একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য কক্সবাজারের চার আসনে উৎসবমূখর পরিবেশে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিভিন্ন দলের ৩৪ জন। পর্যবেক্ষকদের মতে কক্সবাজারের সব আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকছে ধানে শীষ আর নৌকা।
বুধবার (২৮ নভেম্বর) শেষ দিনে উৎসবমুখর পরিবেশে রিটার্নিং কর্মকর্তা কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেনের কাছে
দলীয়ভাব মনোনয়ন পাওয়া এসব নেতারা মনোনয়নপত্র জমা দেন।
এর মধ্যে আছেন, কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে আটজন, কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনে ১২জন, কক্সবাজার-৩ (কক্সবাজার সদর-রামু) আসনে ছয়জন এবং কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে আটজন মনোনয়নপ্রত্যাশী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
নির্বাচন কমিশনের বিধি মতে ২৮ নভেম্বর ছিল আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন। শেষ দিনে কক্সবাজারের চার আসনের সব মনোনয়ন প্রত্যাশীরা তাদের মনোয়নপত্র জমা দিয়েছেন। অবশ্য শেষ দিনের আগেও মনোনয়পত্র জমা দিয়ে ফেলেছিলেন কয়েকজন প্রার্থী। সবমিলে ৩৪ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বলেই জানাগেছে।
কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আটজন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলম, বিএনপির মনোনীত প্রার্থী সাবেক এমপি এড. হাসিনা আহমদ, জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মৌলবী মোঃ ইলিয়াছ, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনে প্রার্থী আলী আজগর, বাংলাদেশ ওয়ার্কাস পার্টির মনোনীত প্রার্থী আবু মোঃ বশিরুল আলম, স্বতন্ত্র প্রার্থী বদিউল আলম, তানিয়া আফরিন ও মুহাম্মদ ফয়সাল।
কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ১২জন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, বিএনপির মনোনীত প্রার্থী সাবেক দু’বারের সংসদ সদস্য আলমগীর ফরিদ, জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ (কারান্তরীণ), জাতীয় পার্টির মোঃ মোহিবুল্লাহ, গণফ্রন্ট থেকে ড. আনসারুল করিম, মহেশখালী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু বকর ছিদ্দিক (কারান্তরীণ) ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মনোনিত প্রার্থী ড. জসিম উদ্দীন নদবী, ইসলামী ফ্রন্টের আবু ইউসুফ মুহাম্মদ মনজুর আহমদ, বিকল্পধারার শাহেদ সরওয়ার, ইসলামিক ফ্রন্টের এএম মাসুদুল ইসলাম মাসুদ, এনডিএম মোঃ শহীদুল্লাহ ও মোঃ জিয়াউর রহমান।
কক্সবাজার-৩ (কক্সবাজার সদর-রামু) আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ছয়জন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, বিএনপির মনোনীত প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল, জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী মুফিজুর রহমান, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ আমীন, কক্সবাজার পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি নজিবুল ইসলাম ও স্বতন্ত্রপ্রার্থী মোঃ হাছান।
কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আটজন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির স্ত্রী শাহীন আকতার, বিএনপির মনোনীত প্রার্থী সাবেক চার বারের সংসদ সদস্য ও সাবেক হুইপ শাহজাহান চৌধুরী, জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী মাস্টার এম.এ মঞ্জুর, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাওলানা মোঃ শোয়াইব, বিএনপি সমর্থিত সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবি সালাহ উদ্দীন, স্বতন্ত্র গফুর উদ্দীন, সাইফুদ্দিন খালেদ ও রবিউল হোছাইন।
সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীরা মনোনয়ন পত্র জমাদান নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয় এলাকা ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। সকাল থেকে বিপুল নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে প্রার্থীরা ওই দিন মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন। সকাল ১১টা থেকে একে একে প্রার্থীরা নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
দুপুরের দিকে মনোনয়নপত্র জমা দেন, শাহীন আকতার, আশেক উল্লাহ রফিক, আলমগীর ফরিদ, শাহজাহান চৌধুরী, লুৎফুর রহমান কাজল। বিকালে আসেন সাইমুম সরওয়ার কমল, ড. আনসারুল করিম ও মুফিজুর রহমান।
রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেন, ‘শেষ দিনে ৩৪ জন মনোনয়ন প্রত্যার্শী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এগুলো যাচাই-বাছাই করেই পূর্ণাঙ্গ মনোনিত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে।’
এদিকে পর্যবেক্ষকদের মতে কক্সবাজারের ৪টি আসনেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকা-ধানের শীষ তথা আওয়ামী লীগ বিএনপির মধ্যে।
বিতর্কিত ৫ জানুয়ারী নির্বাচনে কক্সবাজারের চকরিয়া- পেকুয়ার আসনটি জাপাকে দিয়ে অন্য তিনটি আসনই ছিল আওয়ামী লীগের দখলে। তবে এবারে ৫০ ভাগ সুষ্ঠু নির্বাচন হলেও কক্সবাজারের ৪টি আসনই আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হতে পারে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনে কিছুটা জটিল সমিকরণ রয়েছে। এ আসনটি জোটগতভাবে জামায়াতকে ছেড়ে দিয়েছে বিএনপি। তবে এ আসনে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী হামিদ আযাদ এখনো কারারুদ্ধ। এছাড়া তিনি আদৌ নির্বাচন করতে পারবেনকি না তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। এ আশঙ্কায় বিএনপি এখানে সাবেক এমপি আলমগীর ফরিদকে মনোনয়ন দিয়ে রেখেছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে বর্তমান এমপি আশেক উল্লাহ রফিককে। আলমগীর ফরিদ আর আশেক উল্লাহ রফিক পরষ্পর চাচা ভাতিজা হওয়ায় নৌকা ধানের শীষের কর্মীদের মাঝে দেকা যাচ্ছে একধরনের বিভ্রান্তি।
এদিকে আওয়ামী লীগ সরকার কক্সবাজারে বেশ কিছু মেগা প্রকল্পসহ শুরু করলেও কিছু শেষ হয়েছে আর কিছু শেষ হয়নি। নেতা-কর্মীরা মনে করছেন এসব বিবেচনায় জনগন নৌকার পক্ষেই রায় দেবেন।
অপর দিকে আওয়ামী লীগের ১০ বছরের গুম,খুন, মামলা- হামলা ও নির্যাতনের জবাব দেবে কজনগণ। সারা দেশের মত কক্সবাজারের ৪টি আসনেও নৌকা ঠেকাতে ধানের শীষে ভোট দেবেন বলেই মনে করে বিএনপি নেতারা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন