মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা:)-এর প্রতি যে কোন প্রকারের প্রাকশ্যে, গোপনে, আভাসে, ইউগীতে গোস্তাখী প্রদর্শন, কটাক্ষপাত, নিন্দা, সমালোচনা, কটূক্তি, অবমাননা, গালাগাল তথা সর্ব প্রকারের অমর্যাদা প্রদর্শন ও অসদাচরণ ইসলামের দৃষ্টিতে সর্বসম্মতভাবে দন্ডনীয় অমার্জনীয় অপরাধ।
অনুরূপ যে কোনো নবীর প্রতি অমর্যাদা প্রদর্শনেরও একই হুকুম। খোদ রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “মান ছাব্বা নবীয়্যান ফাকতুলুহু।” অর্থাৎ; যে কেউ, কোনো নবীকে মন্দ বলেছে তাকে হত্যা কর। যুগে যুগে এরূপ রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর গোস্তাখ কে, হত্যা করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে হত্যার দুইটি ঘটনার কথা এখানে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখযোগ্য। একটি সুলতান নুরুদ্দীন মাহমুদ-এর আমলে এবং অপরটি সুলতান গাজী সালাহউদ্দীন আইউবীর সময়ে। প্রথমটি মহানবী (সা:)-এর রওজা শরীফে অতিসংগোপনে হানা দিয়ে সাধু বেশে দুইজন তথাকথিত সাধু পরিচয় দানকারী স্পেনীয় খ্রিষ্টান মহানবী (সা:)-এর পূত পবিত্র লাশ চুরির জঘন্যতম ঘটনা হাতেনাতে ধরা খেয়ে জাহান্নামী হয় এবং অপরটি মক্কা ও মদীনা আক্রমণের ব্যর্থ ষড়যন্ত্রের নায়ক এবং হাজীদের কাফেলা লুণ্ঠনকারী ও তাদের বন্দিকারী কুখ্যাত আরএক খ্রিষ্টান কর্তৃক রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর প্রতি কটাক্ষ করার ঘটনা।
ইসলামের ওপর ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের ঘৃণ্য হামলার ধারা, সুলতান সালাহউদ্দীন আইউবীর যুগ থেকে আরম্ভ হয়। তারা একটি গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ইসলামী নিদর্শন, ঐতিহ্য মুসলিম পবিত্র ব্যক্তিত্বদের ঠাট্টা বিদ্রুপ আরম্ভ করেছিল। এসব অপকর্মের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ক্রসেড যুদ্ধগুলো শুরু হয় এবং পূর্বে অধিকাংশ যুদ্ধে মুসলমানগণ জয় লাভ করলেও ইসলাম ও রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের ধারা অব্যাহত থাকে। চরমপন্থী খ্রিষ্টানরা সময় সময় গোস্তাখী করতে থাকে এবং এর জবাবে তারা মুসলমানদের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতে থাকে।
অর্থাৎ; তারা লক্ষ্য করে মুসলমানদের ওপর উৎপীড়ন-নিপীড়নের জবাব দিতে সক্ষম, নাকি নীরবে সহ্য করে। এ সময় মুসলিম শক্তি ছিল বিভক্ত, বিছিন্ন এবং পরস্পর কোন্দল বিরোধে লিপ্ত মুসলমানদের এ অনৈক্য বিবাদের সুযোগটাকেই ইহুদি-খ্রিষ্টানরা দুর্বলতা মনে করতে থাকে। এ পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ইসলামের দুশমনদের অনুকূলে ছিল। তাই তারা মুসলিম শহর বন্দরে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করতে থাকে।
মহানবী (সা:)-এর অবমাননা, তার প্রতি অমর্যাদা প্রদর্শন, ঠাট্টা-বিদ্রুপের পাশাপাশি অকথ্য নির্যাতনের ধারাও অব্যাহত রাখে। একই সাথে ইসলাম ও মুসলমানদের খতম করার, বহুমুখী চক্রান্ত-ষড়যন্তেরও অন্ত নেই যার বিশদ বিবরণ ইসলামের ইতিহাস গ্রন্থগুলোতে রয়েছে।
সে ইতিহাস-কাহিনীর পুনরাবৃত্তি না করে আমরা কেবল মহানবী (সা:)-এর অবর্তমানে রাষ্ট্রীয়ভাবে গোস্তাখদের শায়েস্তা করা হয়েছে। তার বর্ণনা দুটি মাত্র ঘটনার ওপর সীমাবদ্ধ রাখতে চাই এবং সংক্ষেপে তার একটি সুলতান নুরুদ্দীন মাহমুদের স্বপ্নের বাস্তবায়ন এবং অপরটি গাজী সুলতান সালাহউদ্দীন আইউবীর শপথ পূরণ যার ইঙ্গিত শুরুতেই দেয়া হয়েছে। ঘটনাটির সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নরূপ :
মদীনা মোনাওয়ারায় রওজা শরীফে দূর থেকে মাটি খুঁড়ে রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর দেহ মোবারক গুম করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল দুই স্পেনীয় সাধু অপহরণকারী। সুলতান নুরুদ্দীন মাহমুদকে রাসূলুল্লাহ (সা:) স্বপ্ন যোগে এ ষড়যন্ত্রের খবর জানান। তিনি বিচলিত ও বিক্ষুব্ধ হয়ে এক বাহিনীসহ দ্রুত মদীনায় পৌঁছেন এবং ষড়যন্ত্রে লিপ্ত দুই খ্রিষ্টান সাধুকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে তাদেরকে হত্যা করে তাদের লাশ আগুনে জ্বালিয়ে দেন। বিভিন্ন ইতিহাসে এ ঘটনার পূর্ণ বিবরণ রয়েছে। তবে কোনো কোনো বর্ণনায় এ দুই নরাধমকে ইহুদি বলা হলেও বিশ্বস্ত বর্ণনানুযায়ী তারা ছিল স্পেনীয় খ্রিষ্টান, তাদের নাম জানা যায়নি। এটি ছিল হিজরী ৫৫৫ সনের ঘটনা।
গাজী সুলতান সালাহউদ্দীন আইউবীর আমলে নৌপথে মক্কা ও মদীনায় হামলা চালানোর ষড়যন্ত্র করেছিল খ্রিষ্টানরা (যা ছিল ঐতিহাসিক ‘হিত্তীন’ যুদ্ধের নেপথ্য কাহিনী)। নৌপথে মুসলমানদের চলাচল বিপজ্জনক করে তোলে, অনেককে বন্দি করে, হাজীদের কাফেলা লুট করে, অনেককে হত্যা করে। খ্রিষ্টান ক্রুসেডারদের এ আগ্রাসী তৎপরতার বিবরণও ইতিহাসে রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন