রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণগুলোর সমাধান করা মিয়ানমারের দায়িত্ব। যার মধ্যে রয়েছে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ, দেশের ভেতরে চলাফেরার স্বাধীনতা ও জীবীকা অর্জনের সুযোগসহ আনান কমিশনের প্রধান সুপারিশগুলো।
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার গত ৪ থেকে ৬ ডিসেম্বর কক্সবাজার সফর শেষে এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন। ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র মিশন থেকে এক বার্তায় এই তথ্য জানান হয়।
ওই বার্তায় বলা হয়, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার গত ৪ থেকে ৬ ডিসেম্বর কক্সবাজার সফরকালে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কয়েকটি শিবির ও স্থানীয় জনপদ পরিদর্শন করেন। বাংলাদেশে তার প্রথম এই সফরে রাষ্ট্রদূত কোনারপাড়ায় গিয়ে ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’ আশ্রয় নেওয়া অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখেন।
ওই রোহিঙ্গাদের ঠিক পেছনেই উঁচু সীমান্ত বেড়া তৈরি করা হয়েছে। রাষ্ট্রদূত মিলার উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার রোহিঙ্গা শিবিরের বেশ কয়েকটি স্থাপনা পরিদর্শন করেন। যার মধ্যে ছিল স্বাস্থ্য ক্লিনিক, খাদ্য বিতরণ কেন্দ্র, পাচার রোধ ও দুর্যোগ আশ্রয় কেন্দ্র এবং শিক্ষাকেন্দ্র। সেখানে তিনি চলমান ত্রাণ তৎপরতার জটিলতা ও বিশাল মাত্রা সম্পর্কে একটি ধারণা পান।
রাষ্ট্রদূত স¤প্রতি এসে পৌঁছানো শরণার্থীদের কাছ থেকে মর্মস্পর্শী কাহিনী শোনেন। তিনি শরণার্থী সমস্যা মোকাবেলার চলতি বিষয় ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ নিয়ে জাতিসংঘ এবং সরকারি কর্মকর্তা ও এনজিও প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেন।
কক্সবাজারের বৈঠকগুলোতে রাষ্ট্রদূত মিলার ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে আসা ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণ যে অনন্য উদারতা দেখিয়েছে তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কৃতজ্ঞতা ও প্রশংসা ব্যক্ত করেন। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংসতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার প্রতি তার জোরালো সমর্থন প্রকাশ করেন রাষ্ট্রদূত।
এ প্রসঙ্গে তিনি মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পাঁচজন জেনারেল এবং সেনাবাহিনীর দুটি ইউনিটের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কথা তুলে ধরেন। রাষ্ট্রদূত মিলার জোর দিয়ে বলেন, শরণার্থী সংকটের গোড়ার কারণগুলোর সমাধান করা মিয়ানমারের দায়িত্ব। এর মধ্যে রয়েছে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ, দেশের ভেতরে চলাফেরার স্বাধীনতা ও জীবিকা অর্জনের সুযোগসহ আনান কমিশনের প্রধান সুপারিশগুলো।
রাষ্ট্রদূত মিলার নির্ভরযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে শরণার্থীদের সম্পূর্ণ স্বেচ্ছামূলক, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বাংলাদেশের অব্যাহত অঙ্গীকারকে স্বাগত জানান।
২০১৭ সালের আগস্টে চলমান সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা শরণার্থী ও বাংলাদেশের স্থানীয় জনপদগুলোর সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৩৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার দিয়েছে। এ ছাড়া উন্নয়ন সহায়তা হিসেবে দিচ্ছে বার্ষিক ২০ কোটি ডলারের বেশি।
রাষ্ট্রদূত মিলার গত ২৯ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট মোঃ আবদুল হামিদের কাছে তার পরিচয়পত্র পেশ করেন।
তিনি বাংলাদেশকে এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অংশীদার হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ শক্তিশালী সম্পর্কের পেছনে ক্রিয়াশীল রয়েছে অভিন্ন স্বার্থ। কক্সবাজারে এই সফর হচ্ছে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে তার প্রথম সফর যা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুর গুরুত্বকেই তুলে ধরে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন