বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

দিন শেষের নায়ক তাইজুল-নাঈম

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

শেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হয়ে গিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দলীয় স্কোর তখন ২৫৯। গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কা তখন তিনশত রানের অনেক আগেই। কিন্তু আপাতমস্তক ব্যাটসম্যানই হয়ে গেলেন দুই স্পিনার তাইজুল ইসলাম ও নাঈম হাসান। যেন অভিন্ন পণ করেই এদিন মাঠে নেমেছিলেন তারা। এ দুই ‘ব্যাটসম্যানের’ বীরত্বেই চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন শেষে ৮ উইকেটে ৩১৫ রান করেছে বাংলাদেশ। প্রথম দিনের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হতে পারত মুমিনুল হকের আরও একটি সেঞ্চুরি। কিংবা শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের তিন ওভারের তাণ্ডব। কিন্তু তাইজুল ও নাঈমের বীরোচিত প্রতিরোধ ছাপিয়ে যাচ্ছে সবকিছুকেই। মুমিনুলের সেঞ্চুরির পর হঠাৎ এলোমেলো বাংলাদেশ গুছিয়ে উঠেছে শেষ বিকেলের উজ্জ্বল জুটিতে। প্রথম দুই সেশনে দাপট দেখানো বাংলাদেশ ভেঙে পড়েছিল শেষ সেশনে। কিন্তু দলকে গুঁড়িয়ে যেতে দেননি তাইজুল ও নাঈম।

গতকাল জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে গড়ানো দিনের তৃতীয় বলেই নেই প্রায় এক বছর পর টেস্ট দলে ফেরা সৌম্য সরকার। তার পর থেকে দুর্দান্ত ব্যাট করেছেন মুমিনুল। ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি করে দেশের ব্যাটসম্যান হিসেবে ছুঁয়েছেন তামিম ইকবালের সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির রেকর্ড। কিন্তু ১২০ রানের ঝকঝকে ইনিংসকে স্লান করে দিয়েছেন লেজের দুই ব্যাটসম্যান তাইজুল ও নাঈম। অবিচ্ছিন্ন ৬৬ রানের দারুণ এক জুটি গড়লেন। সবচেয়ে বড় কথা ১৬ ওভার ব্যাট করেছেন এ দুই ব্যাটসম্যান। ৮৬ বলে এসেছে এ জুটির পঞ্চাশ রান। সামলেছেন দ্বিতীয় নতুন বলও। ২৪ রান নিয়ে দায়িত্বশীল ব্যাট করা অভিষিক্ত নাঈম হাসানের সঙ্গে ক্রিজে আছেন ৩২ রান করা নাইট ওয়াচম্যান তাইজুল ইসলাম। নবম উইকেটে দুজনে মিলে তুলে ফেলেছেন মহামূল্যবান ৫৬ রান। যাকে দিনশেষে মুমিনুলের কাছে মনে হচ্ছে ‘ভাইটাল রান।’
আগের দিনই সাকিব আল হাসান ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ম্যাচটা হতে যাচ্ছে লো স্কোরিং। সেরকম হলে প্রথম ইনিংসে তিনশোই চাহিদা ছিল তার। ২৫৯ রানে ৮ উইকেট হারানোর পরও বাংলাদেশ ছাড়িয়ে গেছে তিনশো। বাংলাদেশের জন্যে সুখবর প্রথম দিন থেকেই উইকেটে মিলছে শার্প টার্ন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের গড়পড়তা স্পিনাররাই বারবার ধন্দে ফেলছেন ব্যাটসম্যানদের।

উইকেটে টার্ন মিলবে, এমন আশাতেই একাদশে চার স্পিনার নিয়ে নেমেছিল বাংলাদেশ। এই ধরনের পিচে আগে ব্যাট করার বিকল্প নেই। গুরুত্বপূর্ণ টস জিতে ব্যাট করতে নেমে এক বছর পর টেস্টে ফেরা সৌম্য সরকার প্রথম ওভারেই গায়েব। কেমার রোচের হালকা মুভমেন্টে বেরিয়ে যাওয়া বলে ডিফেন্সই করতে গিয়েছিলেন সৌম্য। বল ব্যাটে চুমু খেয়ে জমা পড়ে উইকেটকিপার ডরিচের গ্লাভসে।

এরপরের দুই ঘণ্টা মুমিনুল হকের সাবলীল ব্যাটিংয়ের সঙ্গে কাঁপাকাঁপি করেছেন ইমরুল কায়েস। ৩ আর ১৬ রানে দুবার জীবন দিয়ে বেঁচেছেন তিনি। তবে লাঞ্চের আগেই শেষ হয়েছে তার সংগ্রাম। ফিফটা না করা ইনিংসের সংখ্যা আরও একটি বাড়িয়ে ফেরেন ৪৪ রানে। আরেক প্রান্তে লাঞ্চের পরও দারুণ খেলে গেছেন মুমিনুল। চারে নামা মোহাম্মদ মিঠুনের সঙ্গে গড়ে উঠে তার ৪৮ রানের আরেক জুটি। জুটি ভাঙে মিঠুনের ভীষণ দৃষ্টিকটু শটে। উইকেটে সেট হয়েও এই ব্যাটসম্যান। দেবেন্দ্র বিশুকে ব্লগ করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন আকাশে তুলে।

ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরিতে নিজেকে রাঙানোর পর বড় কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন মুমিনুল। চলতি বছরের যৌথভাবে সবচেয়ে বেশি, দেশের হয়েও যৌথভাবে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি করে চা বিরতি থেকে ফেরার পরই ছন্দপতন। গ্যাব্রিয়েলের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল তাড়া করে থামেন ১২০ রানে। এরপরই যেন তুমুল ঝড়। গ্যাব্রিয়েল ফিরিয়ে আনলেন জুলাইয়ের সেই ট্রমা।

এই স্পেলেই ক্যারিবিয়ান পেসার ধসিয়ে দেন বাংলাদেশের মিডল অর্ডারের মেরুদণ্ড। মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সাকিব আল হাসানকে পরপর ফিরিয়েছেন ভেতরে ঢোকা বলে। ১৩ রানের ভেতর বাংলাদেশ হারায় চার উইকেট। ম্যাচের পরিস্থিতি বলে দিচ্ছিল প্রথম দিনই হয়ত ব্যাট করতে নামবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

কিন্তু সেখান থেকে দলকে টেনে তোলার চেষ্টায় সফল হয়েছে বাংলাদেশের লেট অর্ডার। মেহেদী হাসান মিরাজ ২২ রান করে বাঁহাতি স্পিনার ওয়ারিক্যানের বলে কাবু হলেও টিকে আছেন নাঈম-তাইজুল। বয়সভিত্তিক দলে নাঈমের ব্যাট চালানোর সুনাম আছে, তাইজুল তো টেস্টে প্রায়ই দেখিয়েছেন নিবেদন। তাদের পরিণত ব্যাটিং শেষ বিকেলে শান্তির সুবাতাস হয়েই যেন লেগেছে সাকিব আল হাসানের গায়ে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন