বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আমানতদারীর গুণ অর্জন করা সকলের উচিত

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ৩০ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

আমানতদারীও প্রকৃতপক্ষে সত্যবাদিতা ও সত্যনিষ্ঠারই এক বিশেষ রূপ। বাংলা পরিভাষায় এর মর্মার্থ শুধু এতটুকুই মনে করা হয় যে, কেউ কোনো বস্তু কারো কাছে গচ্ছিত রাখলে তাতে কোনো রকম খেয়ানত করা অবিশ্বস্ততা প্রদর্শন না করা এবং সে লোকের দাবি মোতাবেক বা নিজের থেকে যেমনটি তেমনিভাবে প্রত্যার্পণ করে দেয়া। আর এটিও নিঃসন্দেহে একটি নৈতিক সৎকর্ম।
কিন্তু আরবী ভাষা ও কোরআনি পরিভাষায় আমানতের মর্মার্থ এর চাইতে অনেক বেশি ব্যাপক। যাবতীয় হক ও দায়-দায়িত্ব বিশ্বস্ততা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করা এবং প্রত্যেক ধর্তব্য ও বিবেচ্য বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা এর অন্তর্ভুক্ত। আমানতদারীর মর্মার্থের এ ব্যাপকতার কথা মনে রেখে এ প্রসঙ্গে কোরআনে আয়াতগুলোর প্রতি লক্ষ করুন।
সূরা নিসায় বলা হয়েছে, ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তোমাদের কাছে এবং তোমাদের দায়িত্বে যাদের আমানত রয়েছে, সেগুলো তাদেরকে প্রত্যর্পণ করে দাও।’ (সূরা নিসা : আয়াত-৫৮)। সুতরাং এ আয়াতের পরিপ্রেক্ষিতে প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য হলো এই যে, তার কাছে যদি কারো কোনো আমানত (গচ্ছিত থাকে কিংবা কারো সম্পদগত বা অসম্পদগত কোনো হক বা প্রাপ্য থাকে, তবে তা পুরোপুরি বিশ্বস্ততার সাথে পরিশোধ করে দেবে। তা পরিশোধ করতে গিয়ে কোনো রকম খেয়ানত ও শৈথিল্য করবে না।
তেমনিভাবে কারো কোনো গোপনীয়তা জেনে ফেললে, তাকেও আমানত বলেই গণ্য করবে এবং তা ফাঁস করা থেকে বিরত থাকবে। মোট কথা, আমানতের এই কোরআনি নির্দেশ এ ধরনের সমস্ত দিকই অন্তর্ভুক্ত। তদুপরি কোরআন মাজীদে আমানত পরিশোধ সংক্রান্ত এ হুকুম বা নির্দেশ ছাড়াও এর প্রতি এভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে যে, যথাযথভাবে আমানত পরিশোধকারীদেরকে সফলকাম ও জান্নাতি বলে অভিহিত করা হয়েছে।
সুতরাং সূরা মুমিনুন ও সূরা মাআরিজের প্রথম রুকুতে সাফল্যমÐিত ও জান্নাতবাসীদের গুণ-বৈশিষ্ট্য বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘আর যারা নিজেদের আমানসমূহ ও ওয়াদার প্রতি লক্ষ রাখে।’ (সূরা মুমিনুন : আয়াত-৮, সূরা মাআরিজ : আয়াত-৩২)। কোরআন মাজীদে আমানতদারী গুণের মহিমা প্রকাশ প্রসঙ্গে একে আল্লাহ, নবী-রাসূল এবং আল্লাহর নৈকট্যশীল ফেরেশতা হজরত জিবরাঈল আ. এর বিশেষ গুণ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
সূরা শুআরায় কয়েকজন রাসূলের আলোচনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, তারা তাদের উম্মতদের বলেছেন, ‘ইন্নি লাকুম রাসূলুন আমীন। ফাত্তাকুল্লাহা ওয়া তিয়ুওন।’ অর্থাৎ আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত আমনদার রাসূল। (আমার বিশেষ পয়গাম হলো এই যে), তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনীত নির্দেশাবলির আনুগত্য করো।’ (সূরা শুআরা : আয়াত-১৭৮ ও ১৭৯)। আর কোরআন মাজীদ সম্পর্কেও এই সূরা শুআরাতেই এক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘নাযযালা বিহির রুহুল আমীন’। অর্থাৎ, একে (কোরআনকে) নিয়ে রুহুল আমীন (আল্লাহ তায়ালার খাস আমানতদার ফেরেশতা জিবরাঈল) অবতীর্ণ হয়েছেন। (সূরা শুআরা : আয়াত-১৯৩)।
অতএব, আল্লাহ তায়ারার নবী-রাসূল এবং তার নৈকট্যশীল ফেরেশতাদের সাথে সামঞ্জস্য অর্জন, তাদের পবিত্র গুণ-বৈশিষ্ট্য ও চরিত্রে নিজেদের অংশগ্রহণ যাদের কাম্য, তাদের উচিত আমানদারীর গুণ অর্জন করা এবং তাদের দায়িত্বে যাদের যে হক ও দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে তা পুরোপুরি আমানতদারী সহকারে পূরণ করা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Ameen Munshi ৩০ নভেম্বর, ২০১৮, ১:১৬ এএম says : 0
শুকরিয়া। খুবই চমৎকার একটি প্রবন্ধ। এ থেকে মুসলিমরা অবশ্যই উপকৃত হবে।
Total Reply(0)
গাজী ৩০ নভেম্বর, ২০১৮, ১:১৭ এএম says : 0
মুমিন বান্দার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সে আমানতদার হয়। মুমিনের কাছে জীবনের সর্বাপেক্ষা সম্পদ হলো আমানতদারী। আমানতদারী একজন মুমিনের নিদর্শন। এ কারণে মুমিন নিজের জীবনের সবকিছু উৎসর্গ করে হলেও আমানতদারী রক্ষা করতে সচেষ্ট হয়।
Total Reply(0)
Mohammad Shah Alam ৩০ নভেম্বর, ২০১৮, ১:১৭ এএম says : 0
আমানতদারীর গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের আদেশ দিয়েছেন, আমানত তার হকদারকে প্রত্যাবর্তন করতে। তোমরা যখন মানুষের মধ্যে বিচারকার্য পরিচালনা করবে তখন ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে বিচার করবে। আল্লাহ তোমাদের যে উপদেশ দিচ্ছেন তা কত উত্কৃষ্ট আল্লাহ সর্বশ্রোতা আল্লাহ সর্বস্রষ্টা।’ (সূরা নিসা : ৪৮)।
Total Reply(0)
Nannu ৩০ নভেম্বর, ২০১৮, ১:১৮ এএম says : 0
আসুন আমরা সব ধরনের আমানত রক্ষা করি, খেয়ানতের মহামারী থেকে দূরে থাকি। আল্লাহ মেহেরবানি করে আমাদের সব ক্ষেত্রে আমানতদারী রক্ষা করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)
আমিন গাজী ৩০ নভেম্বর, ২০১৮, ১:১৯ এএম says : 0
ইসলামী জীবন পদ্ধতির সব কিছুর সঙ্গে আমানতদারির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনা, সরকারি ও বেসরকারি দাফতরিক কাজ-কর্ম, শিক্ষকতা, সমাজের নেতৃত্ব, ব্যবসা-বাণিজ্য, মজুরি, শ্রম-মেহনত, দেশপ্রেম ইত্যাদি সবই আমানত। তাই প্রত্যেকের জন্য আমানতদার হওয়া জরুরি। আমানতদার ব্যক্তি সমাজের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রশংসনীয়, সুনামি ও সুখ্যাত। আমানতদারি এমন এক মহৎ গুণ, যার ওপর উন্নতি ও সমৃদ্ধি নির্ভরশীল।
Total Reply(0)
আতিকুর রহমান ৩০ নভেম্বর, ২০১৮, ১:২০ এএম says : 0
হে ইমানদাররা, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা কোরো না এবং জেনেশুনে নিজেদের আমানতের খেয়ানত কোরো না। (সুরা আনফাল, আয়াত : ২৭)
Total Reply(0)
রুবেল ৩০ নভেম্বর, ২০১৮, ১:২১ এএম says : 0
আমানতদারিতাকে আল্লাহতায়ালা মোমিনের অন্যতম গুণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, 'এরা সেই লোক যারা আমানতের প্রতি লক্ষ্য রাখে এবং স্বীয় অঙ্গীকার হেফাজত করে।' (সূরা আল মুমিনুন : ৮)।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন