রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

সাধারণ ভোটাররা চায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন

বিদ্রোহী নিয়ে বেকায়দায় প্রধান দুই দল

প্রকাশের সময় : ৫ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আলতাফ হোসেন, বাগমারা (রাজশাহী) থেকে
রাজশাহীর বাগমারায় আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন জমে উঠেছে। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে প্রার্থীরা শেষ মুহূর্তের প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। উভয় দলের মধ্যেই প্রকাশ্যে গ্রুপিং থাকায় দলীয় প্রার্থীরা নির্বাচনে কতটুকু সফলতা লাভ করবেন তা সংশয় প্রকাশ করেছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। ভাসমান ভোটাররা দলীয় প্রার্থী বিবেচনা না করে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদেরকেই ভোট দিবেন বলে তারা জানাচ্ছেন। তবে ভোটাররা চায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। এখানে বুলেট নয় ব্যালটই হবে নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের হাতিয়ার। তবে বিএনপি ও আ.লীগের উভয় দলেরই প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নেই বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। কোনো কোনো ইউনিয়নে বিএনপি-আ.লীগের প্রার্থীদের চেয়ে বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্রপ্রার্থীরাই শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে বাগমারার ভোটাররা স্থানীয় এমপি ইঞ্জি এনামুল হকের মাড়িয়া ইউনিয়নকে। কারণ এখানে বিএনপি ও আ.লীগের মনোনীত প্রার্থীর চেয়ে বিএনপি ও আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরাই এগিয়ে রয়েছেন বলে এলাকার ভোটাররা জানান। ভোটারদের নজর থাকবে এই ইউনিয়নের ফলাফলের দিকে। তবে এলাকার সাধারণ ভোটাররা জানিয়েছেন সারা বাংলাদেশে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে যেভাবে জালিয়াতি, জাল ভোট, কেন্দ্র দখল, ফলাফল পাল্টানো হয়েছে সেই ধরনের নির্বাচন বাগমারাতে সাধারণ জনগণেরা হতে দিবেন না বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন। জনগণের মতামতই এখানে প্রতিফলিত হবে হলে সবাই আশা করছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয়া হচ্ছে। এখন শুধুই অপেক্ষার পালা। আগামী ৭ মে চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সরেজমিন নির্বাচনী এলাকা ঘুরে সাধারণ ভাটারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভোটের হিসাব-নিকাশ। কাচারি কোয়ালি পাড়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এখানে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক সাবেক চেয়ারম্যান আয়েনউদ্দিনের সাথে লড়াই হবে বিএনপির সমর্থিত বর্তমান চেয়ারম্যান ধানের শীষ ও জাতীয় পাটির সমর্থিত নাঙ্গল প্রতীকে মো. মোজাম্মেল হক এর মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হবে। দিপপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৬ জন। নৌকা প্রতীক নিয়ে বিকাশ চন্দ্র ভূমি ও ধানের শীষ নিয়ে আবুল হোসেন কবিরাজ এবং স্বতন্ত্রপ্রার্থী মোফাজ্জল হোসেনের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হবে। বাসুপাড়া ইউনিয়নে ৩ জন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরা হলেন লুৎফর রহমান প্রাং আওয়ামী লীগ নৌকা প্রতীক জিল্লুর রহমান ধানের শীষ ও সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ আ. জব্বার ম-ল আনারস প্রতীক এখানেও ত্রিমুখী লড়াই হবে। শুভডাঙ্গা ইউনিয়নে দুইজন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরা হলেন আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে আ. হাকিম ও বিএনপি থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে আ. জলিল প্রাং এর মধ্যে লড়াই হবে। বড় বিহানলী ইউনিয়নে ৪ জন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে বিএনপি থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মাহমুদুর রহমান ও আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে রেজাউল করিম রেজা এখানে নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যে লড়াই হবে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। মাড়িয়া ইউনিয়নে ৬ জন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নৌকা প্রতীক নিয়ে আসলাম আলী ধানের শীষ নিয়ে আসলাম হোসাইন স্বতন্ত্রপ্রার্থী আকবর আলী ও স্বতন্ত্রপ্রার্থী রফিকুল ইসলাম। এখানে ভোটারদের সাথে জানা গেছে, বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী রফিকুল ইসলাম ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আকবর আলীর সাথেই লড়াই হবে। এই মাড়িয়া ইউনিয়নে  এমপির ভাই রেজাউল হক স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে তিনি জামানত ফেরত পাবেন কিনা তা নিয়ে ভোটারদের মধ্যে কৌতুহল চলছে। গোবিন্দ পাড়া ইউনিয়নে ৫ জন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে আল মামুন বিএনপি থেকে ধানের শীষ নিয়ে আশরাফুল আলম স্বতন্ত্রপ্রার্থী বিজন সরকার ও বিএনপি থেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হাবিবুর রহমান। এখানে চতুরমুখী লড়াই হবে। তবে স্বতন্ত্র থেকে বিজন সরকার ও বিদ্রোহী প্রার্থী হাবিবুর রহমানের মধ্যেই হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। শ্রী পুর ইউনিয়নে ২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এরা হলেন নেীকা প্রতীক নিয়ে মকবুল হোসেন মৃধা এবং ধানের শীষ নিয়ে আকবর হোসেন মল্লিক। এখানে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মকবুল হোসেনেরই বিজয়ী হওয়ার সম্ভবনা বেশি। মূলত ধানের শীষ ও নৌকা প্রতীকের মধ্যে লড়াই হবে। আউচপাড়া ইউনিয়নে ৪ জন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এরা হলেন, আ.লীগ থেকে জান সরদার জান মোহাম্মদ, বিএনপি থেকে ডি এম শাফিকুল ইসলাম, ও আ.লীগ থেকে বিদ্রোহী প্রার্থী শহিদুল ইসলাম রয়েছেন। এদের মধ্যে নৌকা জান সরদার জান মোহাম্মদ ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ডিএম শাফিকুল ইসলামের মধ্যেই লড়াই হবে। গোয়ালকান্দী ইউনিয়নে দুজন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছন এরা হলেন, নৌকা প্রতীক নিয়ে আব্দুল সালাম এবং আ.লীগেরই বিদ্রোহী প্রার্থী আলমগীর হোসেনের মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এখানে বিএনপির কোন প্রার্থী নেই। গনিপুর ইউনিয়নের চারজন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছন এরা হলেন, নৌকা প্রতীক নিয়ে এসএম এনামুল হক, ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান ম-ল ও ঘোড়া প্রতীক নিয়ে আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ইউ আ.লীগের সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদ। এখানে ত্রিমুখী লড়াই হবে। হামিরকুৎসায় চেয়ারম্যান পদে ৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছন এরা হলেন, আ.লীগ থেকে আনোয়ার হোসেন, বিএনপি থেকে বর্তমান চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ ও জাতীয় পার্টি থেকে মোহাম্মদ আলী খামারু লাঙল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছন। এখানে ত্রিমুখী লড়াই হবে। ঝিকড়া ইউনিয়নে আ.লীগ থেকে আব্দুল হামিদ ও বিএনপি থেকে বর্তমান চেয়ারম্যান সাইদুজ্জামান ও স্বতন্ত্রপ্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা খাজা এম এ মজিদ এর মধ্যেই ত্রিমুখী লড়াই হবে। যোগীপাড়া ইউনিয়নে চারজন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছন। এখানে আ.লীগ থেকে এম এফ মাজেদুল হক, বিএনপি থেকে আরিফুল ইসলাম রণি, ও আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা কামাল এরমধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হবে। তবে এখানে বর্তমান চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের স্ত্রী মোছা. লাইলা আর্জুমান লিপি স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে আগামী ৭ মে নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হবে সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে। উপজেলা নির্বাচন অফিসের তথ্য মতে, উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের ভোটার সংখ্যা ২ লক্ষ ৪২ হাজার ৫৪০ জন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন