বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

মাশরাফির দিনে উজ্জ্বল মুস্তাফিজও

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ক্যারিয়ারের ২০০তম ওয়ানডেতে জ্বলে উঠলেন মাশরাফি, ব্লগ ওভারে আবারো বিধ্বংসী রুপে দেখা দিলেন মুস্তাফিজ, মিরাজ-রুবেল-সাকিবরাও করলেন নিয়ন্ত্রিত বোলিং। ক্যাচ মিসের মহড়ার মাঝেও তামিমের সুপারম্যান হয়ে যাওয়া কিংবা লিটন-মিরাজের দুর্দান্ত কিছু ক্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুইশ রানের মধ্যে বেঁধে ফেলা।
উইকেট মন্থর, খানিকটা অসমান বাউন্সও আছে। তার পরও টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে এই রানে হতাশ হওয়ার কথা ক্যারিবিয়ানদের। তবে এক পর্যায়ে ১২৭ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল তারা। সেখান থেকে শেষ পর্যন্ত দুইশর কাছে যেতে পারাও তাদের জন্য একদিক থেকে স্বস্তির। সাতে নেমে রোস্টন চেস করেছেন ৩২, আটে নেমে কিমো পল করেছেন ৩৬। সপ্তম উইকেটে এসেছে ইনিংসের একমাত্র ফিফটি জুটি। তাতেই লড়াইয়ের পুঁজি পায় সফরকারীরা।
বোলারদের পর সহজ জয় পেতে ছোট ছোট অবদান হলেই চলত চার ওপেনারের বাংলাদেেেশর। সেটিই হয়েছে। এশিয়া কাপের পর দলে ফেরা তামিম খুব একটা ভালো করতে পারেন নি। ১২ রানে ফিরলেও লিটনের সঙ্গে ৩৭ রানের জুটিতে ভালো শুরু পায় মাশরাফির দল। জিম্বাবুয়ে সিরিজে দুটি সেঞ্চুরি করা ইমরুল ফিরেছেন মাত্র ৪ রানে। এর পর লিটনের সঙ্গে ৪৭, সাকিবের সঙ্গে ৫৭, সৌম্যর সঙ্গে ২৯ রান এবং মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ২১ রানের পার্টনারশিপে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়া মুশফিকই কেবল পেয়েছেন ফিফটির দেখা। ৭০ বলে তার ৫৫ রানের ইনিংসটি ৫টি চারে সাজানো। খুব কাছে যাওয়া লিটন ফিরেছেন ৪১ রানে। সাকিব খেলেছেন ২৬ বলে ঝড়ো ৩০ রানের ইনিংস।
তবে দিনটি যে ছিল মাশরাফি বিন মুর্তজার। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে অধিনায়ক খেলতে নেমেছেন ২০০তম ওয়ানডে। এই দিনটি কি করে হারকে আলিঙ্গণ করে বাংলাদেশ! করেও নি। ১৯৬ রানের ছোট্ট লক্ষ্য ৮৯ বল আর ৫ উইকেট হাতে রেখেই পেরিয়ে যায় স্বাগতিকরা। গতকাল মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ ওয়াডে সিরিজের প্রথমটিতে বাংলাদেশ জিতেছে ৫ উইকেটে।
হোম অব ক্রিকেটে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে কখনওই ক্যারিবিয়ানদের স্বস্তিতে থাকতে দেয়নি বাংলাদেশের বোলাররা। অধিকাংশ ব্যাটসম্যানই শুরু করেও ক্রিজে থিতু হতে পারেননি। নিজের ২০০তম ওয়ানডে দারুণ বোলিংয়ে রাঙিয়েছেন মাশরাফি। তিন উইকেট নিয়ে টপ অর্ডারে সবচেয়ে বড় আঘাত হানেন ওয়ানডে অধিনায়ক। প্রথম স্পেলে টানা ৭ ওভারে দিয়েছিলেন কেবল ১৪ রান। শেষ পর্যন্ত ৩০ রানে ৩ উইকেট নিয়ে দলের সেরা বোলার টাইগার দলপতি। নিজেকে খুঁজে ফেরা মুস্তাফিজ লোয়ার অর্ডারে তিন উইকেট নিয়ে সংগ্রহটা বাড়তে দেননি। শেষ ওভারে দুটিসহ কাটার মাস্টার ৩ উইকেট নিয়েছেন ৩৫ রানে। নতুন বলে প্রথম স্পেলে ৭ ওভারে মাত্র ১৭ রান দেওয়া মিরাজ ১০ ওভারে ৩০ রানে নিয়েছেন ১ উইকেট। দেশসেরা অলরাউন্ডার সাকিব একটি উইকেট পেলেও ছিলেন মিতব্যায়ী। ১০ ওভার হাত ঘুরিয়ে দিয়েছেন ৩৬ রান। উইকেট পেয়েছেন আরেক পেসার রুবেলও। তবে তিনি ছিলেন একটু খরুচে। ১০ ওভারে দেন ৬১ রান।
সিরিজের শুরুতেই পেসারদের ওপর আস্থার কথা জানিয়েছেন অধিনায়ক মাশরাফি। টেস্ট সিরিজের বিপরীত অবস্থান নিয়ে তিন পেসার নিয়ে দল সাজিয়েছেন। কিন্তু টসে হেরে বল করতে নামার পর দেখা গেল আস্থাটা স্পিনারদের ওপরই বেশি। নতুন বলে দুই প্রান্তেই বল বুঝে নিলেন দুই স্পিনার। কাইরন পাওয়েলকে ফিরিয়ে দিয়ে সে আস্থার প্রতিদান দিলেন সাকিব। অন্য প্রান্তে রান আটকে রেখে চাপ সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছেন অবশ্য মিরাজ।
তবে মূল ভরসা যে পেসাররাই, সেটা প্রমাণ করতে এগিয়ে এসেছেন মাশরাফি নিজেই। রানের জন্য যুঝতে থাকা ব্রাভোর কষ্ট কমিয়ে দিয়েছেন ২১তম ওভারে। মাশরাফির বুদ্ধিদীপ্ত গতি পরিবর্তন ও তামিমের অবিশ্বাস্য এক ক্যাচে ক্যারিয়ারের ২০০তম ওয়ানডেতে উইকেটের দেখা পেলেন মাশরাফি। ৫১ বলে ১৯ রানের এক ইনিংস খেলে ফিরলেন জরুরি ভিত্তিতে দলে আসা ড্যারেন ব্রাভো। খানিক পরেই কাঁটা হয়ে ওঠা হোপকে ফিরিয়েছেন মাশরাফি। গতি হারানো ওয়েস্ট ইন্ডিজ এরপর আর কখনো ম্যাচে ফিরতে পারেনি। মাশরাফি-মুস্তাফিজ ও রুবেলের সঙ্গে সাকিব -মিরাজদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে রান তুলতে হাঁসফাঁস করেছে সফরকারীরা। হাতে ৪ উইকেট নিয়ে শেষ ১০ ওভারে তাই ৬৬ রান তুললেও ২০০ পার করাতে পারেননি রোস্টন চেস, কিমো পলরা। পাওয়ার হিটিংয়ের জন্য বিখ্যাত এক দলে শুধু পলই পেরেছেন এক শর বেশি স্ট্রাইক রেটে (২৮ বলে ৩৬ রান) ব্যাট করতে।
এমন বোলিং পারফরম্যান্সের পরও একটু হতাশা থাকার কথা দলের। তামিমের অসাধারণ এক ক্যাচের পাশাপাশি তিনটি ক্যাচ মিসের ঘটনাও যে ঘটেছে! ওই তিনটি ক্যাচ হাতে জমাতে পারলে হয়তো বহুদিন পর ওয়ানডেতে প্রতিপক্ষকে অলআউট করার দৃশ্য দেখতে পারত বাংলাদেশ।
সেটি না হলেও জিম্বাবুয়ে সিরিজের ধারা ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজেও বজায় থাকল। বছরের শেষটা জয় দিয়েই রাঙাতে চেয়েছিলেন মাশরাফি। তার সেই ইচ্ছা যে দলেরও সেটির প্রমাণই মিলল এই জয়ে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন