শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সাহিত্য

কবি মহসিন হোসাইনের জন্মদিন পালিত

প্রকাশের সময় : ৬ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সত্তর দশকের অন্যতম ও ব্যতিক্রমী কবি মহসিন হোসাইন ১৩৬১ সালের ২১ বৈশাখ (৪ মে) ভূমিষ্ঠ হন। এই দিনটি ছিল গত বুধবার। পারিবারিক সদস্য ও শুভাকাক্সক্ষীদের ছোট্ট আয়োজনে মহসিন হোসাইনের জন্মদিন পালিত হয়েছে। যশোর জেলার (বর্তমান নড়াইল জেলা) কালিয়া থানার ঐতিহ্যবাহী গ্রাম কলাবাড়িয়ার সন্তান তিনি। তার পিতা আবদুর রাজ্জাক মিয়া ও মাতা শাহেদা খানম। মহসিন হোসাইনের মোট কবিতা গ্রন্থের সংখ্যা ৮, ছড়ার বই ১৩, অনুবাদ কাব্য ২, সম্পাদিত কাব্যগ্রন্থ ৫। বাংলা একাডেমি তার ৪ খানি গ্রন্থ প্রকাশ করেছে। মহসিন হোসাইনের মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ৯৬। যথাশব্দ প্রয়োগ ও নির্মাণে মহসিন হোসাইন সফলকাম। জন্মদিন উপলক্ষে আমরা তার একটি কবিতা প্রকাশ করছি।
সত্তার সঙ্গীত-১
আকাশের নানা রঙের আলোও গ্রহরাজি দেখে দেখে আত্মআবিষ্কার
করা যায়। আবিষ্কার করা যায় সহজ উড়ন্ত মেঘ আর বাতাসের দ্যুতি দেখে
নিজেকে। অবশ্য তার জন্য চাই আসমানদারি
অনুভূতি। তবে আসমানদারি আর জমিদারি যদি পাশাপাশি রাখা যায়
তাতে সমস্যা বাড়বেই, যেমন আমার বাবা দু’য়ের মিশেল করে বিপদে ছিলেন সারাটি জীবন। তার কোনোটা হলো না বলে মাঝে মাঝে বিমর্ষ
থাকতেন। নিজেকে বড়ই অশালীন মনে করতেন তিনি। বাবাকে দেখেই
আমি নিমেষেই বুঝতে পারতাম তাহাকে। তবে কোনো ভাব
বিনিময় হয়নি এসব নিয়ে। দেখতাম, একমনে বাবা
সেই চল্লিশ দশকের খুব জনপ্রিয় গ্রামোফোন রেকর্ডের বিষাদের
গানগুলো একা একা গেয়ে চলেছেন শুধু কণ্ঠে, খাটিয়ার
পরে বসে। তিনি কোনো কালেও যশস্বী কণ্ঠশিল্পী ছিলেন না। বড়জোর ক্ষয়িষ্ণু বিমর্ষ সামন্তের বিলাসী বিষাদি গান গেয়ে
শেষ আর্তিটুকু রেখে যাওয়ার প্রচেষ্টা মাত্র ছিল। তবে বিলাসী একটি
মন ছিল তার সৃষ্টির আনন্দ ছিল, ছিল না নির্মাণশৈলী। আজ
ভাবি, এ খালি গলায় গান গাওয়া কী তার চিন্তার বিকার ছিল? না দুঃখ মোচনের
সহজ প্রচেষ্টা বুঝতে পারি নাই কোনোভাবে।
আমার তো
দিনে দিনে দিন হলো। কালি ঘষতে ঘষতে দিনপাত;
তাল্লপত্রে লেখা শুরু করতে পারি নাই আজো, আশ্চর্যখিমায় বসে
আছি মরুভূমির দুঃস্বপ্ন নিয়ে।
আজ একুশে বৈশাখ এই দিনে ভূমিষ্ঠ হয়েছি বলেই বাবাকে খুব ভাবছি। আর জন্মের
বিশ্রুতঠিকুজি খুঁজছি। আমি আমার বাবার মতো, তবে গলা ছেড়ে
গাইতে পারি না গান গেয়ে যাই মনে।   
আমার বাবার থেকে প্রায় কোনো কিছুই পাইনি, আভিজাত্য
স্বল্পভাষিতা, সম্পদ, ভূমির মালিকি তৎগতভাব কিংবা নিবিড় নিরন্ধে
মানুষের জন্য হাত প্রসারিত করা অনায়াসে। এসব হয়তোবা আমার গোপন নির্বেদিক মস্তিষ্কেরে পিনিয়াল
গ্লান্ডে জমা আছে। মাঝে মাঝে উস্কে ওঠে মাত্র
কিন্তু জীবন সেভাবে প্রবাহিত হয়নি আমার।

তবে একটি বিষয় বাবা রেখে গেছেন আমার জন্য। তৎগত ভাবের
সংলগ্ন সংলাপ। ঠিকানাবিহীন বেওয়ারিশ সত্তার সাথে নিরন্তর যোগাযোগ, আধো
শোনা সঙ্গীতের রেশটুকু কানে বাজে। অতনু সত্তার সঙ্গে নিরন্তর মাতামাতি
সত্তার সঙ্গীত শুনি আর আমি দিশেহারা থাকি অর্থবৃত্তহীন অসীম আনন্দে।
২১ বৈশাখ, ১৪২২ সাল
দক্ষিণগাঁও, ঢাকা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন