শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ঢাকা পাচ্ছে এলএনজি

গ্রিড লাইনে সফল কারিগরি টেস্ট গ্যাস সঙ্কট লাঘবের আশাবাদ, সমুদ্রসীমায় গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধানে নির্লিপ্ততায় বিশেষজ্ঞদের হতাশা

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ২৯ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

চট্টগ্রামের পর বহুল প্রতীক্ষিত এলএনজির (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) পেতে শুরু করেছে রাজধানী ঢাকা ও আশপাশ এলাকা। মহেশখালী দ্বীপের মাতারবাড়ী সংলগ্ন সমুদ্র উপক‚লে এলএনজি স্টেশন ও রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম হয়ে জাতীয় গ্রিড পাইপলাইনের মাধ্যমে গতকাল বুধবার গ্যাসের সরবরাহ ঢাকায় পৌঁছাতে শুরু করেছে। এর আগে গত প্রায় এক সপ্তাহ যাবৎ প্রয়োজনীয় যান্ত্রিক ও কারিগরি টেস্ট সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়। এলএনজি উৎসের গ্যাস সরবরাহের ফলে ঢাকায় দীর্ঘদিন ধরে বিরাজমান গ্যাস সঙ্কট অনেকাংশে লাঘব হবে এমনটি আশাবাদ ফুটে উঠেছে।
গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির লি. (জিটিসিএল) সূত্রে জানা গেছে, এলএনজি উৎসের গ্যাস প্রাথমিকভাবে ঢাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে দৈনিক ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। চট্টগ্রাম অঞ্চলে দেয়া হচ্ছে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। বর্তমানে মোট ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মিলছে এলএনজির উৎস থেকে। প্রতিদিন চট্টগ্রামে সরবরাহের পর বাড়তি কিংবা সাশ্রয়কৃত গ্যাসও পাবে ঢাকা। পরবর্তী সময়ে এলএনজি আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে বৃহত্তর ঢাকায় আরও বেশি পরিমাণে গ্যাস জোগান দেয়া সম্ভব হবে।
কাতার ছাড়াও কয়েকটি দেশ থেকে পেট্রোবাংলা কর্তৃক এলএনজি আমদানির প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। গ্যাসের চাহিদা পূরণ হলে দেশে বিশেষত চট্টগ্রাম ও ঢাকায় বিনিয়োগ, শিল্পায়ন ও রফতানিমুখী শিল্প-বাণিজ্যিক উৎপাদন আরো গতিশীল হবে। গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রসমূহ সচল রাখা এবং আবাসিক খাতে গ্যাসের চাহিদা পূরণে হবে সহায়ক।
তবে জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞগণ দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ অনুসন্ধান বিশেষ করে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের নিজস্ব পানিসীমা বৃদ্ধি পাওয়া সত্তে¡ও বিশাল সমুদ্রসীমায় (অফশোর) গ্যাস ক্ষেত্র আবিস্কারের বিষয়ে সরকারের নির্লিপ্ততায় হতাশা ব্যক্ত করে আসছেন। তারা উচ্চমূল্যের এলএনজি আমদানির ভারসাম্যহীন নীতিরও সমালোচনা করেছেন। কেননা এরফলে বর্ধিত মূল্যে গ্যাস কিনতে গিয়ে শিল্প-বাণিজ্যিক ও আবাসিক গ্রাহকদের ব্যয় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার লাগোয়া বঙ্গোপসাগরে মিয়ানমার সম্প্রতি সাতটি নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার ও গ্যাস উত্তোলন করছে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ সূত্র। তারা বলছেন, তাহলে স্বভাবতই বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় পর্যাপ্ত এমনকি আশাতীত পরিমাণে গ্যাস থাকার বিষয়টি সুনিশ্চিত। এই প্রাকৃতিক সম্পদের সময়োচিত সদ্ব্যবহার জাতীয় স্বার্থেই অপরিহার্য।
এদিকে কর্ণফুলী নদীর তলদেশের মধ্যদিয়ে (সাব-মেরিন) এলএনজির গ্যাস সরবরাহের জন্য সঞ্চালন লাইন বসানোর কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়। গত ২৬ নভেম্বর সঞ্চালন পাইপ লাইনের প্রি-কমিশনিংয়ের কাজ শেষ হলে পরদিনই পাইপলাইনে এলএনজির গ্যাস সরবরাহ কার্যক্রম শুরু করা হয়। প্রথম দফায় ঢাকায় দৈনিক ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্চে। জাতীয় গ্রিড পাইপলাইনে এলএনজি সরবরাহের পর গতকাল এলএনজি ঢাকায় পৌঁছায়। সরবরাহের ক্ষেত্রে আপাতত কোনো সমস্যা দেখছে না জিটিসিএল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় গ্রিড লাইনের মাধ্যমে আমদানিকৃত এলএনজির রূপান্তরিত গ্যাস সরবরাহের জন্য কক্সবাজারের মহেশখালী থেকে চট্টগ্রামের আনোয়ারা এবং আনোয়ারা-ফৌজদারহাট (সীতাকুন্ড) এই দুই ভাগে মোট ১২১ কিলোমিটার দীর্ঘ দুইটি সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে জ্বালানি বিভাগ। এর মধ্যে ৩০ সেন্টিমিটার ব্যাসের ৯১ কি.মি. দীর্ঘ মহেশখালী-আনোয়ারা সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কাজ চলতি বছরের মাঝামাঝি শেষ হয়। এই সঞ্চালন পাইপলাইনের মাধ্যমে বর্তমানে চট্টগ্রামে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে। অপর ৩০ কি.মি. দীর্ঘ ৪২ সেন্টিমিটার ব্যাসের আনোয়ারা-ফৌজদারহাট সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণের কাজ শেষ হয় স¤প্রতি। এটি জাতীয় গ্রিড পাইপলাইনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এই পাইপলাইন দিয়ে ঢাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে। সরাসরি গ্যাসের সরবরাহ আসছে মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলএনজি টার্মিনাল ও রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট থেকে।
বিগত ২৪ এপ্রিল আমেরিকান কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি কর্তৃক বৃহৎ জাহাজ ‘এক্সিলেন্স’ কাম ভাসমান টার্মিনাল, রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিটটি কাতার থেকে বাংলাদেশে আনা হয়। এই এলএনজি টার্মিনালসহ স্থাপনাটি মাতারবাড়ী সংলগ্ন সমুদ্র উপক‚লে। বিভিন্ন জটিলতা, যান্ত্রিক ত্রুটি-বিচ্যুতির পর অবশেষে গত ১৮ আগস্ট দেশে প্রথমবারের মতোই এলএনজির উৎসের গ্যাস সরবরাহ শুরু করা হয়। তবে পাইপলাইনের কর্ণফুলী সাব-মেরিন লাইন হয়ে আনোয়ারা-ফৌজদারহাট প্রান্তে জাতীয় গ্রিডের সাথে সংযোগের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় গত তিন মাসে শুধু চট্টগ্রামেই গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছিল। গত ৩ নভেম্বর হঠাৎ এলএনজি টার্মিনালের সাথে সংযুক্ত হাইড্রোলিক ভাল্ব অকেজো হয়ে পড়লে ১২ দিন গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকে। ইতোমধ্যে সিঙ্গাপুর থেকে আসা এক্সিলারেট এনার্জির বিশেষজ্ঞগণ ডুবুরিদের সহায়তায় ৪০ মিটার সমুদ্র তলদেশে সাব-মেরিন লাইনের ভাল্বটি মেরামত করেন। এরপর ১৫ নভেম্বর থেকে ফের গ্যাস সরবারাহ স্বাভাবিক হয়।
এক্সিলারেটের সাথে পেট্রোবাংলার চুক্তি অনুযায়ী বর্তমানে কাতারের রাসগ্যাস এলএনজি সরবরাহ করছে। সেই এলএনজি থেকে রূপান্তর প্রক্রিয়ায় জ্বালানি গ্যাস মিলছে দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তবে এক্সিলারেট ছাড়াও আগামী বছর সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে আরও এলএনজি সরবরাহের প্রক্রিয়া চলছে। দেশে বর্তমানে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে গ্যাসের সরবরাহ মিলছে ৩ হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট। দৈনিক প্রায় এক হাজার থেকে সোয়া এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি রয়েই যাচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন