নির্বাচন কমিশন কর্তৃক আগামী ৩০ ডিসেম্বরের আগে ওয়াজ মাহফিল আয়োজন না করার নির্দেশনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ ও প্রতিবাদ করেছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ’র মহাসচিব শায়খুল হাদীস আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী। তিনি বলেছেন, নির্বাচন কমিশন যে সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করছে, আমরা বার বার বলে আসছি। ওয়াজ-মাহফিল নিয়ে কমিশনের এমন হঠকারি নির্দেশনায় সেটা আবারো প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন, ইসির এ নির্দেশনা সংবিধান বিরোধী। শনিবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে জমিয়ত মহাসচিব উপরোক্ত কথা বলেন। বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, সংবিধানে দেশের প্রতিটি নাগরিকের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। ধর্ম পালন, ধর্ম শেখা এবং শেখানো এ স্বাধীনতার আওতায় পড়ে। নির্বাচনের অজুহাত দিয়ে ইসি নাগরিকদের সাংবিধানের মৌলিক এ অধিকার কেড়ে নিয়ে জনমনে আলেম সমাজ ও ইসলামের প্রতি বিরূপ মনোভাব তৈরি করতে চাচ্ছে। দেশের আলেম-উলামা ও তৌহিদী জনতা ইসি’র এই অসাংবিধানিক নির্দেশনা মানতে পারে না।
আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই সরকারগুলো নানা অজুহাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিকদের ধর্ম পবিত্র ইসলামের নীতি-আদর্শ ও আচার-অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে একের পর প্রতিবন্ধকতামূলক সিদ্ধান্ত চাপানোর চেষ্টা করে আসছে। বর্তমান সরকারের আমলে গত ১০ বছর ধরে সেটা ভয়াবহ মাত্রায় রূপ নিয়েছে। দেখা গেছে, মুখে কুরআন-সুন্নাহ ও মদিনা সনদের কথা বলে বলে কার্যতঃ ইসলামী নীতি-আদর্শের গোড়া কেটে দেয়ার অপকৌশল গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, সংবিধান থেকে মহান আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাসের ধারা মুছে দিয়ে আমাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং রাষ্ট্রীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক ও পারিবারিক স্তরে ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক বহু নীতি ও সিদ্ধান্ত নানা অজুহাতে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি নানা নেতিবাচক প্রচারণা ও কৌশলে ইসলাম ও ধার্মিক মুসলমানদেরকে হেয় করা এবং উলামায়ে কেরাম ও তৌহিদী জনতার মধ্যে বিভেদ ও সন্দেহ তৈরি করে ঐক্য নষ্ট ও বহুধাবিভক্তির ষড়যন্ত্রও সমান তালে চলছে। তিনি বলেন, ওয়াজ-মাহফিলের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের হঠকারি নির্দেশনা সরকারের ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে নানা পদক্ষেপ ও বিরূপ মনোভাব তৈরির ধারাবাহিক চেষ্টার অংশ বলেই প্রতীয়মান।
আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, নির্বাচনকে উপলক্ষ্য করে ওয়াজ-মাহফিলে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার নজির শত শত বছরের ইতিহাসে নেই। বিশ্বের কোন দেশে নির্বাচনকে উপলক্ষ্য করে ধর্মীয় প্রচারণা সীমিত করার নির্দেশনা দিয়ে থাকে, এমন খবর কেউ কখনো শুনেনি। তিনি বলেন, যেখানে নির্বাচনকে উপলক্ষ্য করে প্রকাশ্যে নেতাকর্মীরা রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে থাকেন, সরকারের বিভিন্ন অন্যায্য কর্মকান্ডের সমালোচনা করে থাকেন, সেখানে ওয়াজ-মাহফিলের মতো কুরআন-হাদীসের বয়ানের নূরানী মাহফিলে নিষেধাজ্ঞা চাপানোর চেষ্টায় প্রমাণ হয়েছে, এই ইসি নাগরিক অধিকার হরণ ও ন্যায়-ইনসাফের পক্ষে কথা বলা বন্ধ করে সরকারের মসনদকে চিরস্থায়ী করার পাকাপোক্ত আয়োজন নিশ্চিত করছে।
তিনি বলেন, এ সরকারের আমলে মানুষের মৌলিক অধিকার তথা জান-মাল এবং ইজ্জত-আব্রুর নিরাপত্তা বলে কিছু নেই। ওয়াজ-মাহফিলে ইসলামের ন্যায়-নীতি ও আদর্শের কথা বলা হলে নির্বাচন কমিশন মনে করছে, সেটা সরকারের বিপক্ষে যাবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন