শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

মস্তিষ্কের সঙ্গে ‘কথা বলে’ অন্ত্র

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৮:৩৬ পিএম | আপডেট : ১২:১৯ এএম, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৮

পেটের সঙ্গে মাথার নিয়মিত যোগাযোগ হয়। বিজ্ঞানীরা আন্ত্রিক ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে মস্তিষ্কের এই যোগাযোগের প্রমাণ পেয়েছেন৷ ইঁদুরের উপর পরীক্ষা করে এই খবর জানা গেছে৷
আমাদের আন্ত্রিক ব্যাকটেরিয়ার নিয়ন্ত্রণ কতটা, গবেষকরা ধীরে ধীরে তা জানতে পারছেন৷ চিকিৎসক প্রো.মিশায়েলা আক্সট-গাডেরমান জানান, ‘আমাদের অন্ত্রের মধ্যে ১০০ ট্রিলিয়ন, অর্থাৎ ১ কোটি কোটি জীবাণু রয়েছে, শরীরে কোষের সংখ্যার তুলনায় যা ১০ গুণ বেশি৷ সেই জীবাণুর নিজস্ব চরিত্র মোটেই ভালো বা খারাপ হয় না৷ আমাদের স্বাস্থ্য ও ভালো থাকার জন্য এই জীবাণু অত্যন্ত জরুরি৷ জীবনধারা ও খাদ্যের মাধ্যমে আমরাই বরং তাদের উপর প্রভাব বিস্তার করি৷’
অন্ত্রের মধ্যে এই জীবাণু এমনকি আমাদের মস্তিষ্কের সঙ্গেও যোগাযোগ স্থাপন করে৷ মিশায়েলা আক্সট-গাডেরমান তা নিয়ে গবেষণা করছেন৷ সবার আগে ইঁদুরের উপর পরীক্ষা চালানো হয়েছে৷ কিছু ইঁদুরকে এমন খাবার দেওয়া হয়েছে, যাতে ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়া মেশানো রয়েছে৷ বাকিদের স্বাভাবিক খাবার দেওয়া হয়েছে৷ কিছুক্ষণ পর এক গোলকধাঁধার মধ্যে সব ইঁদুর ছেড়ে দিয়ে সেগুলির আচরণ পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে৷
বিস্ময়কর ঘটনা হলো, দুই দলের আচরণের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য দেখা গেছে৷ প্রো. আক্সট-গাডেরমান বলেন, ‘অত্যন্ত ভিতু প্রজাতির ইঁদুরকে নির্দিষ্ট জীবাণু, অর্থাৎ ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়া খাইয়ে দেখা গেছে, যে তাদের সাহস অনেক বেড়ে গেছে৷ অর্থাৎ আন্ত্রিক ব্যাকটেরিয়া যোগ করে ইঁদুরের আচরণের উপর প্রভাব বিস্তার করা সম্ভব৷’
জার্মানি এবং অ্যামেরিকার এক যৌথ গবেষণায় জানা গেছে, মানুষের ভয় এবং মানসিক চাপ অন্ত্র বা পেটের সমস্যায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে৷ এ সম্পর্কে জার্মান সোসাইটি ফর সাইকোসোমিক মেডিসিন অ্যান্ড মেডিক্যাল সাইকোথেরাপির পরামর্শ, ডাইরিয়া, পেটফাঁপা, বদহজম বা পেটের অন্যান্য সমস্যায় দেহমন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন৷
কিন্তু প্রশ্ন হলো, ইঁদুরের উপর পরীক্ষার ফলাফল কি মানুষের ক্ষেত্রেও খাটবে? আমরা ভিতু না সাহসি, তা কি ভালো বা খারাপ খাবারের উপর নির্ভর করে? অবশ্যই সেটা সত্য নয়৷ তবে ইঁদুর ও মানুষের অন্ত্রের গঠন ও কার্যপ্রণালীর মধ্যে অনেক মিল রয়েছে৷ এটাও ঠিক, যে আন্ত্রিক ব্যাকটেরিয়া দুই প্রাণীর ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্য, ওজন ও আচরণের উপর প্রভাব রাখে৷ সেটা কীভাবে ঘটে, নিউরোপ্যাথোলজিস্ট হিসেবে প্রোফেসর মার্কো প্রিনৎস তা নিয়ে গবেষণা করছেন৷ তিনি বলেন, ‘মস্তিষ্ক ও অন্ত্রের পরস্পরকে প্রয়োজন হয়৷ তাদের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগও থাকে৷ তবে মস্তিষ্ক যে সরাসরি অন্ত্রের কাছ থেকে সংকেত পায়, তা জেনে আমাদের অবাক লাগছে৷ মস্তিষ্ক বিচ্ছিন্ন এক প্রণালী বলেই আমরা চিরকাল জানতাম৷ আমাদের গবেষণার ফলাফল দেখিয়ে দিচ্ছে, যে অন্ত্রের সংকেত অবশ্যই মস্তিষ্কে পৌঁছয়৷’
বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করতে পেরেছেন, কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে যে ইঁদুরের অন্ত্রে কোনো জীবাণু রাখা হয় নি, তার মস্তিষ্কে গুরুতর পরিবর্তন ঘটেছে৷ অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়া না থাকায় মস্তিষ্কে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে৷ মাইক্রোগলিয়া নামের বিশেষ ধরনের কোষ হয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অথবা পুরোপুরি লোপ পেয়েছে৷ অথচ এই কোষ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ কারণ সেগুলি বাইরে থেকে জোর করে প্রবেশ করা জীবাণু ও মৃত স্নায়ুকোষ দূর করে এবং সংক্রমণের মোকাবিলা করে৷ সারা জীবন ধরে মস্তিষ্কের বিকাশের ক্ষেত্রেও সেগুলির অবদান রয়েছে৷ প্রোফেসর মার্কো প্রিনৎস বলেন, ‘যে ইঁদুরের অন্ত্রে জীবাণু নেই এবং যার মাইক্রোগলিয়া কোষ নিষ্ক্রিয় রয়েছে, তাকে যদি একটি খাঁচার মধ্যে স্বাভাবিক ইঁদুরের সঙ্গে রাখা হয়, তাদের মাইক্রোগলিয়া কি আবার সক্রিয় ও বিকশিত হয়ে উঠে পারে – সেটাই ছিল প্রশ্ন৷’
বাস্তবে দেখা গেল, খাঁচায় চার সপ্তাহ সহাবস্থানের পর তাদের অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা এবং মস্তিষ্কে মাইক্রোগলিয়া কোষের সংখ্যা সত্যি উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়ে গেছে৷ সূত্র: টাইমস নাউ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন