যাপক তা-ব চালানোর পর পরবর্তী সহিসংতা প্রতিরোধে রাজধানী বাগদাদে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। এখনো বিক্ষোভকারীরা সুরক্ষিত গ্রিন জোনে ক্যাম্প বসিয়ে অবস্থান করছেন বলে আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে। এলাকাটিতে মার্কিন দূতাবাসসহ আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভবন রয়েছে। তবে মার্কিন দূতাবাস এখন সুরক্ষিত আছে বলে জানা গেছে। জরুরি অবস্থা জারির পর বাগদাদের সবগুলো সড়ক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে অপারেশন কমান্ড। বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণে নিরাপত্তা বাহিনী টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করেছে। তবে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট হায়দার আল আবাদি। ইরাকি টেলিভিশনের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সরকারের পুনর্গঠনের দাবিতে বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট ভবনের ভেতর ঢুকে পড়ে। এ সময় তারা পতাকা উড়িয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেয় ও চেয়ার ভাঙচুর করে। অনেক বিক্ষাভকারীকে গাড়ির গ্লাস ভাঙচুর করতে দেখা যায়। এ সময় ভবনের ভেতরে আটকা পড়া সংসদ সদস্যদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ফুটেজে আরো দেখা যায়, এক বিক্ষোভকারী বলছেন ইরাকের ইতিহাসের নতুন যুগের সূচনা হলো। গত ১৩ বছর ধরে তারা আমাদের শোষণ করে আসছে, বলেন আরেক বিক্ষোভকারী। কয়েক মাস ধরে বিক্ষোভ প্রদর্শনের পর শনিবার কট্টরপন্থি শিয়া নেতা মোকতাদা আল সদরের সমর্থকরা গ্রিন জোনের ব্যাড়িকেড ভেঙে পার্লামেন্ট ভবনের ভেতরে ঢুকে পড়ে। মোকতাদা আল সদর ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল আবাদিকে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের বরখাস্ত করে তাদের জায়গায় নিরপেক্ষ টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী নিয়োগ দেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো এ পরিবর্তনের বিরোধীতা জানিয়ে আসছে। এদিকে, প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল আবাদি পার্লামেন্ট এলাকা ত্যাগ করে নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে বিক্ষোভ করতে বিক্ষোভকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হামলা ও অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর অবস্থার পর নতুন এ রাজনৈতিক সংকট দেশটিকে আরো অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকেই নিয়ে যাচ্ছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। আল জাজিরা, সিএনএন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন