বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

শঙ্কার জালে লিভারপুল

| প্রকাশের সময় : ৩০ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম


ছন্নছাড়া ‘সফরকারী’ লিভারপুল

গতবারের ফাইনালিস্ট দলকে নিয়ে এবারো যে বাড়তি উন্মদনা থাকবে এ আর নতুন কি। কিন্ত সেই প্রত্যাশা মেটাতে পারছে কই লিভারপুল। চলতি মৌসুমে প্রতিপক্ষের মাঠে একটি ম্যাচেও জেতেনি ইয়ুর্গুন ক্লপের দল। রেড স্টার বেলগ্রেডের মত দলের মাঠেও তারা হেরে বসে ২-০ গোলে। তার আগে নাপোলির মাঠে ১-০ গোলের পরাজয়। এবার পিএসজির মাঠে হারল ২-১ গোলে। শেষ ষোলয় নাম লেখাতে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে নাপোলির বিপক্ষে জিততেই হবে লিভারপুলকে। শুধু জিতলেই হবে না, মুখোমুখি লড়াইয়েও এগিয়ে থাকতে হবে। আশার কথা হলো, ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে তাদের ঘরের মাঠ আনফিল্ডে।

নেইমারের রেকর্ড
ইনজুরির অনিশ্চয়তা কাটিয়ে এদিন মাঠে ছিলেন পিএসজির দুই প্রাণভোমরা নেইমার ও কিলিয়ান এমবাপে। পুরোপুরি সুস্থ না হয়েও ম্যাচের গুরুত্বের কথা ভেবে কুচকির ইনজুরিকে পাত্তা দেননি বলে জানান নেইমার। একাদশে ছিলেন এমবাপেও। লিভারপুলের রক্ষণে আক্রমণের বান বইয়ে গোলও আদায় করে নেন নেইমার। ৩৭তম মিনিটে ব্রাজিল তারকার গোলে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় পিএসজি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এটি তার ৩১তম গোল। কোন ব্রাজিলিয়ান হিসেবে যা সর্বোচ্চ। ৩০ গোল করা কাকাকে টপকে রেকর্ডটি নিজের করে নিলেন পিএসজি ‘পোস্টার বয়’।
এর আগে ম্যাচের ১৩তম মিনিটে লিভারপুল প্রথম গোল হজম করে দলের প্রধাণ রক্ষণ সেনানী ভার্গিল ফন ডাইকের ভুলে। বল বিপদমুক্ত করতে গিয়ে উল্টো তা হুয়ান বার্নাটের পায়ে তুলে দেন ডাচ ডিফেন্ডার। বার্নাটের শট তাকিয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না গোলরক্ষক আলিসনের। প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে সফরকারীরা ব্যবধান কমায় জেমস মিলনারের পেনাল্টি গোলে। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, পিএসজির পোস্টে এটিই ছিল ক্লপের শিষ্যদের নেয়া একমাত্র শট! বিপরীতে নেইমার-এমবাপে-কাভানিরা শট নেন আটবার। মাসকিরানোসের একটি গোল অফসাইডের কারণে বাতিল না হলে আর আলিসন অবিশ্বাস্য কিছু সেভ না দিয়ে স্কোরলাইন আরো বড় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারত ফরাসি চ্যাম্পিয়নরা।
গ্রুপের অপর ম্যাচে ঘরের মাঠে রেড স্টার বেলগ্রেডকে ৩-১ গোলে হারায় নাপোলি। জোড়া গোল করেন মার্টিন্স। জিতেও অবশ্য ‘সি’ গ্রুপ থেকে এখনো শেষ আট নিশ্চিত করতে পারেনি কোন দলই। ৯ পয়েন্ট নিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে নাপোলি। শেষ ম্যাচে লিভারপুলের বিপক্ষে ড্র করলেই তাদের হিসাবটা মিলে যাবে। ৮ পয়েন্ট নিয়ে তাদের পরেই পিএসজি। শেষ ম্যাচে তাদের আতিথ্য দেবে রেড স্টার। ৬ পয়েন্ট নিয়ে আশা বাঁচিয়ে রেখেছে লিভারপুল।

মেসির রেকর্ড
পরের রাউন্ড নিশ্চিত হয়েছে আগেই। পিএসভির মাঠে বার্সেলোনার মিশনটি ছিল গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন নিশ্চিত করার। মেসি জাদুতে তা সহজেই করেছে কাতালান দলটি। অবশ্য সহজ বললে কিছুটা ভুল হবে। পিএসভির দুটি শট বারে লেগে ফিরে না আসলে এবং গোলরক্ষক মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগেন অমন দেয়াল না তুললে ম্যাচের ফল ভিন্নও হতে পারত। চলতি মৌসুমে বার্সার রক্ষণ যেন ঘুনে ধরা কাষ্ট।
ম্যাচের প্রথম এক ঘণ্টা যেন বল পোস্টে ঢুকতেই চাইছিল না। প্রতিপক্ষের রক্ষণে ট্রেডমার্ক দৌড়ে অনেকগুলো সুযোগ তৈরী করেন মেসি। পিএসভির খেলোয়াড়রাও অনেকবার চুল ছিড়েছে সুযোগ নষ্ট করার আফসোসে। অবশেষে ম্যাচের বয়স ঘণ্টা পেরুনোর পর আর আটকে রাখা যায়নি মেসিকে। বল নিয়ে ক্ষিপ্রগতিতে প্রতিপক্ষের রক্ষণে ঢুকে উসমান দেম্বেলের সঙ্গে ওয়ান টু খেলে জটলার মধ্য থেকেই জায়গা বের করে আচমকা শটে বল জালে পাঠান আর্জেন্টাইন জাদুকরকে।

চলতি মৌসুমে তিন ম্যাচে এটি তার ষষ্ঠ গোল। এই গোল দিয়ে তিনি পেরিয়ে গেছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে। টুর্নামেন্টে এটি তার ১০৬তম গোল। সব গোলই করেছেন বার্সেলোনার হয়ে। নির্দষ্ট কোন ক্লাবের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে যা সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১২১ গোল রোনালদোর। এর মধ্যে ১০৫টি রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে।
পিকের করা বার্সার দ্বিতীয় গোলটিও ছিল চমক জাগানিয়া। মেসির ফ্রিকিকে পা বাড়িয়ে বলের দিক পাল্টে জালে জড়িয়ে দেন পিকে। দেখে মনে হতে পারে যেন পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ীই সবকিছু হয়েছে। ‘মেসি প্রতি ম্যাচেই নতুন কিছু নিয়ে আবির্ভাব হয়’ জানিয়ে পিকে ম্যাচ শেষে বলেন, অনুশীলনে এটি ‘প্রাকটিস’ করা হয়। তবে মেসি বলেছেন ভিন্ন কথা। তার মতে, ‘এটা অনুশীলনে করা হয় না, সে মিথ্যে বলেছে। ফ্রি-কিকটা আসলে বাজে ছিল। পিকে সেখানে ছিল এবং গোলটা হয়েছে ভাগ্যক্রমে।’
৮২তম মিনিটে ডে জং একটি গোল শোধ দিলে শেষ সময়ে একধরণের আতঙ্ক নিয়েই ম্যাচ শেষ করে আর্নেস্তো ভালভার্দের দল।
‘বি’ গ্রুপের অপর ম্যাচটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল টটেনহ্যামের জন্য। ঘরের মাঠে ক্রিশ্চিয়ান এরিকসনের গোলে শেষ পর্যন্ত স্বস্তির জয় পায় স্পার্সরা। কিন্তু শেষ ম্যাচে তাদের দিতে হবে আরো কঠিন পরীক্ষা। ইন্টার যেখানে ঘরের মাঠে লড়বে পিএসভির বিপক্ষে, সেখানে টটেনহ্যামকে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে বার্সেলোনার দুর্গ ন্যু ক্যাম্পে। দুই দলের পয়েন্টই ৭ করে। তবে গোল ব্যবধানে এগিয়ে দুইয়ে টটেনহ্যাম। ১৩ পয়েন্ট নিয়ে সবার উপরে বার্সা।

অ্যাটলেটিকোর সঙ্গী ডর্টমুন্ড
‘এ’ গ্রুপে মোনাকোকে ২-০ গোলে হারিয়ে টুর্নামেন্টের পরের রাউন্ড নিশ্চিত করেছে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। প্রথমার্ধেই গোল দুটি করেন কোকে ও গ্রিজম্যান। ৮২তম মিনিটে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন স্তাফান সাভিচ। শেষ দিকে সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে পেনাল্টি মিস করে ব্যবধান কমানোর সুযোগ নষ্ট করেন রাদামেল ফ্যালকাও।
জার্মান ক্লাব বরুসিয়া ডর্টমুন্ডও পরের পর্বে উঠেছে বটে কিন্তু এদিন তারা ঘরের মাঠে গোলশূণ্য ড্র করে ক্লাব ব্রুগের সঙ্গে। ১২ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শীর্ষে ডিয়েগো সিমিওনের অ্যাটলেটিকো, ১০ পয়েন্ট ডর্টমুন্ডের। আর ‘ডি’ গ্রুপ থেকে শেষ ষোলই উঠেছে পোর্তো ও শালকে।


এক নজরে ফল
অ্যাটলেটিকো ২ : ০ মোনাকো
ডর্টমুন্ড ০ : ০ ক্লাব ব্রুগ
পিএসভি ১ : ২ বার্সেলোনা
টটেনহ্যাম ১ : ০ ইন্টার
নাপোলি ৩ : ১ রেড স্টার
পিএসজি ২ : ১ লিভারপুল
পোর্তো ৩ : ১ শালকে
রকোমতিভ ২ : ০ গালাতাসারাই

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন