মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মুক্তাঙ্গন

প্লাস্টিক শিল্পে নীরব বিপ্লব

প্রকাশের সময় : ২৭ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইফতেখার আহমেদ টিপু : নব্বই দশক থেকে পোশাক শিল্পের পাশাপাশি প্লাস্টিক শিল্পেও নীরব বিপ্লব ঘটেছে বাংলাদেশে। তৈরি পোশাক শিল্পের সাফল্য তো রূপকথার কাহিনীকেও হার মানায়। নিঃস্বজনের রাজা হয়ে ওঠার উপমাই এক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়। নব্বই দশকের আগে বংলাদেশের মানুষ পশ্চিমা বিশ্বের পুরনো পোশাকের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল ছিল। পদ্মা মেঘনা যমুনা বুড়িগঙ্গা পাড়ের সেই দেশই এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। এ দেশে প্লাস্টিক শিল্পের যাত্রা শুরু সেই পঞ্চাশ দশকের শুরুতে। হাঁটি হাঁটি পা পা করে এ শিল্প এতটাই এগিয়েছে যে, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ১২তম প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানিকারক দেশ।
উদ্যোক্তারা বলছেন, পোশাক শিল্পের মতো আনুকূল্য পেলে প্লাস্টিক পণ্য দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাতে পরিণত হবে। পঞ্চাশ দশকের শুরুতে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে গড়ে ওঠে প্লাস্টিক শিল্প। নব্বই দশক পর্যন্ত এ দেশে নিম্নমানের প্লাস্টিক পণ্যই উৎপাদিত হতো। বিদেশি প্লাস্টিক পণ্যের জন্য দেশীয় বাজার ছিল অবারিত। এখন মানে ও বৈচিত্র্যে বাংলাদেশের প্লাস্টিক শিল্প এতটাই এগিয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত বিভিন্ন দেশে এ দেশে তৈরি পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। চীন, ভারতেও তা সমাদৃত হচ্ছে। এ শিল্পের উদ্যোক্তারা ২০২১ সাল নাগাদ রপ্তানি বাবদ ১০ হাজার কোটি টাকা আয়ের আশা করছেন। এ মুহূর্তে দেশে ২০ হাজার কোটি টাকার প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন ও বিপণন হচ্ছে। এ শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ১২ লাখ মানুষ জড়িত। সরকার শিল্পোদ্যোক্তাদের দাবির মুখে ধলেশ্বরী পাড়ে প্লাস্টিক শিল্পনগরী স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। যেখানে ৩৪৮টি প্লাস্টিক শিল্প স্থাপন করা সম্ভব হবে। এ শিল্পনগরীর কাজ শেষ হলে পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি এলাকায় যেসব প্লাস্টিক কারখানা রয়েছে তা স্থানান্তর করা সম্ভব হবে। দুর্ঘটনার আতঙ্ক থেকে রক্ষা পাবে পুরান ঢাকার লাখ লাখ মানুষ।
দেশের অর্থনীতির এই সম্ভাবনাময় খাতকে এগিয়ে নিতে সরকারি পর্যায়েও নানামুখী উদ্যোগ নিতে হবে। প্লাস্টিক পণ্যে বৈচিত্র্য এনে দেশি-বিদেশি ভোক্তাদের মন কীভাবে জয় করা যায় তা নিয়ে ব্যাপকভিত্তিক গবেষণাও প্রয়োজন। এ শিল্পের উন্নয়নে ব্যাপকভিত্তিক পরিকল্পনা নেওয়া হলে দেশ যেমন বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সক্ষম হবে তেমনি কর্মসংস্থানেও রাখতে পারবে কার্যকর অবদান।
দেশে ছোট, বড়, মাঝারি মিলিয়ে প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫ হাজারের বেশি। এসব কারখানা বা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৫ লাখ লোক তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। প্রায় সাড়ে ৪শ’ প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী রফতানি করে। এসব প্লাস্টিক কারখানার বেশির ভাগই গড়ে উঠেছে রাজধানী শহর ঢাকায়। কিছু রয়েছে চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জে। প্রায় ৫ লাখ লোক এ কাজের সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকলেও, এ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল এখন ২৫-৩০ লাখ লোক। পুরান ঢাকার প্রায় প্রতিটি ঘরেই গড়ে উঠেছে প্লাস্টিক কারখানা। এসব কারখানায় যারা কাজ করেন, তাদের অনেকেই এক সময় নিজেরাই কারখানার মালিক হয়ে যান। অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে স্বল্প পুঁজি নিয়েই এক সময় তারা কারখানা খুলে বসেন। এভাবে এরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়েও যান! সেক্ষেত্রে ক্রমবর্ধিষ্ণু এ শিল্প খাতটির প্রতি সরকারের আরও একটু সুদৃষ্টি আশা করাটা অনুচিত হবে না নিশ্চয়ই। কেননা এ প্লাস্টিক সামগ্রী উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে সরকারি কোষাগারে এরই মধ্যে জমা হচ্ছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা।
বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক পণ্যের চাহিদা মিটিয়ে তবেই বিদেশে রফতানি হচ্ছে আমাদের প্লাস্টিক পণ্য। তবে কিছু অপূর্ণতার জন্য এখনও সম্পূর্ণতা পায়নি প্লাস্টিক খেলনা সামগ্রীর ব্যাপারটি। এক সময় আমাদের দেশের প্লাস্টিক খেলনার প্রায় সবই আসত চীন থেকে। এখন ৬০ শতাংশ প্লাস্টিকের খেলনা তৈরি হচ্ছে দেশেই। আর একটু সহযোগিতা ৬০ শতাংশকে শত ভাগে পৌঁছে দেবে নিশ্চয়ই। প্রযুক্তিগত দিক থেকে যদি এ সহযোগিতার হাতটি সম্প্রসারিত হয়, তো আমরা শুধু চীন নয়, অনেক উন্নত দেশকেও পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে পারব।
ষ লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক নবরাজ

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন