দেশের পাঁচ জেলায় কথিত বন্দুকযুদ্ধে ৬ জন নিহত হয়েছেন। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত থেকে গতকাল পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে। নিহতের মধ্যে কক্সবাজারের টেকনাফে দুই, মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী, খুলনা, ময়মনসিংহ, সিলেটে একজন করে । পুলিশের দাবি, কক্সবাজারের টেকনাফে দুই দল মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে গোলাগুলিতে দুজন নিহত হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরো জানায়, মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীতে নিহত আবুল হোসেন ও সিলেটের শহীদ মিয়া একজন মাদক ব্যবসায়ী। ময়মনসিংহের ভালুকায় নিহত মোবারক হোসেন ডাকাত দলের সদস্য। এছাড়া, খুলনার দৌলতপুর এলাকায় দীর্ঘদিনের পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী মারুফ হোসেনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। -আমাদের ব্যুরো ও সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্য নিয়ে এ প্রতিবেদন :
ময়মনসিংহ ব্যুরো জানায়, ময়মনসিংহের ভালুকায় গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মোবারক হোসেন (৩৮) নামে একজন নিহত হয়েছেন। পুলিশের দাবি মোবারক ডাকাত দলের সদস্য। তার বিরুদ্ধে মাদক, চুরি ও ডাকাতিসহ ১০টি মামলা রয়েছে। মোবারক ভালুকা উপজেলার নয়নপুর গ্রামের মৃত মিয়ার উদ্দিনের ছেলে।
গোয়েন্দা পুলিশের ওসি শাহ কামাল হোসেন আকন্দ জানান, জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ভালুকার নয়নপুর গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে একটি পিস্তল ও চার রাউন্ড গুলিসহ মোবারক হোসেনকে গ্রেফতার করে। পরে রাতে তাকে নিয়ে তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী অস্ত্র উদ্ধারে গেলে মোবারক হোসেনকে ছিনিয়ে নিতে পুলিশের উপর হামলা করে ডাকাত দল। এ সময় মোবারক কৌশলে গাড়ি থেকে লাফিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে বন্দুকযুদ্ধে সে গুলিবিদ্ধ হয়। পরে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে একটি পাইপগান উদ্ধার করা হয়। এ সময় দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলেও জানিয়েছেন ওসি।
খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী ও হত্যা, চাঁদাবাজিসহ একাধিক মামলার আসামি মিরাজুল ইসলাম ওরফে মারুফ হোসেন ওরফে গরু মারুফকে (৪৩) গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর দৌলতপুরস্থ কার্তিককূল বালুর মাঠ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, ১টি পাইপগান, ১ রাউন্ড গুলি ও ৫৪ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে।
নিহত মারুফ দিঘলিয়া উপজেলার দেয়াড়া গ্রামের আব্দুল গফ্ফার শেখের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিলেন। দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মোস্তাক আহমেদ বলেন, কে বা কারা গরু মারুফকে গুলি করে হত্যা করেছে। খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে পড়ে থাকা জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে তার লাশ শনাক্ত করেন। তবে তার বিরুদ্ধে দৌলতপুর ও দিঘলিয়া থানায় সেনহাটির সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গাজী আব্দুল হালিম ও হুজি শহীদসহ একাধিক হত্যা, চাঁদাবাজিসহ অসংখ্য মামলা রয়েছে।
সিলেট ব্যুরো জানায়, সিলেটে র্যাবের সাথে ‘বন্ধুকযুদ্ধে’ শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তি হচ্ছেন মো. শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদ মিয়া। তিনি দক্ষিণ সুরমা থানার তেলিবাজার আহম্মদপুর গ্রামের দুলাল মিয়ার ছেলে। বুধবার ভোরে মোগলাবাজার থানার শ্রীরামপুর বাইপাস এলাকায় এ বন্ধুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।
র্যাব-৯ এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩ টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার শ্রীরামপুর এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান চালায় র্যাব-৯ এর একটি বিশেষ দল। এসময় মাদক ব্যাবসায়ীরা র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। র্যাবও পাল্টা গুলি চালালে শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী শহীদ গুলিবিদ্ধ হন। গুরুতর অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশী পিস্তল ও বিপুল পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত শহীদ মিয়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী বলে জানিয়েছে র্যাব।
মুন্সীগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়িতে র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে আবুল হোসেন নামে একজন নিহত হয়েছেন। গত বুধবার ভোর ৪ টায় সোনারং এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত আবুল হোসেন ১৮ মামলার আসামী ও একজন মাদক ব্যবসায়ী বলে দাবি করেছে র্যাব। এসময় ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, তিন রাউন্ড গুলি, ৫শ পিস ই্য়াবা নগদ টাকা ও একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
র্যাব-১১ নারায়নগঞ্জের উপ-পরিচালক মেজর আশিক বিল্লাহ জানান,বুধবার ভোরে গোপন সংবাদে টঙ্গীবাড়ির সোনরং এ মাদক বেচা কেনার খবর পেয়ে র্যাবের একটি দল অভিযান চালায়।ঘটনাস্থলে আবুল হোসেন তার অপর ৪/৫ জন সদস্য নিয়ে মিটিং করছিল। র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি চালালে, র্যাবও পাল্টা গুলি চালায়।এক পর্যায়ে আবুল হোসেনের সহযোগীরা পালিয়ে গেলে আবুল হোসেনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। তাকে দ্রæত টঙ্গীবাড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে। এ ঘটনায় আহত ২ র্যাব সদস্যকে টঙ্গীবাড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
টেকনাফ উপজেলা সংবাদদাতা জানান, টেকনাফে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের দু’গ্রæপের মধ্যে গোলাগুলিতে দুইজন নিহত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র ও ইয়াবা উদ্ধার করেছে পুলিশ । নিহতরা হলেন, টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের লেদা এলাকার মৃত আমির হামজার ছেলে আব্দুল আলীম (৩৬) এবং সাবরাং ইউনিয়নের কচুবনিয়া এলাকার আব্দুল করিমের ছেলে নজির আহমদ (৪০)।
গত বুধবার ভোররাত ৩টার দিকে উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের হারিয়া খালীর এক্সক্লুসিভ জোন সংলগ্ন বেড়িবাঁধ এলাকায় জিরো পয়েন্টে পুলিশ কুখ্যাত নজির ডাকাতের স্বীকারোক্তিতে তার আস্তানায় ইয়াবা বিরোধী অভিযানে গেলে তার সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে। এসময় পুলিশের এসআই মংছিং প্রæ (৩৮)খাইরুল আলম (৩৮), কনস্টেবল রুমন (৩৪) ও আব্দুস শুক্কুর (২২) আহত হয়। পুলিশও আতœরক্ষার্থে গুলিবর্ষণ করলে তার সহযোগীরা পালিয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল তল্লাশী চালিয়ে ১০ হাজার ১শ ৫০ পিস ইয়াবা ্ ৪টি দেশীয় অস্ত্র, ২১ রাউন্ড গুলি, ও রক্তাক্ত দুই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আহত পুলিশ সদস্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, নিহতরা একাধিক ডাকাতি, মাদকসহ নানা অপরাধে সম্পৃক্ত মামলার আসামী ছিল। তিনি আরো জানান, ‘ঘটনাস্থলের আশপাশে তল্লাশী করে পাওয়া যায় দেশীয় তৈরী ৩ টি বন্দুক, ৮ রাউন্ড গুলি ও ১০ হাজার ইয়াবা। উদ্ধার করা হয়। নিহতদের লাশ ময়নতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন